কোরাল মাছের পোনা উৎপাদনে মৎস্য বিজ্ঞানীদের সাফল্য
২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
কক্সবাজারে হ্যাচারির ট্যাংকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ভেটকি বা কোরাল মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন বিএফআরআই’র বিজ্ঞানীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে হ্যাচারিতে কয়েকটি মা মাছ প্রায় ২৫ লাখ ডিম ছাড়ে এবং গত শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে সে ডিম ফোটে রেণু হতে শুরু করে। এ প্রক্রিয়া তিনদিন পর্যন্ত চলবে বলে জানান বিএফআরআই কর্মকর্তারা।
কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কোরাল মাছের বৈজ্ঞানিকভাবে চাষ হয় না বললেই চলে। মে-জুন মাসে ঘের মালিকরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে ভেটকি মাছের পোনা সংগ্রহ করে বাগদা চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের সাথে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করে থাকে।
তিনি জানান, এ কেন্দ্রের এক দল গবেষক দীর্গদিন ধরে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল মাছের পোনা উৎপাদন নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণা করছেন। কেন্দ্রের হ্যাচারিতে আবদ্ধ পদ্ধতিতে মা মাছ তৈরি করে গত ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ব্রিডিং ট্রায়ালে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সন্তোষজনক সাফল্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান শাকিলের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের একদল গবেষক এ সাফল্য পান।
২০১৯ সালে অনবোট ব্রিডিং পদ্ধতিতে কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য পাওয়ার পর ২০২৩ সালে এসে নিবিড়ভাবে আবদ্ধ পদ্ধতিতে কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছেন কেন্দ্রের গবেষক দল। বর্তমানে এ হ্যাচারিতে ৪৪টি কোরাল মাছ লালন পালন করা হচ্ছে, যারমধ্যে ২১টি মাছ প্রজননক্ষম। তবে প্রজননক্ষম মাছগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত কয়টি ডিম ছেড়েছে, তা এখনও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি বলে তিনি জানান।
ড. শফিকুর রহমান জানান, কোরালের পোনা প্রজননের জন্য পানির লবণাক্ততার পরিমাণ ৩০ থেকে ৩১ পিপিটি, তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পানির স্বচ্ছতা ২০ থেকে ২২ সেমি, গভীরতা ১৪ থেকে ২৪ ফুট এবং পানির পিএইচ ৮ থেকে সাড়ে ৮ পর্যন্ত এস্টেন্ডার্ড। এর আগে গত ৪ নভেম্বর সন্ধায় কক্সবাজার শহরের কলাতলীস্থ গ্রিনহাউজ মেরিকালচার হ্যাচারির গবেষক দল প্রথমবারের মতো বেসরকারি পর্যায়ে কোরাল মাছের কৃত্রিম প্রজননে সক্ষম হন। হ্যাচারির স্পনিং ট্যাংকে একটি মা মাছ প্রায় ১০ লাখ ডিম ছাড়ে এবং সেখান থেকে প্রায় প্রায় ৬ লাখ রেণু পোনা জন্ম নেয়। বর্তমানে হ্যাচারিতে রেণু পোনার প্রতিপালন করা হচ্ছে বলে জানান, গবেষক দলের প্রধান তরিকুল ইসলাম চৌধুরী ও পলাশ খন্দকার।
তারা জানান, রেণুপোনা বড় হলে ক্রমান্বয়ে সেগুলোকে নার্সারি পুকুরে ও চাষাবাদ পুকুরে অথবা খাচায় স্থানান্তর করা হবে। তবে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ সালে কোরাল মাছের পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণার জন্য মালেশিয়ার তেলেঙ্গানা ইউএমটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করলেও এখনও তারা সফল হয়নি। ভেটকি বা কোরাল মাছ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু বৃহৎ আকারের সামুদ্রিক মাছ। এ মাছটি কম কাটাযুক্ত, দ্রুত বর্ধনশীল ও খেতে সুস্বাদু বলে এর বাজারমূল্য বেশি। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ মাছের ব্যাপক চাহিদা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলো গত ২-৩ দশক আগেই হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল মাছের পোনা উৎপাদনে সক্ষম হলেও বাংলাদেশের বিজ্ঞানিরা এতদিন ছিলেন পিছিয়ে।
কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা ভেটকি বা কোরাল মাছ চাষের উপযুক্ত বলে মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের কোরাল মাছ চাষ বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের মাঝে চিংড়ির সাথে কোরাল মাছেরও চাষ করা হয়। কোরাল মাছ লবণাক্ত, আধালবণাক্ত, এমনকি স্বাদু পানিতেও অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। এ মাছের রোগ বালাই কম বলে সাম্প্রতিককালে অনেকেই চিংড়ি চাষ বাদ দিয়ে ভেটকি চাষ করে সফল হয়েছেন। তবে পোনা সঙ্কটের কারণে এ মাছের চাষকে সম্প্রসারিত করা যাচ্ছে না। অথচ অর্থনীতিতে এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা জানান, মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেল মোহনার ফাড়ার চর নামক স্থানে ২৩ বর্গ কিমি. এলাকাজুড়ে তাইল্যা ও কোরাল মাছের একটি প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য রয়েছে। চরটি ভাটার সময় জেগে উঠে ও জোয়ারের সময় নিমজ্জিত থাকে। এ চরের অগভীর এলাকায় আগত জোয়ারের পানিতে সান্ধ্যকালীন সময়ে স্ত্রী ও পুরুষ কোরাল মাছ পরিপক্ক ডিম ও শুক্রাণু ছাড়ে। তীব্র ঢেউ ও ঘূর্ণনের মধ্যে ডিম ও শুক্রাণুর মধ্যে বাহ্যিক নিষিক্তকরণের মাধ্যমে ভেটকি মাছের প্রজনন সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রজনন ক্ষেত্রে নিষিক্ত ডিম্বাণুর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ তৈল গ্রন্থি বিদ্যমান থাকায় নিষিক্ত ডিম সাগরের পানির উপরিস্তরে ভাসতে থাকে এবং জোয়ারের পানির সাথে ভাসতে ভাসতে একসময় উজানের উপকূলীয় নদীনালার কম লবণাক্ত পানিতে পৌঁছে। ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে এরা ডিম থেকে লার্ভা আকারে বড় হয়ে সোনাদিয়া, মহেশখালী, বাঁকখালী নদীর উজান দিকের খুরুশকুল, পেশকারপাড়া, এসএমপাড়া, চান্দেরপাড়া ইত্যাদি এলাকায় (জোয়ারের পানি যেখান পর্যন্ত প্রবেশ করে সে সমস্ত এলাকায়) অগভীর জলাশয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল
নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় চীন: শি জিনপিং
পতিত স্বৈরাচারের দোষর মিডিয়া আর স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে
পাকিস্তান-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টও মুলতানে
৭০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইআইই-তে অংশ নেবে
সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আজ প্রতিনিধিদল যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে
৩ হাজার কয়েদির সাজা মওকুফ অথবা হ্রাস করতে যাচ্ছে ইরান
অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর শ্রীলংকায় প্রথম নির্বাচন আজ
জুনে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন ১৭ শতাংশ কমেছে
রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট
গারো পাহাড়ের বালু খেকোদের বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের সতর্কবার্তা
রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ