অব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে
২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
নভেম্বরের শেষে এসেও এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। এর জন্য বিশেষজ্ঞরা যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেয়াকে দায়ী করেছেন। যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ এতটা ভয়াবহ রূপ নিত না বলে মনে করেন তারা। একটা সময় ঢাকাতে সবচেয়ে বেশি রোগী থাকলেও এখন তা সারাদেশে প্রায় সমান হয়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিলে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১২ জনের প্রাণহাণী ঘটেছে ডেঙ্গুতে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত একদিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫৯ জন। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন এক হাজার ৫৯৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৯২৫ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ৬৭০ জন। এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ৭ হাজার ১৯৬ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩ লাখ ১ হাজার ৬৭৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ১৮৪ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ৫৭৫ জন। প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এ বছর জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। তবে নভেম্বর মাসে এসেও ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ অব্যাহত আছে। চলতি বছর ডেঙ্গু অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে সারাদেশেই ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, তবে শনাক্ত এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ঢাকায় এবং বাইরে প্রায় সমান হয় গেছে। একটা সময়ে ছিল ঢাকাতে সবচেয়ে বেশি রোগী, এখন প্রায় সমান হয়ে গেছে। ২০২৩ সালের আউটব্রেকে আমরা দেখছি, ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই ডেঙ্গু রোগী। মোট সংক্রমণের ৩৫ শতাংশই ঢাকা এবং ৪৪ শতাংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন। এমনকি ৮৬ শতাংশ কেস শনাক্ত হয়েছে হাসপাতালের চারপাশে দুই কিলোমিটারের মধ্যে।
নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলতি বছরের মে, জুন, জুলাই তিন মাসে এডিসের প্রজনন হার ছিল অনেকটাই বেশি। এই সময়টাতে বৃষ্টিও বেশি হয়। কাজেই আমরা যদি মশা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাহলে এই সময়ে আগেই মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটা করতে হবে। কিন্তু আমরা সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারিনি। ফলে ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।
আইইডিসিআরের অপর সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর হোসেন বলেন, করোনার সময় থেকে আমরা কমিউনিটি এঙ্গেজমেন্টের বিষয়ে চেষ্টা করেছি, কিন্তু এই বিষয়টাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধেও কী কী করতে হবে আমরা সবাই জানি, কিন্তু মানি না। এখানেই হচ্ছে আমাদের মূল সমস্যা। ডেঙ্গু সংক্রমণের সেই শুরু থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের মিটিং-সেমিনার করেছি, কিন্তু এভাবে আমরা মিটিং করলে কী হবে? আমি আজ পর্যন্ত জানি না স্বাস্থ্য অধিদফতরে কোনো ধরনের টাস্কফোর্স কমিটি হয়েছে কি না। এক-দুইটা টেকনিক্যাল কমিটি হয়েছে, যার সর্বমোট মিটিং হয়েছে মাত্র তিনটা।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে পূর্বেই একটা ন্যাশনাল স্ট্রেটেজি তৈরি করা হয়েছিল। সেটা রিভিশনের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের এক্সপার্ট অফার করেছি, সেটাও হয়নি। আমরা বলেছি, তাহলে আপনারা ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের ইনভলভ করেন। কারণ ডেঙ্গুতে প্রতিদিনই ডাবল ডিজিটের মানুষ মারা যাচ্ছে। আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম দেখিনি। অথচ সবাই বিচ্ছিন্নভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছি। ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন নিয়ে আমরা যখন হাসপাতালগুলোতে কথা বলতে গিয়েছি, আমরা দেখেছি কমিউনিটি লেভেলে ট্রিটমেন্ট করার কোনো গাইডলাইন নেই। আমাদের ৮০ পেইজের একটা গাইডলাইন আছে, যেটা অধিকাংশ চিকিৎসকের ট্রিটমেন্টের সময় ফলো করা সম্ভব নয়। তখন আমরা ছোট করে একটা পকেট গাইডলাইন তৈরি করেছি, সেখানেও এখন পর্যন্ত যথেষ্ট তত্ত্ব-উপাত্ত এবং ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিয়েন্সের অভাব রয়েছে। সেটা রিভিশনের জন্য বারবার বলা হলেও সেটা হচ্ছে না। এ সময় ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্টের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আইইডিসিআরের সাবেক এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
আলোচকরা আরও বলেন, প্রতিদিন ডাবল ডিজিটের মানুষ মারা গেল, অথচ সেটা নিয়ে আমরা কোনোদিন ইমারজেন্সি একটা মিটিং ডাকিনি। এ বিষয়গুলো আমাদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) ডা. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুই আমরা প্রত্যাশা করি না। যার একমাত্র আয়-রোজগারের মানুষটি মারা যায়, তারাই একমাত্র ভয়াবহতাটা বুঝতে পারে। এজন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে কাজ করছি, আমাদেরও যথেষ্ট গ্যাপ রয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ে আমরা আলোচনার টেবিলেই আটকে আছি। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের মাঠ পর্যায়ে যেতে হবে। হলরুম-সেমিনারে বসে শুধু গবেষণা আর বক্তব্য দিলেই হবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে নিয়ে যৌথ কমিটি করে আমাদের কিছু ডকুমেন্টস বানাতে হবে। কাজের স্ট্রাকচার আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে। আমাদের আগে থেকেই অ্যাকশন প্ল্যান থাকবে। অনুযায়ী আমরা যদি কাজ করতে পারি, তাহলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুজিবনগর সেচ প্রকল্পে দুদকের অভিযান ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ
শীত আসতেই রাজনগরে শুরু হয়েছে নাচ-গান আর জুয়ার আসর
বিজিবি দিনাজপুর সেক্টরের উদ্যোগে শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ
বুড়িচংয়ে কাকদী নদীর পাড় কাটায় বাধঁ ভাঙ্গার আশঙ্কা বিরাজমান
বীজ সরবরাহে প্রতারণা উপরে সুন্দর গাছে আলু ফলন নেই
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন বাবর
ভারতের মহাকুম্ভ মেলায় পবিত্র নদীতে স্নানের মহোৎসব , আধ্যাত্মিকতার মহাযজ্ঞ
কলাপাড়ায় বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদকের বাসায় চুরি
কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলায় মানুষের ঢল
রাজউক উত্তরা জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
নিষিদ্ধ সংগঠন সহ-সভাপতি সজল ১ দিনের রিমান্ডে
কুলাউড়ায় জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
ট্রাম্পের শপথের আগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার
টেকনাফের কৃতিসন্তান সাইফুল্লাহকে পুলিশের এআইজি পদে পদায়ন
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেল ফরিদপুরের চার আলেম
টিকটক কিনছেন না মাস্ক, জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা
সাতক্ষীরায় নববধূকে নির্যাতন করে হত্যা! স্বামী আটক
ফরিদপুরে চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় বাড়ির কেয়ারটেকারকে হত্যা : গ্রেপ্তার ৩
হাজীগঞ্জে বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক
৪৩ বছর বয়সে ক্রিকেটে ফিরছেন অ্যান্ডারসন