গাজায় ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি
২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
হামাসের হাতে আটকে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দিতে চার দিনের যুক্তবিরতির একটি চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে দখলদার ইসরাইলের মন্ত্রিসভা। ইসরাইল-গাজা যুদ্ধের ছয় সপ্তাহের মাথায় এসে হামাসের সাথে এ জিম্মি চুক্তি হলো। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আগামী চার দিনের মধ্যে ৫০ জন জিম্মি মুক্তি পাবে এবং এ সময়টিতে লড়াই স্থগিত থাকবে। এরপর অতিরিক্ত প্রতি দশজন জিম্মির মুক্তির জন্য এক দিন করে যুদ্ধবিরতি বাড়বে।’ তবে সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে নিমূর্ল না করা পর্যন্ত ইসরাইলি অভিযান চলবে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে হামাস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৫০ জিম্মিকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারে আটক ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু মুক্তি পাবে। সেই সঙ্গে ওই চুক্তির অংশ হিসাবে মানবিক সহায়তা, ওষুধ ও জ্বালানি নিয়ে শতাধিক ট্রাককে গাজায় প্রবেশ করার সুযোগ দেয়া হবে বলে হামাস তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করছে, ৫০ জনের বেশি জিম্মি মুক্তি পেতে পারে। জিম্মিদের মধ্যে তিনজন মার্কিন নাগরিক মুক্তি পেতে পারেন, যাদের মধ্যে তিন বছরের একটি শিশুও রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সাত অক্টোবর হামাস ইসরাইলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালালে অন্তত বারশো মানুষ মারা যায় এবং দুশোরও বেশি মানুষকে হামাস জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপর ইসরাইল গাজায় হামলা শুরু করে এবং হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ এ পর্যন্ত মারা গেছে, যাদের মধ্যে পাঁচ হাজার শিশু রয়েছে।
চুক্তির বিষয়ে ইসরাইল যা বলছে : ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে দেশটির সরকার সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। ‘সরকার লক্ষ্য অর্জনের একটি রূপরেখা অনুমোদন করেছে এবং সে অনুযায়ী নারী ও শিশুদের সমন্বয়ে কমপক্ষে ৫০ জিম্মি আগামী চার দিনে মুক্তি পাবে। এ সময়ে যুদ্ধে বিরতি দেয়া হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত প্রতি দশ জন জিম্মির মুক্তির জন্য এক দিন করে যুদ্ধবিরতি থাকবে।’ এতে আরো বলা হয়, ‘ইসরাইল সরকার, আইডিএফ (ইসরাইলি সামরিক বাহিনী) এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সব জিম্মিদের মুক্ত করতে, হামাসকে নির্মূল করতে এবং গাজা থেকে ইসরাইলের প্রতি নতুন কোন হুমকি আসবে না নিশ্চিত করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।’
চুক্তির বিষয়ে হামাস যা বলছে : ইসরাইলের পর ওই চুক্তির বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে হামাস। সেখানে তারা বলেছে, ৫০ জিম্মিকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারে আটক ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু মুক্তি পাবে। সেই সঙ্গে ওই চুক্তির অংশ হিসাবে মানবিক সহায়তা, ওষুধ ও জ্বালানি নিয়ে শতাধিক ট্রাককে গাজায় প্রবেশ করার সুযোগ দেয়া হবে বলে হামাস তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার সময় গাজা ভূখণ্ডে কোন হামলা বা গ্রেফতার করবে না ইসরাইলি বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া : ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভা গাজায় যুদ্ধবিরতির বহুল প্রত্যাশিত প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে জো বাইডেন হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্তির চুক্তিকে বিশেষ করে স্বাগত জানিয়েছেন। বাইডেন কাতারের শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি ও মিরের প্রেসিডেন্ট আবদেল-ফাত্তাহ আল-সিসিকে ‘এই চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তাদের নেতৃত্ব এবং অংশীদারিত্বের জন্য’ ধন্যবাদ দিয়েছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি।
বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি পরিবারের দুঃখকষ্ট দূর করার জন্য অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার সুযোগ নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার সরকার যুদ্ধবিরতি সমর্থনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার প্রশংসা করি। আমি এই নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। কারণ আমরা এই চুক্তিটি সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য কাজ করছি।’ বাইডেন আরও যোগ করেন, ‘এই চুক্তির সব দিক সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।’
নিহত ছাড়াল ১৪ হাজার, নারী-শিশুর সংখ্যাই ১০ হাজার : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৫ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি শিশু। এছাড়া নিহতদের মধ্যে নারীর সংখ্যাও প্রায় চার হাজার। এছাড়া ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে হাসপাতাল, মসজিদ ও গির্জাসহ হাজারও ভবন।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১৪ হাজার ১২৮ জনে পৌঁছেছে বলে অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ‘নিহতদের মধ্যে ৫ হাজার ৮৪০ জনেরও বেশি শিশু এবং ৩ হাজার ৯২০ জন নারী রয়েছেন।’ গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী : মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী বলে মন্তব্য করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস-এর শীর্ষ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এছাড়াও চলমান ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলায় অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনির মৃত্যুতে শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। প্রসঙ্গত, ব্রিকস ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত ও ফিলিস্তিনে ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মঙ্গলবার একটি ভিডিও সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠিত ব্রিকস-এর এই বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে মস্কো থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এসময় তিনি হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, বেসামরিক নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর থেকে ব্যাপকভাবে বিতাড়ন সহ গাজা উপত্যকায় যে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন দিরাষ্ট্রনীতির উপর জোর দিয়ে বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনকে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে নস্যাৎ করার কারণে ফিলিস্তিনিরা অবিচারের শিকার হচ্ছে এবং ইসরাইল পুরোপুরি নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না।
‘আত্মরক্ষার’ সীমা ছাড়িয়ে গেছে ইসরাইল : সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সউদ বলেছেন, ‘আত্মরক্ষার’ নামে গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী যা করছে তা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ বাড়ছে এবং নিরপরাধদের রক্ত ঝরছে, হাসপাতাল এবং বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হচ্ছে। আত্মরক্ষা এ পদক্ষেপগুলিকে সমর্থন করতে পারে না,’ তিনি রাশিয়া, আরব লীগ ও অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোণ্ডঅপারেশন (ওআইসি) সদস্য রাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে একটি বৈঠকে উল্লেখ করেছিলেন।
সউদী আরব, জর্ডান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাজা মঙ্গলবার মস্কোয় পৌঁছান। তারা রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। রোববার, সউদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, আরব লীগ এবং ওআইসির যৌথ শীর্ষ সম্মেলনের পরে গঠিত কমিটির শীর্ষ কূটনীতিকরা তাদের দায়িত্বের অংশ হিসাবে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসানের সুবিধার্থে কয়েকটি দেশ সফর করবেন। সোমবার, তারা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাথে বৈঠক করে বেইজিং সফর করেন। তুরস্কের আনাদোলু নিউজ এজেন্সির মতে, প্রতিনিধি দলটি আগামী দিনে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রেও যাবে। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা
কমলনগরে ট্রাক্টরট্রলির চাপায় চটপটি বিক্রেতার মৃত্যু
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু
ঝিনাইদহে ২৬ টি দোকান দুঃসাহসিক চুরি টাকা ও মালামাল নিয়ে চম্পট
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে প্যানেল
বগুড়ায় মটরসাইকেল - ভটভটি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত
‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি করছিলেন এক প্রতারক , আয় ৩০ কোটি !
মাদকব্যবসা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ-বোমা হামলা-ভাঙচুর, আহত ২০
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে
কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন
ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি
তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?
রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের
টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল
লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু
কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা
সাতক্ষীরা সীমান্তে চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ
"তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না" : মালালা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট