ঘর ছেড়ে রাজপথে তৃণমূল
১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১১ এএম
চট্টগ্রামে ব্যাপক ধরপাকড়েও আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীরা
‘আজগুবি’ অভিযোগে অর্ধশতাধিক গায়েবি মামলায় গ্রেফতার ৭০০
জয় বাংলা সেøাগানে মধ্যরাতে দলীয় কার্যালয়ে হামলা ভাঙচুর
ব্যাপক পুলিশী অভিযান আর ধরপাকড়ের মধ্যেও সরকার পতনে এক দফার আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছে চট্টগ্রাম বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। গ্রেফতার এড়াতে তারা ঘর ছাড়লেও রাজপথ ছাড়ছেন না। টানা অবরোধ, হরতালসহ সব কর্মসূচিতে রাজপথে রয়েছেন তারা। রাজপথে দেখা মাত্রই গ্রেফতার করছে পুলিশ। হামলা করে প- করে দেওয়া হচ্ছে মিছিল, সমাবেশ। দলীয় কার্যালয়, বাসা বাড়ি কোথাও সমবেত হওয়ার সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কার্যালয় বন্ধ। কার্যালয়ের সামনে পুলিশী পাহারা।
কেন্দ্রীয় এবং মহানগর ও জেলার শীর্ষ নেতাদের অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে আড়ালে চলে গেছেন। তবে হাল ছাড়ছে না তৃণমূল। মধ্যম সারির নেতাদের নেতৃত্বে চলছে রাজপথের আন্দোলন। আড়ালে থেকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মিছিল, পিকেটিং, অবরোধসহ নানা উপায়ে আন্দোলনের ময়দানে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, আগামী দিনে আন্দোলন আরো বেগবান হবে। দাবি আদায় না করার পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না।
বিগত ২৮ অক্টোবর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে বিএনপির সাত শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দলের নেতারা বলছেন, আজগুবি সব অভিযোগে গায়েবি মামলা করছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত মহানগর ও জেলায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হাজার হাজার নেতকর্মী। বিদেশে এবং কারাগারে থাকা নেতাদেরও আসামি করা হচ্ছে। হাটহাজারীর একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরের বাঁশখালীর গন্ডামারা এলাকার নেতাদের। আবার মিছিলে হামলা চালিয়ে তা প- করে দেওয়ার পর পুলিশ উল্টো তাদের উপর হামলার অভিযোগে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে।
মিছিল, সমাবেশ ও পিকেটিং থেকে গ্রেফতারের পাশাপাশি পুলিশ নেতাদের বাসা বাড়িতেও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। নেতাদের না পেয়ে তাদের স্বজনদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হয়রানি করা হচ্ছে তাদের বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী সন্তানদেরও। যদিও পুলিশের তরফে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। ঢাকার মহাসমাবেশে সহিংসতার পর থেকে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও শুরু হয় ধরপাকড়। তাতে চট্টগ্রামের অনেক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ নেতা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে।
এলাকায় আসছেন না দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ অনেকে নেতা আড়ালে রয়েছেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামসহ মহানগর ও জেলার মধ্যম সারির নেতাদের রাজপথে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। সক্রিয় আছেন যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারাও।
২৯ অক্টোবরের হরতাল থেকে শুরু করে সর্বশেষ পঞ্চম দফায় টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে রাজপথেই সক্রিয় ছিলেন নেতাকর্মীরা। গতকাল অবরোধের শেষ দিনেও নগরী ও জেলার প্রায় ৩০টি এলাকায় ঝটিকা মিছিল, পিকেটিং, রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করা হয়। এক তরফা তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। বুধবার রাতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মশাল মিছিল, সমাবেশ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেলের নেতৃত্বে প্রর্তক মোড় ও ২ নং গেইট এলাকায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। অবরোধের সমর্থনে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড়ে ডবলমুরিং থানা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল ও মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিবুল হক বাপ্পীর নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দেওয়ান হাট রেল লাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পাহাড়তলী, খুলশী ও আকবর শাহ থানা যুবদলের নেতাকর্মীরা ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে। মহাসড়কের ফৌজদারহাট ও বাংলাবাজার এলাকায় মিছিল ও অবরোধ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপি যুবদল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে বন্দর এলাকায় মিছিল, চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মুরাদপুর ষোলশহর এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল, খুলশী থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মিল্টনের নেতৃত্বে কদমতলী এলাকায় খুলশী থানা যুবদলের মিছিল ও পিকেটিং হয়।
জেলার চন্দনাইশ বরকল ব্রিজ এলাকায় তাৎক্ষণিক মশাল মিছিল বের করে চন্দনাইশ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। বুধবার রাতে বকশির হাট ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিএনপি নেতা দিদারুল ইসলাম দিদারকে বাকলিয়া থানা ও চান্দগাঁও ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হাকিমকে গ্রেফতার করেছে চাঁন্দগাও থানা পুলিশ। বুধবার রাতে নগরীর দামপাড়ায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। তার আগে নগরীর বাদুরতলায় টিসিবির পণ্যবাহী একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
নাসিমন ভবনে হামলা : মধ্যরাতে বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি এ হামলার জন্য সংসদ সদস্য আওয়ামী যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারী যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শ’খানেক লোক মিছিল নিয়ে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনের সামনে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জয় বাংলা সেøাগান দিয়ে মিছিলকারীরা নাসিমন ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। নাসিমন ভবনের প্রধান ফটকের সামনে থাকা কয়েকটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এরপর ভেতরে ঢুকে মাঠ পার হয়ে তারা কার্যালয়ের দ্বিতীয় গেইটের সামনে যান। সেখানে থাকা কয়েকটি ব্যানারও তারা ছিঁড়ে ফেলেন। পুলিশ আগেভাগেই নাসিমন ভবনের দ্বিতীয় ফটকের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ জন্য মিছিলকারীরা ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পরে পুলিশ তাদের বের করে দিলে তারা মিছিল নিয়ে লালখান বাজারের দিকে চলে যান। নগর বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয় থেকে বের হয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপি অফিসে হামলা করেছে। এসময় সেখানে পুলিশ থাকলেও তারা ছিলেন নিরব দর্শক। দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম। এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তির শত উস্কানীর মুখেও বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে একদফার আন্দোলনের কর্মসূচী পালন করে আসছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের চিরকালের গায়ে পড়ে ঝগড়া বাঁধানোর স্বভাব এখনো বদলায়নি। বিনা কারণে আওয়ামী লীগের একদল সন্ত্রাসী সশস্ত্র অবস্থায় লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে মিছিল করে নাসিমন ভবনে এসে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা শান্তি প্রিয় চট্টগ্রামকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে। তারা বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই বিএনপিকে দমন করতে আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে ওঠেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের গায়েবী মামলা দিয়ে গ্রেফতারের খেলায় মেতে উঠেছে সরকার। তারা বিএনপি কার্যালয়ে হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির দাবি জানান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর
ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬
জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি
দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেলের সাথে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স আজমানের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা নিশ্চিতে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি কার্ড
যে কারণে হারপিকে মেতেছে নেটিজেনরা
আ.লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি: তারেক রহমান
প্যারাগুয়ে ম্যাচে কেমন হবে আর্জেন্টিনার একাদশ
অর্থাভাবে ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া দিয়েছেন শন ডিডি, বিক্রি করবেন বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রেনী কক্ষে অসুস্থ ১০ শিক্ষার্থী
ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নরসিংদীতে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
পুলিশ সংস্কার ও একটি কৌশলপত্র
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কেন উপদেষ্টা করতে হবে?
শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি এই অবহেলা অমার্জনীয়
নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ
ধামরাইয়ে দুই ইটভাটাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, ব্যাটারি কারখানার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন