ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

গভীর দৃষ্টি পরিস্থিতি ভিন্ন

Daily Inqilab শফিউল আলম

২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে দৃশ্যত চলছে ক্ষমতাসীন দলকেন্দ্রিক তৎপরতা। আর অবশিষ্ট আছে ‘কিংস পার্টি’ কিংবা ব্যক্তিবর্গ নিয়ে বশীকরণ দাওয়াই, দরদাম কষাকষি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভোট আয়োজনের একেকটি আশ্বাস বাণী। সব মিলিয়ে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সচেতন জনসাধারণ বিএনপিকে বাইরে রেখে বলতে গেলে একতরফা নির্বাচনের এহেন উদ্যোগ আয়োজনকে ভোটরঙ্গের তোড়জোড় বলেই মনে করছেন। এ নিয়ে হাট-বাজারে, মাঠেঘাটে, আলাপে-আড্ডায় সবশ্রেণি পেশার মানুষের আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন এভাবে সাতই জানুয়ারি ভোট কী হবে আদৌ? যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশসমূহ, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহসহ বিদেশি শক্তিধর ও দাতা দেশ বা গোষ্ঠিগুলো তাদের ধারাবাহিক দৃঢ় প্রত্যাশিত ও পরামর্শ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক (ইনক্লুসিভ) এবং অর্থবহ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত দেখতে হার্ড লাইনে তথা সরকারকে সম্মত করাতে ক্রমাগত জোরদার ভূমিকা গ্রহণ করবে? শেষ পর্যন্ত সংলাপ ও সমঝোতার পথে আওয়ামী লীগ সরকার আসবে কিংবা আসতে বাধ্য হবে কী? নাকি তার উল্টো আরো দমনপীড়ন নীতিতে যাবে সরকার? সঙ্কট আর সংঘাতের মাঝখানে পড়ে দেশের আপামর জনগণের জীবন-জীবিকা, নিরাপত্তা, গরীব-দিনমজুরদের রুজি রোজগার, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, প্রবাসী শ্রমশক্তির ভবিষ্যৎ আরো ঘোরতর বিপদের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। এসব বিষয় জনগণের মুখে ঘুরপাক খাচ্ছে। নানামুখী আলোচনায় উচ্চারিত হচ্ছে এখানে সেখানে। দেশে চলমান সঙ্কটজনক ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির তুলনায় আসন্ন নির্বাচন বা ভোট নিয়ে জনমানুষের আগ্রহ ফিকে।
এর পাশাপাশি, মাঠের প্রধান বিরোধী দলসহ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দল, জোট, সংগঠন আজ অবধি রয়ে গেছে একতরফা এই ভোটে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়ার বাইরে। তাদের প্রধান দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন যদি নিশ্চিত করা না হয় বিরোধী দল, জোটগুলো মাঠের আন্দোলন চলমান রাখবে এবং নির্বাচন বর্জনের পথেই হাঁটবে, জনগণকে সাথে নিয়ে একদলীয় নির্বাচন রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের কথাও জানান দিচ্ছেন আন্দোলনরত নেতারা।
অন্যদিকে মাঠের মূল বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ থেকে শুরু করে মাঝারি এবং থানা ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বেশিরভাগই কারাগারে অথবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক নেতাকর্মীরা ঝটিকা বেগে মাঠে এসে মিছিল মিটিং করছেন। দলীয় ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের অফিসগুলো তালামারা। এহেন নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় ধরপাকড়, গায়েবি মামলা, হুলিয়া, হামলা, ভয়ভীতি, আতঙ্কের আবহ অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরই যেখানে ভোটের আবহ ও উৎসবের আমেজ বিরাজমান থাকাই স্বাভাবিক, এখন তার বিপরীত দৃশ্যপট। যা আওয়ামী লীগ সরকারের পূর্ববর্তী শাসনামলে বিগত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়কালেও এতোটা অধিকমাত্রায় অনিশ্চয়তা ও সঙ্কট দেখা যায়নি। তদুপরি বাজারে নিত্যপণ্যের দামের আগুনে মানুষের জীবনধারণের সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর। অসহায় আপামর জনসাধারণ।
দেশে অবাধ, জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও রাজনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে আলাপকালে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশা করবো সরকারের ও সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সবাইকে নিয়ে অর্থবহ নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতার পথে আসতে হবে। এখানে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সরকারের নিজেদের মধ্যে দুই ধরনের কথাবার্তা বলা হচ্ছে। একেক সময় একেকজনকে একেক কথা বলতে শোনা যায়। সরকারের ভেতরে স্থির চিন্তা ও নীতির প্রতিফলন দেখছি না। তাদের সুদৃঢ় অবস্থান সেটা কিন্তু পরিষ্কার নয়।
প্রফেসর সিকান্দার খান আরো বলেন, সরকারে যারা রাজনীতি করার করছেন। তবে দেশে অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সুযোগ গ্রহণ করছে শক্তিশালী বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তারা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন, বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
চলমান রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ঘোর অমানিশা ছাড়া সামনে কিছুই দেখছি না। গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন হলে দেশ গভীর সঙ্কটের দিকেই ধাবিত হবে। ক্ষমতার অন্ধ মোহ শুভ নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার পুনর্বার আসার জন্য মরীয়া হয়ে উঠেছে। অবশ্যই যদি জনগণের ভোটে ও সমর্থনে আজীবন এ সরকার ক্ষমতায় থাকে তাহলে কারো আপত্তি নেই।
ড. ইয়াহইয়া বলেন, একতরফা বা একদলীয় ভোট হলে গণতান্ত্রিক বিশ্বে আমাদের ভাবমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে। অংশগ্রহণমূলক না হলে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন তো অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য হবেনা। আর, বিশ্বকে অস্বীকার করে আমরা একাকী চলতে পারিনা। দেশে ও বিদেশে অগ্রহণযোগ্য কোন নির্বাচন কেউ চাইছে না। বরং সেটা অতীতের চেয়েও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, গত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের সাথে তুলনা করলে এবারে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম। এবার সমগ্র বিশ্ব ইউরোপ, আমেরিকা, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থাসহ বৈশ্বিক তীক্ষ্ম ও গভীর দৃষ্টি বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। আগে বিদেশিরা হালকাভাবে দেখলেও এখন প্রত্যক্ষ নজর দিয়ে রেখেছে। বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের ওপর আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিগুলোর আগ্রহ ও আধিপত্যের চেষ্টাকে তো অস্বীকার করা যাবেনা। এ প্রেক্ষাপটে তারা তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়েছে কোথায় কখন কী ঘটছে। কারা গাড়ীতে বাসে আগুন দিয়েছে আজকাল স্যাটেলাইটের যুগে এসে তাও তাদের অজানা মনে করার কারণ নেই। কাজেই সারাবিশ্বের চোখে ধুলো দিয়ে গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করা কিংবা তা করলেও টিকবে কিনা ভাবনাচিন্তা করা অপরিহার্য। তদুপরি গোদের ওপর বিষফোড়া। হরতাল, অবরোধ, সংঘাত, সহিংসতা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সবমিলিয়ে সাধারণ মানুষের কপালে আরো দুর্ভোগ নেমে আসবে। গার্মেন্টসসহ আমদানি রফতানি খাতে সঙ্কট জোরালো হচ্ছে। বিদেশিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচনী পরিবেশ নেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এক শতাংশও নেই। সরকারি দল ও কিংস পার্টির একেকটি আসনে মনোনয়ন কেনাবেচা হচ্ছে। মাঠের বিরোধীদলসহ সবাইকে নিয়ে সংলাপ ও সমঝোতা করলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হতে পারে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চোট নিয়ে খেলছেন সাকিব: যে প্রশ্ন তুললেন তামিম

চোট নিয়ে খেলছেন সাকিব: যে প্রশ্ন তুললেন তামিম

কুমিল্লার আদালতে মামলা স্থগিতেও সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রভাব

কুমিল্লার আদালতে মামলা স্থগিতেও সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রভাব

আ'লীগের মতো বিএনপিও যদি জুলুম করে জনগণ যাবে কোথায়? - সোনারগাঁয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম

আ'লীগের মতো বিএনপিও যদি জুলুম করে জনগণ যাবে কোথায়? - সোনারগাঁয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম

এম আবদুল্লাহ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি হওয়ায় সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের অভিনন্দন

এম আবদুল্লাহ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি হওয়ায় সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের অভিনন্দন

পবিত্র সিরাতুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে পাবনায় বর্ণাঢ্য র্্যালী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

পবিত্র সিরাতুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে পাবনায় বর্ণাঢ্য র্্যালী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বিজয় ছিনিয়ে নিতে নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে, মন্তব্য নজরুল ইসলাম খানের

বিজয় ছিনিয়ে নিতে নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে, মন্তব্য নজরুল ইসলাম খানের

তারেক জিয়ার বার্তা দেশবাসী অনুধাবন করতে পারবে - ডা. মাজহার

তারেক জিয়ার বার্তা দেশবাসী অনুধাবন করতে পারবে - ডা. মাজহার

যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা বন্ধ করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা বন্ধ করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

বিচার বিভাগে হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে: আইন উপদেষ্টা

বিচার বিভাগে হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে: আইন উপদেষ্টা

পর্তুগালের নতুন রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন মাহফুজুল হক

পর্তুগালের নতুন রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন মাহফুজুল হক

অস্ট্রেলিয়া কোচের পদ ছাড়লেন অর্নল্ড

অস্ট্রেলিয়া কোচের পদ ছাড়লেন অর্নল্ড

ঈশ্বরগঞ্জে জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের কমিটি গঠন

ঈশ্বরগঞ্জে জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের কমিটি গঠন

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

বাংলাদেশের স্মৃতি ফিরলো শ্রীলংকা-নিউজিল্যান্ড টেস্ট

বাংলাদেশের স্মৃতি ফিরলো শ্রীলংকা-নিউজিল্যান্ড টেস্ট

‌‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এ রকম ইতিহাস আর হবে না’: জয়নুল আবেদীন ফারুক

‌‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এ রকম ইতিহাস আর হবে না’: জয়নুল আবেদীন ফারুক

হঠাৎ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড পটুয়াখালীর বাউফল

হঠাৎ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড পটুয়াখালীর বাউফল

বড় পরাজয়ের মুখে বাংলাদেশ

বড় পরাজয়ের মুখে বাংলাদেশ

বেগমগঞ্জে নামাজ পড়ে ফেরার পথে প্রাণ গেল বৃদ্ধের

বেগমগঞ্জে নামাজ পড়ে ফেরার পথে প্রাণ গেল বৃদ্ধের

কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানগ্লোবাল ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যাওর্য়াডস পেল ইসলামী ব্যংক

কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানগ্লোবাল ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যাওর্য়াডস পেল ইসলামী ব্যংক

কোন শ্রমিক তার কারখানার ক্ষতি করবে না: শ্রম সচিব

কোন শ্রমিক তার কারখানার ক্ষতি করবে না: শ্রম সচিব