ঢাকার ফুটপাতে বাহারি পিঠা
১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম
অগ্রহায়ণ মাসের ৪ তারিখ আজ। গ্রামের পাশাপাশি এখনোই রাজধানী ঢাকা শহরে চলে এসেছে শীত। সকালে দিব্যি পাওয়া যাচ্ছে শীতের আমেজ। রাজধানী টালমাটাল। একদিকে নির্বাচনী হাওয়া অন্যদিকে জনগণের ভোটের অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হরতাল-অবরোধ। এরমধ্যেই রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার ফুটপাতগুলো সেজে উঠেছে বাহারি পিঠার সাজে। সকালে এবং সন্ধ্যা হলেই হরেক রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসে পড়ছেন দোকানিরা। পুরোপুরি শীত আসার আগই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পিঠা খেতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানগুলোতে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, গরম গরম ভাপা পিঠা নামছে মাটির চুলা থেকে। ক্রেতারা সারিবদ্ধ হয়ে পিঠা কিনছেন। কেউ নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। কোনো চুলায় ভাপাপিঠা, কোনোটিতে চিতই, কোনোটিতে ডিম বা অন্য কোনো পিঠা। বেলা যতই পশ্চিমে গড়াচ্ছে এসব পিঠাপুলির দোকানগুলোতে ততই ভিড় বাড়ছে। দোকানগুলোয় পিঠার পাশাপাশি থাকছে হরেক রকম ভর্তা।
রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল, টিকাটুলি, আরামবাগ এলাকার কয়েকজন পিঠা দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এতোদিন ফুটপাতে অন্য পণ্য বিক্রি করতেন। রাজনীতির ডামাডোলে সেসব বন্ধ। তাই সামনে শীত আসছে চিন্তা করে পিঠার দোকান দিয়েছেন। শনির আখড়ায় ব্রীজের আশপাশে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা কয়েকটি দোকানের কর্মচারীরা জানান, প্রতিদিন বিকাল থেকেই পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে। সড়কের পাশে সন্ধ্যা হলেই বেড়ে যায় ক্রেতা সমাগম, যা মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে। রসুন-মরিচবাটা, ধনিয়াপাতা বাটা, শুঁটকি, কালোজিরা, সর্ষে ভর্তাসহ নানা রকম উপকরণ মিলিয়ে বিক্রি করা হয় চিতই পিঠা। দোকানিরা জানান, বিক্রির মধ্যে ভাপা আর চিতই পিঠার কদর বেশি। প্রতিটি বিক্রি হয় পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে। এছাড়া অভিজাত এলাকায় গড়ে ওঠা পিঠার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পুলি, ভাপা, তেলের পিঠা, পাটিসাপটাসহ হরেক রকম আইটেম। যাত্রাবাড়ির আবু উল্লা নামের একজন দোকানী জানান, ফুটপাতে যারা দঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই নির্বাচন, রাজনীতি, অবরোধ-হরতাল নিয়ে কথা বার্তা বলেন। রিক্স্রওয়ালাদের বেশির ভাগই পিঠা খান আর বিএনপির অবরোধ নিয়ে কথাবার্তা বলেন। হঠাৎ পিঠার দোকান শুরু করলেন কেন? প্রশ্ন শুনে আবু উল্লা বলেন, হরতাল-অবরোধে অন্য দোকান করলে কখনো পুলিশ তুলে দেয়; আবার কখনো অন্যরা তুলে দেয়। পিঠার দোকান তুলে দেয় নি। সেই কারণে বুদ্ধি করে পিঠার দোকান ধরেছি।
টিকাটুলির অভিসার সিনেমা হল কয়েক বছর ধরে বন্ধ। সিনেমা হলটি প্রচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ফুটপাতে এক তরুণ সারাবছর ধরে চিতই পিঠা বিক্রি করেন। গত কয়েকদিন ধরে চিতইয়ের পাশাপাশি ভাপা পিঠাও বিক্রি করছেন। বললেন, শীত আসি আসি করছে। আগের চেয়ে এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে। কারা পিঠা কেনেন? প্রশ্ব করতেই বললেন, রিক্সাওয়ালা বেশি কেনেন। এ ছাড়াও আশপাশের দোকানদার, অফিসের মানুষ এবং আশপাশের বাসাবাড়ি থেকেও পিঠা কিনে নিয়ে যান।
কাঁটাবন কনকর্ড টাওয়ারের সামনে ভ্যান ভর্তি করে হরেক রকমের পিঠা সাজিয়ে বসেন মোহাম্মাদ মনসুর। ফুটপাতে বেশিরভাগ দোকানগুলো চিতই আর ভাপা পিঠা বিক্রি করলেও তিনি বিক্রি করেন নানান ধরনের মিষ্টি পিঠা। তার ভ্যানটিকে দেখলে প্রথমে মনে হবে বুঝি কোনো পিঠার মেলা। আলাদা আলাদা ঝুড়িতে সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো পিঠাগুলো ঢেকে রেখেছেন পলিথিন দিয়ে। নিজের হাতে পিলিথিনের দস্তানা পড়ে তবেই এসব পিঠা বিক্রি করেন তিনি। পিঠার নামগুলোও বাহারি। পাটিসাপটা, বালুসা, নকশা, খাজা, শাপলা, মালপোয়া, পাকন, পুলি, পোয়াসহ মোট ১২ ধরনের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা বললেন, সব জায়গাতে চিতই আর ভাপা, তিনি তাই এসব মিষ্টি পিঠার দিকে ঝুঁকেছেন। সন্ধ্যার মুখে ক্রেতার ভীড় ক্রমশ বাড়তে থাকে জানিয়ে বললেন, বর্তমানে ফুটপাতে পিঠার দোকান নিরাপদ। দৈনিক কত পিঠা বিক্রি করেন জানতে চাইলে বললেন, ঠিক নাই, দৈনিক ৩৫০ থেকে ৪০০ পিঠা বিক্রি হয়। মানুষজন খুব ভালো পছন্দ করে। কেউ এক-দুইটা খায়, কেউ বাড়িতে নিয়ে যায়। খবর শেষে ৬শ থেকে এক হাজার টাকা লাভ থাকে।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি হলো নিলক্ষেত এলাকা। এ জায়গাকেই তাই পিঠা বিক্রির স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি নোয়াখালী অঞ্চলে। ১৪ বছর যাবত ঢাকার ফুটপাতে নানান রকম ব্যবসা করে আসছেন তিনি। অন্য সময়ে যে কাজই করেন না কেন, শীত আসলেই তিনি বনে যান পিঠা বিক্রেতা। নিজের ছেলেকে সাথে নিয়ে হরেক রকম পিঠা বিক্রি করেন তিনি। একপাশে গ্যাসের চুলায় ছোট ছোট ৬টি কড়াই; তৈরি হচ্ছে চিতই। অন্যপাশে শফিকুল একে একে বানিয়ে চলেছেন ভাপা পিঠা। সামনে রাখা কাচের বাক্সে সাজানো রয়েছে কুসুম কুলি, পাটিসাপটা, মাল পোয়া ও কুলি পিঠা। গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠাগুলো রাখা হচ্ছে আলাদা পাত্রে। ব্যস্ততম এলাকা হওয়ার গরম পিঠাগুলো বেশিক্ষণ পড়ে থাকছে না ঝুড়িতে। চুলা থেকে উঠানোর সাথে সাথেই তা চলে যাচ্ছে খদ্দেরের প্লেটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, নিউমার্কেট, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় পিঠার দোকান রয়েছে অসংখ্য। মানুষের আনাগোনা বেশি হওয়ায় দোকানগুলোতে বিকিকিনিও বেশি। বিকেলের দিকে শুরু হয়ে অনেক রাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। বৃদ্ধ আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রীর দোকানটি এলিফ্যান্ট রোডের জাহানারা ইমাম সরণীতে। একপাশে বসে স্ত্রী বানাচ্ছেন পিঠা, স্বামী বসে বিক্রি করেছেন সেগুলো। আনোয়ার জানালেন, বেচাকেনা আপাতত ভালোই। শীত যত বেশি পড়বে, পিঠা বেচাও বাড়বে। এখনও তো ভালোই গরম। তাও বানাইয়া সারতে পারি না। মালিবাগ এলাকার এক পিঠা বিক্রেতা বলেন, বছরের এই সময়টা শীতকালীন পিঠার বিক্রি বেশি হয়। বর্তমানে চিতই, ভাপা, বরাপিঠা, পাটিসাপটাসহ পাঁচ থেকে সাত ধরনের পিঠা তৈরি করছেন। আর চিতই ও ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য থাকছে নারকেল গুড়সহ বাহারি পদের ভর্তা। লাভও ভালো। সেখানে গরম চিতই পিঠার জন্য অপেক্ষমান মো. রায়হানুল হক নামে এক তরুণ জানান, শীতে চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়ার যে ছবি আমাদের চোখে ভেসে ওঠে, নগর জীবনে তার দেখা মিলবে কই। এরা আছে বলে একটু পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়।
সরেজমিন ঘুরে এবং পিঠা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুটপাতে বাহারি পিঠা থাকলেও সবচেয়ে বেশি কদর চিতই পিঠার। দাম কম এবং হরেক রকমের ভর্তা আয়োজন থাকে বলেই এ পিঠার দিকে ঝোঁক সকলের। ধনেপাতা, চিংড়ি, শুটকি, বাদাম, কালোজিরা ভর্তার দেখা মেলে প্রায় সব দোকানে। ভর্তার সংখ্যা নিয়ে দোকানিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে বলে জানালেন এক বিক্রতা। শুধু পিঠা নয়, ক্রেতারা যে ভর্তার টানেও আসেন, একথাও স্বীকার করলেন তিনি। তবে ঝাল পিঠার পাশাপাশি মিষ্টি পিঠাগুলোর সংখ্যাও বেড়েছে আগের তুলনায়। যাত্রাবাড়ির বর্ণমালা হাইস্কুলের সামনের পিঠা বিক্রতা গনির বাপ জানালেন, তার দোকানে সবচেয়ে বেশি চলছে পাটিসাপটা আর মালপোয়া। বললেন, যার যেটা ভালো লাগে, সেটাই খায়। এমনও কাস্টমার আছে সবগুলো একপিস একপিস নেয়। টেস্ট কইরা দেখে। তবে শীতে চিতই আর ভাপা পিঠার কাস্টমার বেশি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ
ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা
অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী
রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ
কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক
বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের
৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু
৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান
সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা