ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
৪ লাখ হেক্টর জমির পাকা আমন ধান এখন পানিতে নিমজ্জিত প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির শাক-সবজি, ডাল, সরিষা এসব জাতের ফসলের ক্ষতি :: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হেক্টর জমির ধান

মিধিলিতে কৃষকের সর্বনাশ

Daily Inqilab ইনকিলাব রিপোর্ট

১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম

অগ্রহায়ণের শুরু। মাঠে মাঠে দোলছে সোনালি ধান। ক’দিনের মধ্যেই গ্রামে গ্রামে আমন ধান কাটার ধুম পড়বে। নব্বান্নের উৎসবে মেতে উঠবে গ্রামবাসী। তবে কৃষকের দু’চোখ ভরা সেই স্বপ্ন এখন পানিতে নিমজ্জিত। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। পাকা ধান, সবজি খেত সব নষ্ট হয়ে কৃষকের সর্বনাশ হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ৪ লাখ হেক্টর জমির পাকা আমন ধান এখন পানির নিচে। এ ছাড়া প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির শাক-সবজি, ডাল, সরিষা এসব জাতের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। একই সাথে বিপুল পরিমাণ পুকুর ,দিঘি ও ঘেরের লক্ষ লক্ষ মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। চলতি বছর সারাদেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চার লাখ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হলে উৎপাদন লক্ষমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। আর এতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমির ধান বাতাসে হেলে পড়েছে। এসব জমির ধান পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে সেটা এখনো বলা ঠিক হবে না বলেও তারা দাবি করছে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল সে অনুযায়ী তা শক্তিশালী ছিল না। তবে এর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টি হয়েছে। উপকূলীয় বিভিন্ন জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি-ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে ঝড়ো বা দমকা হাওয়া ছিল। এতে বেশ কিছু জেলায় পাকা আমন ধান জমিতে হেলে পড়েছে। আমাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমির ধান হেলে পড়েছে। এটা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত তা বলা যাবে না। এ ছাড়া ডাল, সরিষা এবং শীতকালীন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে এসব ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব পাওয়া যাবে।

ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকাসমূহে ভারী থেকে অতি-ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় চাঁদপুরে ২১৯ মিলিমিটার। তাছাড়া দক্ষিণের জেলা ভোলায় ১৯০, বরিশালে ১৮৫, পটুয়াখালীতে ১৪৮, কুমিল্লায় ১১২, হাতিয়ায় ১০৫, নোয়াখালীতে ৯৬, ফেনীতে ৯৯, শ্রীমঙ্গলে ১০৪, সিলেটে ৭১, ঢাকায় ৩০, চট্টগ্রামে ৩৭, খুলনায় ৩৮, মোংলায় ৬৮ মিলিমিটারসহ অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় পাকা আমন ধান জমিতে হেলে পড়েছে এবং জমে থাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে পটুয়াখালীতে আমন ফসলের ৭৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলার ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর রোপা আমন ফসল ঘূর্ণিবাতাসের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া খেসারিসহ মাঠে থাকা সবজিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফেনীর প্রতিটি উপজেলায় কয়েক হাজার হেক্টর পাকা আমন ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে। ঝড়ের কারণে শীতকালীন সবজির ও রবি শস্যের ক্ষতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে শীতকালীন সবজিসহ নানা জাতের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বরগুনায় বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি ও খেসারির ক্ষতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বাগেরহাটের কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় খেতের ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের আমন খেত ও শীতের সবজি খেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মিধিলি’র আঘাতে সারাদেশে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট নিচে তুলে ধরা হলো।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র বয়ে আনা হেমন্তের প্রবল বর্ষণের সাথে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার বেগের ঝড়ে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ২ লাখ হেক্টর জমির পাকা-আধাপাকা আমন ধান ছাড়াও আগাম শীতকালীন সবজি, গম, খেসারি ডাল, পানসহ বিভিন্ন ফসল এখনো পানিতে ভাসছে। একই সাথে বিপুল পরিমাণ পুকুর, দিঘি ও ঘেরের লক্ষ লক্ষ মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এখনো সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ট্রলারের ৭০ জেলে নিখোঁজ। হাজার মৎস্য চাষি ও কৃষকের এখন মাথায় হাত। অন্তত ১০ সহশ্রাধিক হেক্টরের আগাম শীতকালীন সবজি প্রায় পুরোটাই বিনষ্টের পথে। একইসাথে চলতি রবি মৌসুমে যে ৬৫ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায়, তার আবাদও আরো পিছিয়ে গেল। গত ২৪ অক্টোবর আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’এর প্রভাবে মাঝারি বর্ষণে আমনের কোনো ক্ষতি না হলেও আগাম সবজি আবাদ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার মিধিলি’তে ভর করে ৭৫ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বর্ষণে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের পুরো ফসলি জমিই প্লাবিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএইর মতে, এবার দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আমনের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ২৩ লাখ টন। কিন্তু ভাটির এলাকা বিধায় বিলম্বিত আবাদের কারণে এ পর্যন্ত গড় ফসল কর্তনের হার মাত্র ১৫ শতাংশ এর মতো। ফলে প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমির আমন এখনো মাঠে। এর মধ্যে দেড় লাখ হেক্টরের আমন মিধিলি’র বর্ষণ ও ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। আমন এবং শীতকালীন আগাম সবজি ছাড়াও বিপুল পরিমাণ জমির খেশারি ডাল, সরিষা, গম ও তরমুজও শুক্রবারের প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। তবে টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরো দু-একদিন অপেক্ষা করতে হবে। পরিপূর্ণ ক্ষতির হিসাব করে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চূড়ান্ত করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতর।

খুলনা ব্যুরো জানায় : খুলনা জেলার অধিকাংশ ফসলি মাঠজুড়ে রয়েছে শোভা পাচ্ছে আমন ধান। ফুলে ভরে আছে শীতের সবজি। দু’-তিন সপ্তাহের মধ্যে কৃষকেরা ঘরে উঠবে আমন ধান। আর বাজারে উঠবে শীতের সবজি। ঠিক এ মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হলো ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। যার প্রভাবে কাক্সিক্ষত ফসল তোলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা। কৃষকেরা বলছেন, যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে ধানের ক্ষতি না হলেও শীতকালীন সবজির ক্ষতি হতে পারে। ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক বাসুদেব ইনকিলাবকে জানান, অল্প কিছু জমিতে আমনের আবাদ করেছি। বেশিরভাগ ধান বের হয়েছে। এখনো কাটার মতো হয়নি। তবে ধান গাছ হেলে গেছে। ক্ষেতে একটু পানি জমেছে। সেটি সরানোর চেষ্টা করছি।

ফেনী থেকে মো: ওমর ফারুক জানান, ফেনীতে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মিধিলি’র তাণ্ডবে জেলায় ২৮২ হেক্টর জমিতে পাকা ও আধ-পাকা আমন ধান হেলে পড়েছে। এতে কৃষকের চোখে মুখে কেবল হতাশার চাপ লক্ষ করা গেছে। শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে। দুর্যোগের কবলে পরেছে ২৩ হেক্টর। সরিষা আবাদ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে। দুর্যোগ কবলিত হয়েছে ২ হেক্টর জমির সরিষা। এছাড়া দুর্যোগের কবলে পড়েছে আধা হেক্টর জমির খেসারি।

লক্ষ্মীপুর থেকে এস এম বাবুল (বাবর) জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে লক্ষ্মীপুর সদর, রামগঞ্জ, কমলনগর, রামগতি ও রায়পুর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর ধান জমিতে নুইয়ে পড়েছে। এছাড়া শীতকালীন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে ১৬১টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫০টি কাঁচাঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গ্রামাঞ্চলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গোটা জেলায় ঘুর্ণিঝড় মিধিলি’র তাণ্ডব ও ভারী বর্ষণে ১ লক্ষ ৫ হাজার ১ শত ৬৪ হেক্টর জমিতে, দুর্যোগ আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৪৬ হাজার ২শত ২৬ হেক্টর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৬৯ হাজার ৪ হেক্টর। উফশি আমন ৩৫ হাজার ৯ শত ৮০ হেক্টর, স্থানীয় আমন ২ হাজর ৪শত ৯৬ হেক্টর, শাক-সবজি ২ শত ৬৯ হেক্টর, খেসারি ২ হাজর ৯ শত হেক্টর মরিচ পান কলাসহ অন্যান্য ১ শত ৪২ হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালী থেকে মো: জাকির হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে একটানা প্রবল বর্ষণে পটুয়াখালীতে ধানসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এ ছাড়া প্রবল বাতাসে সম্পূর্ণ এবং আংশিক শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাতে আমনসহ সব ফসল মিলিয়ে মোট ৬০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে কৃষকরা। পটুয়াখালী কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলার অনেক জমির রোপা আমন ও ইরি ফসল বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। মাটির ওপর পরে গেছে আমন ধান। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় শীতের আগাম সবজিও ক্ষতির মুখে পরেছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খেতে এখন আমন, ইরি ধান ও শীতকালীন শাক-সবজি রয়েছে। এই সময়ে ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে রোপা আমন ধান পানির ওপর পড়ে গেছে। আর এতে করে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। কারণ অতি বৃষ্টিতে ফসলি মাঠে পানি জমে গেছে। এখন আমন ধানের মৌসুম ধানে ফুল এসেছে এই সময়ে অতিবৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধানে চিটা ধরে যাবে। পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ির উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, এ বছরে পটুয়াখালীতে ১ লাখ ৯০ হাজার ১১৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে পাকা, আধাপাকা এবং ফুল অবস্থায় রয়েছে। এর থেকে আনুমানিক ১০-১২ ভাগ ঘুর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে বাতাসে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এর উল্লেখযোগ্য অংশের উৎপাদনে ফলন কমে যাবে, অপুষ্ট ধান হবে, চিটা হবে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ জানান, পৌরসভাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে দিনভর হালকা হালকা বৃষ্টি ও বাতাসের ফলে আমন পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নবান্ন উৎসবের প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টির ফলে আমন পাকা ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারেনি। গফরগাঁও উপজেলার ৩ নং চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ মুক্তিযোদ্ধা মোড়ের কৃষক মো. আসাদুল ইসলাম জানান, দু’দিনের হালকা বৃষ্টি ও ঝড়ের মতো বাতাসে পাকা আমন ধানের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রকিব আল রানা জানান, হালকা বৃষ্টির ফলে সরকারি হিসাব মতে, পাকা আমন ধানের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। গফরগাঁও পৌরসভাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের শাক-সবজি আবাদের পরিমাণ ১৫ শত হেক্টর। তবে রোপনকৃত আলু বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার পথে চলে গেছে। রোপনকৃত আলু পচে গেলে পুনরায় আবার কৃষকদের আলু বীজ রোপন করতে হবে। এ ছাড়া শিম ও বেগুনের ক্ষতির পরিমাণ বেশি বলে কৃষকরা জানান। অন্যদিকে গফরগাঁও বাজারসহ আবহমান গ্রাম বাংলার ছোট-বড় বাজারগুলোতে আলু বীজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে। চরমছলন্দ মুক্তিযোদ্ধা মোড়ের কৃষক চায়ের দোকানদার মো. লিটন জানান, এরকম আবহাওয়া চলমান থাকলে কৃষকদের মধ্যে ঘোর অন্ধকার নেমে আসবে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে এ এম মিজানুর রহমান বুলেট জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে আমন ও রবিশষ্য খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। উপরে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। গত শুক্রবার বিকালে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি উপকূল অতিক্রমের সময় এ তাণ্ডব চালায়। বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে আমন ধান খেত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এতে ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা। ৩ হাজার ৭০০ শত হেক্টর রোপা আমন খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও সবজি ৩২০, তরমুজ ৫, মরিচ ১২, খেসারি ৬৫০, ফলে ১০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বড় লোকসানের মুখে পড়েছে সবজি চাষিরা।

পটুয়াখালীর বাউফল থেকে নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী (মাসুম) জানান, ঘূর্ণিঝড় মিথিলি’র আঘাতে উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালী বাউফলে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন এই ভেবে এখন দিশেহারা কৃষকেরা। কৃষকদের অনেকেই বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আবাদ করেছেন ফসল। তাই লোন পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন তারা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ৩৪ হাজার ৭ শত এক হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ঘূর্নিঝড় মিথিলি’র আঘাতে ৪ হাজার ১ শত ৩৪ হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া লাল শাক, ফুলকপি, মিষ্টি কুমরা, লাউ, বেগুন, টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকারের শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে ৩শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ৩২০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।

ফরিদপুরের সদরপুর থেকে কবির হোসাইন জানান, চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলনে ফরিদপুরের সদরপুরের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। কিন্তু সেই হাসিতে বাধ সেধেছে ঘূর্ণিঝড় মিধিলা। গত দু’দিনে মিধিলি’র ঝড়োবৃষ্টিতে পাকা আমন ধানের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিশেষ করে যে ধান এখনও খেতেই রয়ে গেছে, কেটে ঘরে তোলা হয়নি। উপজেলার মটুকচর, মজুমদার বাজার, খেজুরতলা চৈতার কোল, ঢেউখালী এলাকায় সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে এই প্রতিবেদক দেখেন, অনেক খেতের ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। অনেকে পাকা ধান কেটে খেতেই রেখে দিয়েছেন, কাটা ধান অকাল বৃষ্টির পানিতে ভিজে রয়েছে। মটুকচরের কৃষক বাতেন মুন্সী জানান, আমি ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন করেছি। মিধিলি’র কারণে আমার খেতের কিছু পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। আশপাশের অনেকের ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। নুয়ে পড়া ধানে পুষ্টতা আসে না। বেশিরভাগ চিটা হয়ে যায়। এটাই চিন্তার কারণ।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে নুরুল আবছার তালুকদার জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির আমন চাষির স্বপ্ন ভেঙে গেল। ঝড়ো বাতাসে ও টানা দুই দিনের বৃষ্টির ফলে বাতাসে হেলে পড়েছে পাকা ও আধা পাকা ধান। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করেছে কৃষকরা। আবহাওয়া ভাল থাকায় ধানও ভাল হয়েছিল, কিন্তু ধান কাটার আগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে তাদের স্বপ্ন ডুবে যায়। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, পানিতে ডুবে যাওয়া ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। সরেজমিনে গতকাল উপজেলার বরুমচড়া, বারখাইন, চাতরী, বটতলী ও বারশত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে পাকা ও আধাপাকা ধান ডুবে গেছে। কেউ কেউ পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন। বারখাইন শিলাইগড়া এলাকার কৃষক মো. মনসুর (৪৫) বলেন, বন্যার কারণে আউশ ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমন ধান ঘরে ওঠার সময়। কিছু ধান পেকেছে আবার কিছু আধা-পাকা। এসময়ে ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টি হয়েছে। এতে আমার দুই কানি জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পরাজিত শক্তি এবং সুবিধাবাদীরা সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে লিপ্ত- বিমানবন্দরে সংবর্ধনা কালে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মুশাহীদ

পরাজিত শক্তি এবং সুবিধাবাদীরা সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে লিপ্ত- বিমানবন্দরে সংবর্ধনা কালে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মুশাহীদ

নোয়াখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ‘জুলুম-নির্যাতন করে আস্তাকুঁড়ে চলে গেছেন কাদের মির্জা’

নোয়াখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ‘জুলুম-নির্যাতন করে আস্তাকুঁড়ে চলে গেছেন কাদের মির্জা’

পুলিশের সামনে হামলা বিএনপি ও যুবদল নেতা আহত

পুলিশের সামনে হামলা বিএনপি ও যুবদল নেতা আহত

গাজীপুরে ছুটির দিনেও ২৫ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল

গাজীপুরে ছুটির দিনেও ২৫ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা

তিন জেলাসহ সাত বিভাগের ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ

তিন জেলাসহ সাত বিভাগের ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ

তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আইএসপিআর এর বিবৃতি

তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আইএসপিআর এর বিবৃতি

দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ

দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ

ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা

ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা

অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী

অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী

রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল

রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ

কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক

কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক

বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার

বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার

প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো

প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন

শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান

শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে

অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের

অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের