ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

নতুন আতঙ্ক কিউলেক্স মশা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

প্রতিদিনই মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে মারা যাচ্ছে একাধিক ব্যক্তি। মশার উপদ্রব বেড়েছে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। তবে কীটতত্ত্ববিদদের দাবি, প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারের হিসাবের দ্বিগুণের বেশি হবে। এছাড়া এখনো প্রতিদিন হাজারো মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে রাজধানীতে বাড়ছে কিউলেক্স মশার উপদ্রব। যা নগরবাসীর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। কিন্তু এ মশা নিধনে তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না।

এখন বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে। বিভিন্ন ডোবা-নালা, ড্রেন, ঝিল বা খালে পানি কমে যাচ্ছে। সেখানে নোংরা পানিতে কিউলেক্স জন্মাচ্ছে। ফলে এখন থেকে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত কিউলেক্স মশা বাড়তে থাকবে। মার্চে মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি বাড়বে। এজন্য সিটি করপোরেশনকে আগে থেকেই মশা নিধনে গুরুত্ব দিতে হবে। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

নাগরিকদের অভিযোগ, নাগরিক সেবায় সিটি করপোরেশনের যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে, তার মধ্যে মশা নিধন অন্যতম। কিন্তু এ কাজটিই ঠিকভাবে করছে না ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি। ফলে বছরজুড়ে এডিস ও কিউলেক্স মশার বিস্তার ঘটছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
তবে দুই সিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, মশা নিধনে বছরজুড়েই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। কিন্তু তারপরও মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। আগে শুধু বর্ষা মৌসুমে এডিস মশা জন্মাতো। এখন দেখা যায়, সারা বছরই মানুষের ডেঙ্গু হচ্ছে। আবার শুষ্ক মৌসুমের এডিস মশা বর্ষায় জন্মাচ্ছে। তারপরও এসব বিষয় মাথায় রেখে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

দেশে মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ জনের প্রাণহাণী ঘটেছে জ্বরটিতে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত একদিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ১৯৭ জন। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন এক হাজার ৫৫৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৯০৪ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ৬৫০ জন। এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ২ হাজার ৪৫২ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন দুই লাখ ৯৬ হাজার ২৪৫ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ১৯৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ২৮৬ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ৯১১ জন।

প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এ বছর জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। তবে নভেম্বর মাসে এসেও ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ অব্যাহত আছে। চলতি বছর ডেঙ্গু অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ডিএসসিসি বছরজুড়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোসহ জনসচেতনামূলক কার্যক্রম চলছে। এখন এডিস মশা নিয়েও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে সারা বছরই নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও জরিমানা করা হচ্ছে। তবে ডিএসসিসির তালিকা অনুযায়ী এখন জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, মুগদাসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি।

ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেটে নগরীতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এবং এ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি কিনতে ১২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যয় করা হয়েছিল ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু নিধনে জনসচেতনতা তৈরিতে ডিএনসিসির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও জাতীয় স্কাউট দল। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম ও জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছে। এছাড়া যেসব ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, তাদের জরিমানা করছে ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া মসজিদের ইমাম, স্কুল-মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়েও জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে সংস্থাটি।

গত ২৩ জুলাই মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে গবেষণার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে ডিএনসিসি। সমঝোতার আওতায় ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কীটনাশকের কার্যকারিতা এবং মশার ঘনত্ব ও প্রজাতি বিশ্ববিদ্যালয়টির ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। আর পরীক্ষার মাধ্যমেই মশা নিধনে কীটনাশক প্রয়োগ ও যে কোনো ডিভাইসের ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ে জনসচেতনতামূলক অধ্যায় যুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব করেছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে স্কুল-কলেজে মশা নিধনে সচেতনতায় এক লাখ কার্টুন বই ফ্রি বিতরণ করেছে সংস্থাটি।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মশা নিধন নিয়ে ডিএনসিসির আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু এত বড় কার্যক্রম নাগরিকদের সচেতনতা ছাড়া সফল করা সম্ভব নয়। তাই নিয়মিত লার্ভিসাইডিং ও এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান, ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকার মসজিদ ও মাদরাসার এক হাজার ইমাম-খতিব, স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, ছাদবাগানে এডিসের লার্ভা শনাক্তে ড্রোনের ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণে মশার প্রজাতি ও আচরণ নির্ণয় করে সঠিক, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে গবেষণা চলছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এডিস ও কিউলেক্স মশার চরিত্র বদলে গেছে। ফলে ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশে স্থায়ী। অর্থাৎ সারা বছরই এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হবে। এটি আর শূন্যতে নামানো যাবে না। তবে চলতি নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ডেঙ্গুর প্রবণতা কমবে। এখন বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে। বিভিন্ন ডোবা-নালা, ড্রেন, ঝিল বা খালে পানি কমে যাচ্ছে। সেখানে নোংরা পানিতে কিউলেক্স জন্মাচ্ছে। ফলে এখন থেকে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত কিউলেক্স মশা বাড়তে থাকবে। মার্চে মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি বাড়বে। এজন্য সিটি করপোরেশনকে আগে থেকেই মশা নিধনে গুরুত্ব দিতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান

রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান

নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান

ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান

আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব

আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব