ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশে একটি ভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার সময় হয়েছে

Daily Inqilab জন ড্যানিলোভিজ

১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে সম্প্রতি বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ মার্কিন পররাষ্ট্র কর্মকর্তা জন ড্যানিলোভিজ। কর্মজীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং চ্যালেঞ্জিং কূটনৈতিক কিছু পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। জন বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ সুদানে মার্কিন দূতাবাসে ডেপুটি চিফ অফ মিশন এবং পাকিস্তানের মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেলের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সাউথ এশিয়া পার্সপেক্টিভ-এ শুক্রবার প্রকাশিত জন ড্যানিলোভিজ-এর লেখাটি তুলে ধরা হল।

গত এক বছরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রচারের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট কূটনৈতিক শক্তি বিনিয়োগ করেছে। যদিও মে মাসে ঘোষিত ভিসা নীতিটি সর্বাধিক মনোযোগ আর্কষণ করেছে, এটি মার্কিন কূটনৈতিক উদ্যোগে বাংলাদেশী সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের অন্যান্য উপাদানগুলির সাথে জড়িত থাকার একটি উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বার্ষিক কাঠামোগত অংশীদারিত্ব সংলাপ এবং উচ্চ-স্তরের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্মেলনের সময় ওয়াশিংটন এবং ঢাকা উভয় স্থানেই যুক্তরাষ্ট্র জড়িত হয়েছে এবং এতে বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের যুক্ত করেছে। এসময়, মার্কিন কর্মকর্তারা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্র এবং যৌথ প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন। পুরোটা সময়ে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়েছে যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো সম্প্রসারিত করবে এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণে দেশটির জন্য আরো বিশেষ স্থান অর্জনের পথ তৈরি করতে সাহায্য করবে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র মে মাসের নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে সীমিত সংখ্যক ভিসা বাতিল করেছে, কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ধাক্কা দেওয়ার কৌশলটিতে তিরস্কারের পরিবর্তে পুরস্কারের পাল্লা বেশি ভারি ছিল। এটা এখন স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবং তার সরকারকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি তৈরি করতে প্ররোচিত করার মার্কিন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অক্টোবরের শেষের দিকে ঢাকার রাস্তায় রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হওয়ায় অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদাররা মূলত পাশ কাটানোর পথ বেছে নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে, হাজার হাজার বিরোধী নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং ক্ষমতাসীন দল আরেকটি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে। এর প্রচেষ্টার সাফল্য নির্ভর করবে বাংলাদেশি ভোটাররা নির্বাচনে কতটা অংশ নেবে এবং ফলাফলগুলোকে কতটা বৈধ হিসাবে দেখা হবে তার ওপর।

বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের অতীত প্রচেষ্টার ফলাফল ২০১৪ (সফল হয়েছে), ১৯৯৬ (ব্যর্থ), এবং ১৯৮৮ (আংশিকভাবে সফল)। এক্ষেত্রে ২০২৪ সালের নির্বাচন কেমন হবে তা দেখার বিষয়। সংলাপ এবং সমঝোতায় বসানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ বিনিয়োগ করার পর এখন যুক্তরাষ্ট্রের সময় এসেছে বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করার এবং শাসক দলের সাথে মোকাবিলা করার জন্য একটি ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করার।

মার্কিন দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত হাস এবং তার দল যথেষ্ট চাপের মধ্যে গত এক বছরে অসাধারণ কাজ করেছে এবং উচ্চাভিলাষী নীতিগুলোর লক্ষ্য অর্জনের ব্যর্থতা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করার সময় মার্কিন কর্মকর্তাদের (কংগ্রেসের সাথে পরামর্শক্রমে) উচিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উন্নয়নগুলোকে প্রভাবিত করার জন্য তাদের সম্ভাব্য সব বিকল্প পরখ করা এবং এটি স্পষ্ট করে দেয়া যে, স্বৈরাচারী পথ অবলম্বন করার প্রকৃত মাসুল রয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন উন্নয়ন সহায়তা সংস্থানগুলো পুনর্নির্দেশিত করা অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যেগুলো দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মতো বিশেষায়িত বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সমর্থন করে মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার প্রচেষ্টাগুলোকেও স্থগিত রাখা উচিত, যতক্ষণ এসব সংস্থা ভিন্নমতকে দমন করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে চলেছে। উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা, যেমন বার্ষিক অংশীদারিত্ব সংলাপ এবং সামরিক ও অর্থনৈতিক আলোচনার লক্ষ্যে সহায়ক প্রচেষ্টায় বিরতি দেওয়া উচিত। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে তার ভোটের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিশ্চিত করা যে, এসব প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশে ক্ষতিকর আচরণের প্রতিদান দেবে না।

পরিশেষে, বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার হুমকির মুখে পড়তে থাকায় মার্কিন প্রশাসন এবং কংগ্রেসের উচিত তৈরি পোশাক আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা সম্ভব কিনা, তা নির্ধারণ করতে বাণিজ্য নীতির দিকে ঘনিষ্ঠভাবে দৃষ্টি দেয়া। একই সময়ে, ওয়াশিংটনের উচিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের সমর্থন করার উপায়গুলো সন্ধান করা, যারা সরকারের বর্ধিত চাপের সম্মুখীন।

এটা হতে পারে যে, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের জন্য চাপ দেওয়ার সময় ‘যথাযথভাবে ব্যবসা করার’ নীতি শাসক দল ও সব পক্ষের পর্যবেক্ষকদের কাছে মিশ্র বার্তা পাঠিয়েছে। বর্তমান পরিবেশে এটা ভাবা বাস্তবসম্মত নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন ত্যাগ করবে এবং ভারত, চীন ও রাশিয়ার কাতারে দাঁড়াবে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যৌক্তিক বিকল্প হল, তার প্রচেষ্টাকে পুনরুদ্ধার করা এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে তার নেতৃত্ব অনুসরণ করতে রাজি করানো।

বাংলাদেশে যখন গণতন্ত্র ফিরে আসবে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত দেশটির সাফল্যে পুনর্বিনিয়োগ করার কথা বিবেচনা করা। ততক্ষণ পর্যন্ত মন্দের প্রতি ভালোর জন্য অর্থ অপচয় বন্ধ করার এবং এমন ভাব প্রকাশ করার সময় এসেছে যে, শুধুমাত্র অন্তর্ভুক্তিই কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন করবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ

দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ

ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা

ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা

অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী

অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী

রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল

রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ

কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক

কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক

বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার

বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার

প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো

প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন

শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান

শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে

অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের

অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের

৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত

বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত

ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু

ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু

৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান

৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান

সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন

সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন

দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত

দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত

নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা

নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা