ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
একদিনে ‘ক্ষমতার হালুয়া-রুটি’ অন্যদিকে ‘জনগণের ভোটের অধিকার’

কোনটা বেছে নেবে জাপা?

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২৭ এএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২৭ এএম

অগ্নি পরীক্ষায় জাতীয় পার্টির নেতারা। একদিকে ক্ষমতার টসটসে হলুদ পাকা কলা; ভারতের বদৌলতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের মতো পাতানো নির্বাচনে সফল হলে সরাসরি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়ে পাকা কলা খাওয়া। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল, এমপি, মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার হালুয়া-রুটি আহা! কি সুন্দর!! তবে মাথার ওপর ঝুলবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ভয়। অন্যদিকে আবার যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির আন্দোলন সফল তাহলে একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে দালালির রাজনীতি করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ায় আওয়ামী লীগকে সহায়তা করার অপরাধে কারাগার ও বিচারের মুখোমুখি! কোনটা বেছে নেমে জাতীয় পার্টি? দলটির সুবিধাবাদী নেতা ও বর্তমান সংসদের এমপিরা ক্ষমতার হালুয়া-রুটির লোভ সংবরণ করতে পারছেন না। তাই তারা সংসদের শেষ অধিবেশনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ‘তাদের মাথার ওপর ছাতা’ রাখার আবদার করেছেন। অন্যদিকে রওশন এরশাদও চান পাতানো নির্বাচনে অংশ নিতে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের নেতারা ১০ বছর কিছুই পাননি। বরং দল দালাল তকমা পেয়েছে। তাই তারা চান জনগণের ভোটের অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠা করা হোক। সে জন্য তারা বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে যুগপথ আন্দোলনের শরীক হয়ে পাতানো নির্বাচন বর্জন করার পক্ষ্যে মত দিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রী-এমপি হওয়ার লোভ বেশির ভাগ সিনিয়র নেতা সামলাতে পারছেন না। কারণ ২০১৪ সালে ভেল্কিবাজি দিয়ে পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে যে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগ পেয়েছেন সেই লোভ সামলানো তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে অথচ জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) এখনো পাতানো নির্বাচনে যাবেন নাকি ভোটের অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। গত মঙ্গলবার দলটির নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে অংশ নেয়া নেতাদের প্রায় সবাই বর্তমান অবস্থায় পাতানো নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে। এমন অবস্থায় দলীয় কিছু এমপি নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নানান যুক্তি তুলে ধরছেন। তারা ২০১৪ সালের মতোই কৌশলে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে মত দিচ্ছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, রওশন এরশাদকে কেন্দ্র করে বেশির ভাগ এমপি নির্বাচনে যেতে চান বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তাদের ইচ্ছা দলীয় স্বার্থে নয়। তারা আবার এমপি হতে চান কারণ তারা এতদিন সরকারি সুবিধা নিয়েছেন। সামনেও নিতে চান। তারা ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা পেলে এতদিনে দলের কোনো লাভ হয়নি। উল্টো দলের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। এমন অবস্থায় দলের চেয়ারম্যান দলের বিষয় চিন্তা করেই ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তারা মনে করছেন। তবে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, যে সিনিয়র নেতা এবং এমপিরা নির্বাচনে যাওয়ার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছেন; ভিতরে ভিতরে তারা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। তবে তাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে পাতানো নির্বাচনে তাদের এমপি নিশ্চিত করতে হবে। এই নেতারা শেষ পর্যন্ত দল নির্বাচনে যাবে সে আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন। তবে কোনোভাবে যদি দল নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এরা ভিন্ন পন্থায় ভোটে যাবেন এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এদের অবস্থান ‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার এমপি হওয়া চাই’। রওশন এরশাদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার অনুসারী কিছু নেতা নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রওশন এরশাদ দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই, তিনি উপদেষ্টা। তার পক্ষে যারা বলছেন, তারাও হয় বহিষ্কৃৃত না হয় দলের কোনো দায়িত্বে নেই। দলীয় মনোনয়ন দেবেন পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এর বাইরে জাতীয় পার্টি বলতে কিছু নেই।
জানা গেছে, ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউটের দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় ৫৯ জন নেতা বক্তব্য দেন। তাদের ২ ছাড়া বাকি সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার কথা বললেও অন্যান্যরা বর্তমান অবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন। তাদের বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে এ সরকার কোনো ভাবেই নির্বাচন করতে পারবে না। বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের নেতাদের অবশ্য উভয়মুখি চাপের কথা তুলে ধরেন। তার মেয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় থাকেন। জিএম কাদের জানান, বর্তমান অবস্থায় নির্বাচনে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ওইদিন তিনি প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জিএম কাদেরের বঙ্গভবনে যাওয়া নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে জাতীয় পার্টি নানা কারণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে আন্দোলনের মাঠ থেকে ডিগবাজি দিয়ে পাতানো নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর থেকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কার্যত গণবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়। যে রংপুরকে এরশাদের লাঙ্গলের ঘাটি বলা হতো সেখানে বিগত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি। সাধারণ মানুষ দলটিকে আওয়ামী লীগের বি-টীম হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রংপুরে এক সময় বিএনপির জনসমর্থন তেমন ছিল না। অথব গত বছর বিভাগীয় সম্মেলনে হাজার হাজার মানুষ দুদিন আগে অর্ধশত মাইল, শত মাইল পথ পায়ে হেঁটে সমাবেশে শরীক হয়েছেন। সমাবেশের আগের দিন এসে রাত কাটিয়েছেন মাঠে। বৃহত্তর রংপুরে দলটির শতকরা ৫০ শতাংসের উপরে ভোট থাকলেও বর্তমানে তা ১০ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। গত ১০ বছরের কর্মকা-ের কারণে দলটির এমন অবস্থা হয়েছে যে এককভাবে নির্বাচন করলে দলটির দু’এক আসন পাওয়াও কঠিন হয়ে যাবে। সে কারণে জোটে থেকে কয়েকটি আসন পাওয়া সম্ভব।
জানা গেছে, যদিও সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মাঠের নেতারা চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন; তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে যাবে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আয়োজন করা হবে। এ বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে। তার আগে দলের নেতাদের কাছ থেকে আলাদাভাবে মতামত নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে দলটি ক্ষমতার অংশিদার এবং বিরোধী দলে থাকলেও সাধারণ নেতারা কোনো মর্যাদা পাননি। তৃণমূল নেতারা নির্বাচন বিরোধী, কারণ তারা যোগ্য সম্মানটুকু পাচ্ছেন না। বছরের পর বছর ধরে অনেকেই হয়রানির শিকারও হয়েছেন। ফলে তারা আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার সিঁড়ি না হতে দলকে চাপ দিচ্ছেন। যদিও দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব গত এক বছরে অনেকবার বলেছেন, জাতীয় পার্টি কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদকে বলা হতো ‘আনপ্রেডিক্টেবল ম্যান’। তার দলের বর্তমানে যারা নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও ‘শেষ কথা’ বলে কিছু নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে মেনন-ইনুর দলসহ কয়েকটি দল। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে হরতাল-অবরোধ করছে। জামায়াত হরতাল-অবরোধ করছে। সিপিবি-জাসদ-বাসদ, ইসলামী আন্দোলনসহ ডান-বাম-মধ্যপন্থী অর্ধশতাধিক দল রাজপথে আন্দোলন করছে। একমাত্র জাতীয় পার্টির অবস্থান এখনো পরিস্কার করা হয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন ইস্যুতে কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকদিন। ##

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঝিনাইদহে ৮ মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী

ঝিনাইদহে ৮ মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী

পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ

পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ

গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা নিয়ে অভিনেত্রী মেহজাবীনের পোস্ট

গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা নিয়ে অভিনেত্রী মেহজাবীনের পোস্ট

গোয়ালন্দে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

গোয়ালন্দে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

হবিগঞ্জে ৫ সাংবাদিক নাশকতার মামলায় আসামি

হবিগঞ্জে ৫ সাংবাদিক নাশকতার মামলায় আসামি

ঢাবিতে বর্বরোচিত গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের জানাজা শেষে পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন

ঢাবিতে বর্বরোচিত গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের জানাজা শেষে পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন

তারাকান্দায় প্রাইভেটকার ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত-২

তারাকান্দায় প্রাইভেটকার ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত-২

রাঙামাটিতে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি

রাঙামাটিতে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকড

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকড

দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১

দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ পেলেন ড. এস এম হাসান তালুকদার

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ পেলেন ড. এস এম হাসান তালুকদার

৮ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

৮ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

২০ কোটি সহায়তা দিয়ে এখনও বিএনপির ত্রাণ তহবিলে ৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে : ডা. জাহিদ

২০ কোটি সহায়তা দিয়ে এখনও বিএনপির ত্রাণ তহবিলে ৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে : ডা. জাহিদ

বায়তুল মোকাররমে তুমুল হট্টোগোল-মারামারি (ভিডিওসহ)

বায়তুল মোকাররমে তুমুল হট্টোগোল-মারামারি (ভিডিওসহ)

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার

বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার

বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার

কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২

কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২

পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করে পালিয়ে গেলেন আওয়ামী খতিব

বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করে পালিয়ে গেলেন আওয়ামী খতিব