পোশাক শিল্পের নতুন চ্যালেঞ্জ
২১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সঙ্কটে দেশের আমদানি-রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমছে। নানা কৌশলে অর্থ পাচারের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও দিন দিন তলানিতে যাচ্ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডলারের দাম। এতে আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতকে আরও ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের অর্থনীতির এই নাজুক পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে এমনটাই এ খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শ্রম অধিকার নীতি দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের মালিকরা এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশে পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে। শ্রমিকদের আন্দোলন দমাতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। চলমান মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে শ্রমিকদের ওপর পুলিশি হামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়রানি থেকে শুরু করে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে। শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের মালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের নতুন নীতিটি বাংলাদেশের ওপর কার্যকর করে তাহলে এ শিল্পে তথা দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে এখনই কূটনৈতিকভাবে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘মেমোরেন্ডাম অন অ্যাডভান্সিং ওয়ার্কার এমপাওয়ারমেন্ট, রাইটস অ্যান্ড হাই লেবার স্ট্যান্ডার্ডস গ্লোবালি’ শীর্ষক একটি স্মারকে (প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম) সই করেছেন। শ্রম অধিকার বিষয়ক এই স্মারকে সই করার পর গত ১৬ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন, ভয় দেখাবেন, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বাংলাদেশে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে চলছে অস্থিরতা। ন্যায্য মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন, জীবন দিচ্ছেন। এছাড়া নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মাঠের বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনা অন্যান্য দলগুলোর হরতাল-অবরোধ চলছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের এ দাবির স্বপক্ষে অর্থাৎ এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি কার্যকর করেছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতিও যদি যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর করে তাহলে সেটা হবে মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো অবস্থা। তাই এ বিষয়টি নিয়ে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকরা খুবই চিন্তিত।
গত কয়েকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতি বিষয়টি পোশাকশিল্প মালিকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে, বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে শ্রম ইস্যু। বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরাও তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে। এর ফলে নতুন এ নীতি দেশটি কীভাবে কাদের ওপর কার্যকর করবে, তা নিয়ে সবাই খুবই উদ্বিগ্ন।
শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির বিষয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ হলো, এ দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। পোশাক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মৎস্য, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্যসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৯৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫১ কোটি ডলার। এখন যদি নতুন শ্রম নীতি কার্যকর করে এদেশ থেকে পোশাক না নেয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র তাহলে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে এ খাত সংশ্লিষ্টরা এমনটাই মনে করছেন।
জানা যায়, গতকাল দিনভর বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে ছিল পোশাকশিল্প মালিকদের মধ্যে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে, বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে শ্রম ইস্যু। ফলে নতুন এ নীতি দেশটি কীভাবে কাদের ওপর কার্যকর করবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক নেতা তানভীর আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ বেশি। কারণ, বেশকিছুদিন ধরে দেশে শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছর পোশাক রপ্তানি কিছুটা নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে অক্টোবর এ চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশের বেশি কমেছে। এ অবস্থায় নতুন এই শ্রম নীতি প্রয়োগ হলে তা এ খাতের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির কারণেই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বাংলাদেশের জন্য এ পদক্ষেপ নেয়নি। নতুন নীতিতে জোরপূর্বক শ্রমের বিষয়ে যেটি বলা হয়েছে, সে ধরনের পরিস্থিতি আমাদের নেই। তবু পুরো বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে এবি ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাউল হক বলেন, এদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে। তারপরও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় আছে বলা যায়। এছাড়া পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও তাদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনকে ঘিরে এ খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকার বিষয়ক নতুন এ নীতি প্রয়োগ করতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। তাই বিষয়টিকে এখনই কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের এখনই আলোচনা করা প্রয়োজন।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাউন্সিলের সভাপতি নুরুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। বাংলাদেশে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে নানাভাবে বঞ্চিত। আইনি বৈধতা থাকলেও শ্রমিক সংগঠন করতে গেলে শ্রমিকরা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হন। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পান না। যখন তখন শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়। পাওনা দাবি করলে তাদেরকে নানাভাবে ভয় ভীতি ও হয়রানি করা হয়। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এই শ্রম নীতি যদি এদেশের মালিক পক্ষকে সচেতন করে, যদি শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সেটা সহায়ক হয় তাহলে সেটা আমাদের দেশের পোশাক শিল্পের জন্য মঙ্গলজনক বলেই মনে করি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি
হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে
মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী
রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১