জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আদেশ সুপ্রিম কোর্টে বহাল
২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ জামায়াতের আপিল খারিজ (ডিসমিস ফর ডিফল্ট) করে এ আদেশ দেন। জামায়াতে ইসলামীর কৌঁসুলির এ জে মোহাম্মদ আলীর অনুপস্থিতিতেই এ রায় দেন আদালত।
তবে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগ বিষয়টিকে হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। এর ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে এই সংগঠন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে নাÑ মর্মে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। দলটি কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারবে না বলেও জানান তিনি। তবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, হাইকোর্টের রায় সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখলেও রাজনৈতিক সংগঠনের সভা-সমাবেশ করতে আইনগত কোনো বাঁধা নেই।
আদেশের পর এ জে মোহাম্মদ আলীর পরিবর্তে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধা রয়েছে। আর অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীনও অনুপস্থিত। এ ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে ৬ সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। আর অন্যপক্ষ আদালত অবমাননা ও নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত দিয়েছিল। যেহেতু আমাদের আইনজীবীরা উপস্থিত নেই, সেহেতু আদালত এটা ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ করেছেন। অর্থাৎ আইনজীবী উপস্থিত না থাকার কারণে খারিজ করেছেন।
তবে আদালত অবমাননার আবেদনের বিষয়ে আদালত বলেছেন, যেহেতু কনটেম্পটা হয়েছে হাইকোর্টের আদেশ। আপিল বিভাগের আদেশের কোনো কনটেম্পট হয়নি। এ কারণে এটি হাইকোর্ট বিভাগে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। আর যেহেতু আপিল খারিজ করা হয়েছে, তাই নিষেধাজ্ঞার আবেদনের আর কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকল না। পরবর্তীতে আইনি সুযোগ কি আছে- এমন প্রশ্নে অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান বলেন, রিস্টোর আবেদনের সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে এটা আদালতের এখতিয়ার।
আদেশের পর রিটকারীর কৌঁসুলি ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, তারা (জামায়াতে ইসলামী) বারবার সময় চেয়ে কালক্ষেপণ করছেন। এ জন্য আপিল বিভাগ তাদের আবেদন ‘ডিসমিসড ফর ডিফল্ট’ করেছেন। আপিল তারা করেছে। তারা যদি শুনানি করতে ইচ্ছুক না হয়। আদৌ যদি তাদের কোনো গ্রাউন্ড থাকতো তা হলে তারা শুনানি করতো। তারা নিজেরাই জানেন তাদের কোনো ম্যারিট নেই। এ কারণে তারা বারবার সময় চেয়ে কালক্ষেপণ করে আসছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তানিয়া আমীর আরো বলেন, নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকল না। তাই জামায়াত আজ থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো মিছিল-মিটিং করতে পারবে না। যদি জামায়াত কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাহলে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে যাব।
আদেশের আগে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সময় আবেদন করা হয়। এ প্রেক্ষিতে গত রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ পরবর্তী শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ওইদিন জামায়াতের পক্ষে সময় প্রার্থনা করেন অ্যাডভোকেট মো: জিয়াউর রহমান। জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। সরকারপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এস কে) মোর্শেদ ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।
নিবন্ধন বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আপিল বিচারাধীন অবস্থায় গত ১৯ অক্টোবর দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নির্দেশনা চেয়ে পৃথক ২টি আবেদন দেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। একটি হচ্ছে জামায়াতে ইসলাম সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধকরণ এবং অন্যটি জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, নায়েবে আমির, ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের আমির ও দক্ষিণের নায়েবে আমিরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে নির্দেশনা প্রদান।
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন চ্যালেঞ্জ করে মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ৩ জন রিট করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কার্যক্রম, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ১০ বছর পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে পৃথক আবেদন করেন রিটকারী।
এই আবেদনে জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দলটি নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার দাবি করে। তাদের এ দাবিকে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। সেইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারে সে বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। জামায়াতে ইসলামীর সবধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে পক্ষভুক্ত হয়েছেন বিশিষ্ট ৪২ নাগরিক। অন্যদিকে জামায়াত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারেন বলে যুক্তি দিতে দলটির পক্ষে পক্ষভুক্ত হন ৪৭ জন।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী।
নিবন্ধন বাতিলের রায় প্রত্যাখ্যান জামায়াতের
আপিল বিভাগে দলের নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। আইনজীবীরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমরা মনে করি, জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে এ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় প্রদান করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে জামায়াতের নিবন্ধন মামলায় প্রদত্ত রায়ে গতকাল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতের মত একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বক্তব্য না শুনে জামায়াতের আইনজীবীর এ্যাজর্নমেন্ট বা মূলতবি পিটিশনটি খারিজ করে দিয়ে ‘পিটিশন ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আপিল মামলাটি খারিজ করে দেয়ায় জামায়াত ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। আইনজীবীরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমরা মনে করি, জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে এ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় প্রদান করা হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে মূলত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তি, সুধীমহল ও সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে চলমান গণআন্দোলনকে আরো বেগবান করে সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশে চলছে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি। এই পরিস্থিতিতে আদালত জামায়াতের নিবন্ধন মামলার শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর সময় নির্ধারণ করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী হরতাল বা রাজনৈতিক কর্মসূচির দিন সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন না। জামায়াতের নিবন্ধন মামলার সিনিয়র আইনজীবী নিবন্ধন মামলার শুনানি মূলতবি রাখার জন্য সময় আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করেন। সেই সঙ্গে ‘পিটিশন ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আপিল মামলাটি খারিজ করে দেন।
ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, জামায়াতে ইসলামী ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন লাভ করেছিল। নিবন্ধনের বিরুদ্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে হাইকোর্ট রিটের নিষ্পত্তি করে রায় প্রদান করেন, যেখানে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। জামায়াত ঐ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দুই মাসের মধ্যে আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা দেয়ার সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ডিফল্টার হলে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। জামায়াত নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আদালতে সার-সংক্ষেপ জমা দেয়।
তিনি বলেন, এবছরের ১০ জুন জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ও জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে দুটো পিটিশন দায়ের করা হয়। ঐ পিটিশন শুনানির জন্য আদালত দিন-তারিখ ধার্য করেন। পরবর্তীতে ৬ নভেম্বর আপিল শুনানির বিষয়ে আদালত আদেশ প্রদান করেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক