ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
আওয়ামী লীগ চোরাই পথে ক্ষমতায় আসবেও না

আমেরিকা স্যাংশন দেয়ার দেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া ব্যাক্তিদের মুখে তালা দেয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি আমেরিকাকে স্যাংশনের দেশ উল্লেখ করে বলেছেন, ওরা স্যাংশন দেয়ার দেশ। বিশ্বের অনেক দেশে তা দিয়েছে। আমরা তো একদিনে আমেরিকা হতে পারব না। আমাদের ইচ্ছে ওনাদের মতো ভালো হতে। কিন্তু আমরা একদিনে হতে পারব না। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কারো মুখ তো আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি গর্হিত কাজ করে, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব, অ্যাকশন নিচ্ছিও। আবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তিনি বলেছেন, বিদেশিরা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আপনারা (গণমাধ্যম) তাদের (বিদেশিদের) যত সুযোগ দেবেন তারা তত লাফালাফির সুযোগ পাবে। আপনারা (গণমাধ্যম) বিদেশিদের যদি কম পাত্তা দেন তাহলে তাদের লাফালাফি কমে যাবে। আমরা এসব নিয়ে মোটেই চিন্তিত নই।

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মান উন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতি একটি নতুন স্মারকপত্র স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্মারকপত্র প্রকাশের পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার বক্তব্যে কল্পনা আক্তার নামে বাংলাদেশের এক গার্মেন্টস শ্রমিক ও নেত্রীর কথা উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।জবাবে ড. মোমেন বলেন, ওরা স্যাংশনের দেশ। ওরা দিতে পারে। ওরা বড় লোক। কিন্তু আমরা আমাদের মতো কাজ করব। বাস্তবতার নিরিখে আমরা কাজ করব। আমরা তো একদিনে আমেরিকা হতে পারব না। ওনারা (যুক্তরাষ্ট্র) যাদের টাকাটুকা দিয়ে রাখে তারা মনে করে একদিনে বাংলাদেশ আমেরিকা হয়ে যাবে। হঠাৎ করে ওনারা বড় লোকের কথা বললে তাজ্জবের বিষয় মনে হয়।

আমেরিকার শ্রমিক ইতিহাস টেনে ড. মোমেন বলেন, আমেরিকার এ অবস্থায় আসতে আড়াইশ বছরের মতো সময় লেগেছে। আমেরিকাতে এক সময় শ্রমিকরা ক্রীতদাস ছিল। আব্রাহাম লিংকনের সময় এটা বাদ পড়ে। এটা বাদ পড়ায় আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ হয়। ১৯০০ শতকের শুরুতে আমেরিকায় প্রতিটি শ্রমিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করত। ২০ সেন্ট মাত্র মজুরি পেত। সেই ইতিহাস তো আমরা ভুলিনি।

আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের তুলনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে আমরা জানি। সে দিক থেকে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পদক্ষেপে শ্রমিকরা আমেরিকার তুলনায় অনেক ভালো। এখন তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) জনপ্রতি আয় ৬৫ হাজার ডলার। আর আমার ২ হাজার ৮০০ ডলার। সেই তুলনায় আমার শ্রমিকরা অনেক ভালো। তাদের আমাদের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন করে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসবে কি না জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমি জানি না। এটা অন্য দেশের বিষয়।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকির প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা আমার বলা উচিত না, আপনি যদি রাজনীতিবিদ হোন, তাহলে এক দল না এক দল আপনার সম্পর্কে বক্তব্য দেবে। আমরা যারা পাবলিক লাইফে, আমাদের সম্পর্কে পাবলিক বক্তব্য দেবে। আর যদি আপনি রাজনীতি থেকে সরে থাকেন, তাহলে কেউ আপনাকে এসব নিয়ে তিরস্কার করবে না। আর কে কী কোথায় বলল, এভিডেন্স তো আমাদের দেন নাই। আমাদের আগে এভিডেন্স প্রয়োজন।

এদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশিরা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আপনারা (গণমাধ্যম) তাদের (বিদেশিদের) যত সুযোগ দেবেন তারা তত লাফালাফির সুযোগ পাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি সদুপদেশ দেয় অবশ্যই আমরা সেটি গ্রহণ করব। আগেও যখনই কেউ ভালো প্রস্তাব দিয়েছে তখনই আমরা সেটি গ্রহণ করেছি। আর অবান্তর-অবাস্তব প্রস্তাব দিলে আমরা সেটা গ্রহণ করি না। বাংলাদেশের জনগণের পরিপক্কতা আছে, বিচার করার ক্ষমতা আছে। আমাদের দেশের মঙ্গলের জন্য জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করি। বিদেশিদের জন্য কাজ করি না।

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে আপনারা মানুষের জান-মাল নষ্ট না করে অগ্নি-সন্ত্রাস বন্ধ করে দেশবাসীর কাছে মাফ চেয়ে নির্বাচনে আসুন। আপনাদের কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করুন। তার আগে জাতীয় সম্পদ ও বাস পোড়ানো, মানুষ হত্যার অপরাধে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আপনাদের কতটুকু জনসমর্থন আছে সেটা প্রমাণ করুার জন্য নির্বাচনে আসুন। আমার অপজিশন লিডারশিপ (বিরোধী দলীয় নেতাদেরকে) বলব, যারা সন্ত্রাসী কাজ করছে, সাংবাদিক মেরেছে, বিচারকের বাড়িতে আগুন দিয়েছে, পুলিশ হাসপাতাল ধ্বংস করেছে তারা যদি বিএনপির লোক হয় তাহলে দল থেকে তাদের বহিষ্কার করুন। আর যদি বহিষ্কার না করেন আমরা ভাবব বিএনপি সন্ত্রাসীদের দল। আর সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।

তফসিল ঘোষণার পর দেশে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে এসেছি। শত শত লোক এখানে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এসেছে। মানুষ এটা বিশ্বাস করে যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। কেননা এদেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সব নির্বাচনে জয়লাভ করেই সরকার গঠন করেছে। কোনোদিন চোরাই পথে সরকারে আসেনি, আসবেও না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে সমাবেশ

পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে সমাবেশ

বিগত ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি

বিগত ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি

তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের

তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের

রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে নিহত ১, থমথমে পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা জারি, ৭২ ঘন্টার অবরোধের ডাক

রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে নিহত ১, থমথমে পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা জারি, ৭২ ঘন্টার অবরোধের ডাক

বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান

বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান

নিরাপদ ও নির্ভয়ে উদযাপন হবে শারদীয় দূর্গোদসব এবং দূর্গাপূজা- এসএমপি কমিশনার রেজাউল করিম

নিরাপদ ও নির্ভয়ে উদযাপন হবে শারদীয় দূর্গোদসব এবং দূর্গাপূজা- এসএমপি কমিশনার রেজাউল করিম

মব কিলিং সরকার সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ

মব কিলিং সরকার সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ

চট্টগ্রামে রাতের আঁধারে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর

চট্টগ্রামে রাতের আঁধারে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর

বলিউডে কারিনা কাপুরের ২৫ বছর

বলিউডে কারিনা কাপুরের ২৫ বছর

মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ

মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ

রাজশাহীতে ট্রেনে বরযাত্রীদের ওপর হামলা

রাজশাহীতে ট্রেনে বরযাত্রীদের ওপর হামলা

চিহ্নিত গোষ্ঠী আবার দখলদারি ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে : সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই

চিহ্নিত গোষ্ঠী আবার দখলদারি ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে : সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই

গায়িকা রুকসানার রহস্যজনক মৃত্যু!

গায়িকা রুকসানার রহস্যজনক মৃত্যু!

যে কোনো মূল্যে লাহোর কর্মসূচি সফল করুন: ইমরান খান

যে কোনো মূল্যে লাহোর কর্মসূচি সফল করুন: ইমরান খান

চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালকসহ নিহত ২

চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালকসহ নিহত ২

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ভবনে বিচারককে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ভবনে বিচারককে গুলি করে হত্যা

ডিবির সাবেক ডিসি ৭ দিনের রিমান্ডে দলীয় বিবেচনায় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান মশিউর

ডিবির সাবেক ডিসি ৭ দিনের রিমান্ডে দলীয় বিবেচনায় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান মশিউর

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সংঘর্ষ: তিন জেলার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সংঘর্ষ: তিন জেলার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের

গরমে যেন শেষ সিলেট !

গরমে যেন শেষ সিলেট !

গল টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা

গল টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা