ঘরে ফিরল ৩৯ ফিলিস্তিনি
২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২১ এএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২১ এএম
যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় আরও ১৭ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। মুক্তি পাওয়া জিম্মিরা গতকাল ইসরাইলে পৌঁছায়। এদিকে ইসরাইলি কারাগার থেকে আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, গাজা থেকে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে রেডক্রসের বাসে চড়ে মিশরে যাচ্ছেন হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া জিম্মিরা। এবার মুক্তি পাওয়া ১৭ জিম্মির মধ্যে ১৩ জন ইসরাইলি নাগরিক ও চারজন থাইল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, মুক্তি পাওয়া ১৩ ইসরাইলি জিম্মির মধ্যে ছয়জন নারী ও সাত শিশু-কিশোর রয়েছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, মুক্ত জিম্মিরা ইসরাইলে পৌঁছেছে। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে তারা পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হবে।
ইসরাইল সরকার জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় মুক্তি পাওয়া ৩৯ ফিলিস্তিনি পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরে তাদের বাড়িতে ফিরে গেছে। তাদের ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়া সবাই নারী ও শিশু-কিশোর। শনিবার দ্বিতীয় দফায় জিম্মিদের মুক্তি দিতে দেরি করছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠি হামাস। তারা দাবি করে, গাজায় ত্রাণ সহায়তা আসতে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল। এই ত্রাণ আসতে দিলেই জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হবে; এর আগে নয়। এমনকি কারাগারে বন্দিদের মুক্তি দিতেও নিয়ম মানছে না ইসরাইল। কাতারের মধ্যস্থতা হওয়া ইসরাইল-হামাস চার দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৫০ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। অপরদিকে ইসরাইল তাদের কারাগার থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেবে।
দুই ইসরাইলি গুপ্তচরকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখল হামাস : পশ্চিম তীরের রিপোর্ট এবং ভিডিও ফুটেজ ইঙ্গিত দেয় যে, হামাস ইসরাইলি সরকারের সাথে যোগসাজশের অভিযোগে দুই ফিলিস্তিনি পুরুষকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। বর্তমানে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি বিনিময় অব্যাহত রয়েছে। মাকো এবং ইসরাইল হায়ম এর রিপোর্ট অনুসারে, শুক্রবার রাতে হামজা মাবারেচ (৩১) এবং আজাম জোয়াবরা (২৯) নামে ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে হামাস। এ দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করে ইসরাইলের সাথে ‘সহযোগিতা’ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল, যার কারণে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তারা ইসরাইলি সেনার হামলায় নিহত হয়েছিল।
তুলকার্ম শরণার্থী শিবিরে একটি ফায়ারিং স্কোয়াড তাদের প্রথমে গুলি করে বলে জানা গেছে। পরে, তাদের লাশগুলো ভিড়ের মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যাতে লোকেরা লাশের উপর লাথি মারতে পারে। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে, হামাস তখন একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে দুটি লাশ ঝুলানোর জন্য দড়ি ব্যবহার করে। যখন মৃতদেহগুলো ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছিল, তখন জনতা চিৎকার করে উঠল ‘বিশ্বাসঘাতক’ এবং ‘গুপ্তচর’ বলে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিড়ের মধ্যে বেশিরভাগই মানুষই তাদের ফোন দিয়ে ঘটনাটি রেকর্ড করছিল।
যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনে ৩ লাখ মানুষের বিক্ষোভ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে অবিরাম হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। নির্বিচার এই ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে ৬ হাজারেরও বেশি শিশু। গাজার এই সংঘাতে বর্তমানে মানবিক বিরতি চললেও এই বিরতি শেষ হওয়ার পরপরই গাজায় আবারও হামলা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। শনিবার অনুষ্ঠিত ওই বিক্ষোভে ৩ লাখ মানুষ অংশ নেন বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভের আয়োজকরা। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে মিছিল করেছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী। গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর লন্ডনে এটিই প্রথম বিক্ষোভ মিছিল। পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ বিক্ষোভকারীই আইনসম্মতভাবেই এদিন প্রতিবাদ করেছেন। বিবিসি বলছে, লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে এই বিক্ষোভটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে লড়াইয়ে চার দিনের বিরতি চলছে। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং নিহতদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু। অন্যদিকে লন্ডনের পাশাপাশি গ্লাসগো এবং কার্ডিফেও এদিন বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আইসিসি’তে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ জমা দিয়েছে তুরস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, ইসরাইল গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ করছে। ইতিমধ্যে তুরস্কের আইন বিশেষজ্ঞদের একটি দল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ জমা দিয়েছেন। এরদোগান শুক্রবার বলেছিলেন যে, তেল আবিব অবরুদ্ধ উপত্যকায় ‘বিদ্যুৎ, পানি এবং ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে ‘যুদ্ধাপরাধ করছে’। ‘ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে যে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে তারা কেবল শিশু এবং মহিলাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইসরাইল সাংবাদিকদেরও হত্যা করে যারা সমস্ত অসুবিধা সত্ত্বেও গাজার মানবিক ট্র্যাজেডি বিশ্বের কাছে প্রকাশ করার চেষ্টা করছে।’
এরদোগান যোগ করেছেন যে, ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইল তার নৃশংস যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ৬০ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছে। তুরস্কের সংসদ সদস্য সহ আইন বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধি দল হেগের আদালতে প্রমাণের একটি ফাইল জমা দেয়ার একদিন পর তুর্কি প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ‘অভিযুক্তদের জবাবদিহি করতে’ আহ্বান জানিয়েছেন। তুর্কি পার্লামেন্টের জাস্টিস কমিশনের চেয়ারপার্সন কুনিট ইয়ুকসেল বলেছেন, ‘কোন বিবেকই এ বিষয়ে নীরব থাকতে পারে না...আমরা একটি অবর্ণনীয় নৃশংসতার সম্মুখীন হয়েছি।’ ইয়ুকসেল বলেছিলেন যে, ‘যদিও ইসরাইল আইসিসির সদস্য নয়, তবে ফিলিস্তিন সদস্য হওয়ার কারণে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বিচার করা যেতে পারে।’
এরদোগান এর আগে বলেছিলেন যে, তার সরকার ইসরাইলকে আইসিসিতে আনার জন্য সবকিছু করবে। তিনি আরও বলেন যে তার সরকার ‘ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধী’ ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস অক্টোবরে অধিকৃত অঞ্চলের অভ্যন্তরে ‘অপারেশন আল-আকসা’ শুরু করার পর ইসরাইল তার গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু করে। তারা গাজায় ৬,১৫০ শিশু এবং ৪,০০ নারী সহ কমপক্ষে ১৪,৮৫৪ জনকে হত্যা করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খান গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে, ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের তদন্তের জন্য তার কার্যালয় পাঁচটি দেশের কাছ থেকে একটি রেফারেল পেয়েছে। খানের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, বলিভিয়া, কমোরস এবং জিবুতি রেফারেল জমা দিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, দ্য মেসেঞ্জার, প্রেস টিভি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল
আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু
বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি
বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ
শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু
শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে
এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট
যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম
কাশ্মীরে ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার পথে বাস উল্টে নিহত ৪ সীমান্তরক্ষী নিহত
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে ভারত যোগ, ঘটনার পরেই উধাও ভারতীয় যুবক
ঈশ্বরগঞ্জে জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিল ভারত
বিষ প্রয়োগ ও শিল্প দূষণ বন্ধ করে পশুর নদী ও সুন্দরবন বাঁচাতে হবে
রাশিয়ায় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে কটুক্তিকারী ড. সৈয়দ জামিল আহমেদকে অপসারণ করতে হবে
সাইবারট্রাক ‘অচল’ করে দেয়ার জন্য মাস্ককে দুষলেন কাদিরভ
ফিরেই পান্তের সেঞ্চুরি, তিন অঙ্কে গিলও
মুখে সুন্নী বললে সুন্নী হওয়া যায়না, আমলের মাধ্যমে সুন্নী হতে হয় -ছারছীনার পীর ছাহেব
রাঙামাটি পৌঁছেছে তিন উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রতিনিধি দল
'কাজ না করলে বেতন বন্ধ’, ধর্মঘটকারী ভারতীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিল স্যামসাং