ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতা হাবিব বেগম খালেদা জিয়ার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত

শত বছর কারাদণ্ড হলেও ভয় পাই না

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমার মমতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আমার লিভার, কিডনি, এমনকি জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। ১০০ বছরের সাজা হলেও আমি ভয় পাই না। গতকাল বুধবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর বেঞ্চে তিনি এ মন্তব্য করেন।

একটি টিভি টকশোতে হাবিবুর রহমান হাবিব যে বক্তব্য দিয়েছিলেন শুনানির শুরুতে ল্যাপটপের মাধ্যমে তা দেখানো হয়। আদালতের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি শপথ করে বলছি, আমি এই বক্তব্য দিয়েছি। আমি আদালতের কাছে কিছু কথা বলতে চাই। তখন হাইকোর্ট তাকে কথা বলার অনুমতি দেন।

হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন। আমি তার জন্য আমার লিভার প্রয়োজনে দিয়ে দেব। বেগম খালেদা জিয়া এমন এক মহীয়সী নেত্রী। তিনি আমার মা। আমার মাকে যদি কেউ কটু কথা বলে সে মারা গেলেও তো তাকে ছাড়ব না। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভক্ত। তিনি বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, আমার মমতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আমার লিভার, কিডনি, এমনকি জীবন দিতেও প্রস্তুত রয়েছি। আমার ১০০ বছরের সাজা হলেও ভয় পাই না।
আদালতে হাজির করা হলে হাবিবুর রহমান হাবিবের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, বিচারককে কবর দেয়া মানে দেশকে কবর দেয়া। আপনি একজন বিচারককে কবরে গেলে কবর থেকে তুলে আনার কথা বলেছেন। আপনারা (হাবিবুর রহমান হাবিব) রাজনীতিবিদ। আপনাদের কাছ থেকে সোসাইটি শিখবে। কিন্তু আপনারা যদি আদালত নিয়ে মন্তব্য করেন তা হলে জনগণের কাছে ভুল মেসেজ যাবে।

বিএনপি নেতা হাবিবের উদ্দেশ্য করে আদালত আরো বলেন, আপনারা রাজনীতি করেন সংবিধানকে সমুন্নত রাখবেন। সংবিধানের মানোন্নয়ন করার জন্য আদালত নিয়ে মন্তব্য করার সময় সতর্ক থাকবেন। আপনার আবেগ আছে, আবেগে এসব বলেছেন। কিন্তু বিচার বিভাগের একটি ডেকোরাম আছে। আপনি বিচারপতি মারা যাওয়ার পর তাকে কবর থেকে তুলে আনবেন বলেছেন। বিচারককে কবর দেয়া মানে দেশকে কবর দেওয়া। পরে হাইকোর্ট হাবিবুর রহমান হাবিবকে ৫ মাসের কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তার ব্যাখ্যা দিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে তলব করেন হাইকোর্ট। ৬ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়। সেইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। ৬ নভেম্বর আদালতে হাজির হননি তিনি। এ কারণে সরকারপক্ষীয় আইনজীবীর কাছে গত ৮ নভেম্বরের মধ্যে তার বর্তমান অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই দিনও আদালতের তলবে হাজির না হওয়ায় হাবিবকে ধরে হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে হাজির করতে পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে গত ২১ নভেম্বর রাজধানীর পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে গতকাল দুপুরে তাকে হাইকোর্টে হাজির করে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ।

এর আগে, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে তার পাবনার ও ঢাকার বাসায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক মামলায় সাজা হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। পাবনা জেলা পুলিশ ও ডিএমপির শ্যামলী থানা পুলিশ হাইকোর্টকে এ তথ্য জানায়।

গতকাল আদালতে হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান ও অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল উপস্থিত ছিলেন। সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম মাসুদ রুমি উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন