ব্যবসা-বাণিজ্য ওলট-পালট
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
রাজনৈতি কারণে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে। একদিকে সরকার বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনী হাওয়া উড়িয়েছে। অন্যদিকে ভোটের অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো হরতাল অবরোধ করছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য সিকেয় উঠার উপক্রম হয়েছে।
রেওয়াজ হয়ে গেছে দেশের ব্র্যান্ড হাউজগুলো বছরের শেষ দিকে ক্লিয়ারিং সেল, ভিন্নধর্মী নানা অফার কিংবা বড় অঙ্কের ছাড় দেয়া। এসব বিশেষ ছাড়ের আশায় ক্রেতারাও ভিড় করেন ব্র্যান্ড হাউজগুলোতে। প্রতি বছরের এই সময়ে বিক্রিও জমে ওঠে। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সবকিছুই ওলটপালট করে দিয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। টানা হরতাল-অবরোধে অন্য খাতের মতো একদমই বেচাকেনা নেই ব্র্যান্ড হাউজগুলোতে। রীতিমতো টিকে থাকার জন্য লড়ছে এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তৈরি পোশাক, জুতা, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিকসসহ নানান ধরনের পণ্যের বিভিন্ন ব্র্যান্ড হাউজ ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এ তথ্য।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, গণতান্ত্রিক দেশে ভোটের অধিকার সবাই চায়। তাই বিএনপির আন্দোলনের প্রতি মৌন সমর্থন আছে। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য করে তো বেঁচে থাকতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দলগুলো সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সুরাহা করতে পারতো। তা না করে বিরোধকে জিইয়ে রাখছে। একদিকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, অন্যদিকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। বিক্রি প্রায় অর্ধেক কমেছে। কোনো কোনো খাতের তারচেয়েও বেশি। বছর শেষে আগের মজুত পণ্য খালি করার জন্য ছাড়সহ আকর্ষণীয় নানা অফার দিয়েও ক্রেতার সাড়া মিলছে না।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রায় এক মাস ধরেই কোনো বেচাবিক্রি নেই। বেচাবিক্রি না থাকলেও সারাদেশে শত শত শোরুমের ভাড়া, সার্ভিস চার্জসহ পরিচালন ব্যয় টানতে হচ্ছে আগের মতোই। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়েছে যে এই মুহূর্তে টিকে থাকাটাই হাউজগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেচাবিক্রি না থাকলেও সারাদেশে শত শত শোরুমের ভাড়া, সার্ভিস চার্জসহ পরিচালন ব্যয় টানতে হচ্ছে আগের মতোই। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়েছে যে এই মুহূর্তে টিকে থাকাটাই কঠিন।
পোশাকের ফ্যাশন হাউজ মালিকদের সংগঠন ফ্যাশন অন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, দেশে ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ লোক সরাসরি কাজ করেন। পরোক্ষভাবে যুক্ত লোকজনের হিসাব করলে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাবে এ খাতসংশ্লিষ্ট সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এখন।
একই সঙ্গে প্রান্তিক কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীরাও এ খাতের সঙ্গে জড়িত। কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীদের মজুরি সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয় বছরের শেষে। কিন্তু এবার শেষ সময়ে বিক্রি না থাকায় সে অর্থে টান পড়বে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক না হলে অনেক ফ্যাশন হাউজ তাদের আউটলেটের সংখ্যাও কমিয়ে ফেলবে বলে জানানো হয়েছে। এখন বিক্রি না থাকায় পুঁজি ভেঙে শোরুমের ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও ইউটিলিটি বিল দিতে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিলে কয়েক মাসের মধ্যে শোরুম বন্ধ করতে হবে।
তৈরি পোশাক, জুতা, কসমেটিকসের মতো চলতি হরতাল-অবরোধে বিক্রি কমেছে ফার্নিচার ইলেকট্রনিকসহ অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রীর। সরেজমিনে শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি, ধোলাইপাড়, সায়েদাবাদ, ওয়ারি, মালিবাগ, শান্তিনগর, এলাকায় বেশকিছু গৃহস্থালি সামগ্রীর দোকানে ঘুরে, মালিকদের সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, হরতাল-অবরোধে তাদেরও তেমন বেচাবিক্রি নেই। সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলা হলেও বেচাবিক্রি একেবারেই কম। ফলে বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন তারা। অনেকে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
ফার্নিচার খাতের উদ্যোক্তারা জানান, দেশে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ফার্নিচারের বাজার রয়েছে। একসময় দেশে প্রচুর ফার্নিচার আমদানি হলেও এখন স্থানীয় উদ্যোক্তারা ৯৫ শতাংশ পূরণ করছেন। তবে গত এক মাসে ফার্নিচার বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। অন্যদিকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশি ফার্নিচার। বর্তমানে ১১০ থেকে ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফার্নিচার রপ্তানি হচ্ছে প্রতি বছর। চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কাঁচামাল আমদানিতে সংকট তৈরি হয়েছে, যা প্রভাব ফেলছে রপ্তানিতেও।
বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান বলেন, করোনাপরবর্তী সময়ে অর্থনীতির খারাপ অবস্থায় ফার্নিচার বিক্রি অনেকটা কমেছিল। এরপর ডলারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে অনেক। এ সমস্যায়ও সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হয়েছে। তার নেতিবাচত প্রভাবও পড়েছে এ খাতে। এর মধ্যে হরতাল-অবরোধে আমাদের বিক্রি একদম কমে গেছে।
রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধারা সিটি এবং বেইলি রোডে কয়েকটি শোরুম চালাচ্ছেন এমন কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, এখন বিক্রি না থাকায় পুঁজি ভেঙে শোরুমের ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও ইউটিলিটি বিল দিতে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিলে কয়েক মাসের মধ্যে শোরুম বন্ধ করতে হবে। টানা হরতাল-অবরোধ পুরো অর্থনীতির বড় ক্ষতি করে দিয়েছে। আমাদের যেসব ভেন্ডরসহ অন্যান্য সহযোগী রয়েছে, তারাও আর্থিক সংকটে রয়েছে। কোনো সাপোর্ট দিতে পারছে না, বরং পাওনার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। সেসব প্রতিষ্ঠান তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত সংকট সমাধানে সংলাপের আয়োজন করা।
এদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ছে। যারা এমন উদ্বেগের রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছেন, এটা ঠিক নয়। কারণ প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রতিটি দলকে সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে হবে। যে কর্মসূচি অর্থনীতি আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সেটা আমাদের প্রত্যাশিত নয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইবির আইন প্রশাসক হলেন ড. নুরুন নাহার
নাটকীয় জয়ে রংপুরের সাতে সাত
নতুন ফেসবুক পেইজের ঠিকানা দিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন
ভক্তদের হঠাৎ কি বার্তা দিলেন ঢালিউড কুইন শাবনূর?
পেকুয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান কারামুক্ত
ধ্বংস হওয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের জন্যই ৩১ দফা কার্যকর প্রয়োজন: আমিনুল হক
বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা জানাল ভারত
হাসিনার এপিএস লিকুর ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন, দুদকের ৪ মামলা
মারের কোচিংয়ে জোকোভিচের প্রথম জয়
উত্তরখানে ভূয়া পুলিশ গ্রেফতার
মাত্র ৯৫ দিনে মুহিব্বুল মুরসালিন খানের পবিত্র কুরআন হিফয সম্পন্ন
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক
হাজীগঞ্জে ননদ ভাবির ঝগড়া থামাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু
মাসরুর আরেফিন পুনরায় সিটি ব্যাংকের এমডি
নতুন বছরে টেকনোর অসাধারণ অফার
‘১৫ জানুয়ারি ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ'র ঈসালে সাওয়াব মাহফিল সফল করুন’
মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চায় বাংলাদেশ
বিদ্যালয়ের পাশে হাসপাতালের আবর্জনা, মালিককে অর্থদণ্ড
স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করার আগে স্ত্রী মারা যাওয়া প্রসঙ্গে।
দাম কমল বিকনলিংক ফিচারযুক্ত অপো ফোনের