স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠিক না হলে বোমা হামলার চেয়ে বেশি মৃত্যু হতে পারে
২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডব্লিউএইচও বলেছে, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক না হলে বোমা হামলার চেয়ে বেশি মৃত্যু হতে পারে। গাজার আল-শিফা হাসপাতালের নিষ্ক্রিয়তা এবং খারাপ অবস্থা একটি ট্র্যাজেডি। ডব্লিউএইচও’র মতে, তারা গাজার আল-শিফা হাসপাতালকে পুনরায় সক্রিয় দেখতে চায় এবং আল-শিফা হাসপাতালে আটক চিকিৎসা কর্মীদের নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।
ডব্লিউএইচও বলেছে, গাজার আল-শিফা হাসপাতালে কর্মীদের নিরপেক্ষতাকে সম্মান করা দরকার।
অন্যদিকে, গাজার অফিসিয়াল মিডিয়া অফিস বলেছে, গাজা উপত্যকার পুনর্বাসনে প্রতিদিন ১ হাজার সাহায্য ট্রাকের প্রয়োজন। গাজা মিডিয়া অফিস জানায়, গাজায় বেসামরিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, মেশিন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রয়োজন। গাজার স্টেট মিডিয়া অফিস জানায়, গাজায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজিদ আল-আনসারী বলেছেন, গাজায় ৪ দিনের যুদ্ধবিরতিতে মোট ৬৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মাজিদ আল-আনসারী বলেছেন, কাতার যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে কাজ করছে, গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে।
মাজিদ আল-আনসারী আরো বলেছেন, গাজায় মানবিক সাহায্যের ক্রমাগত বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য কাতার মিসরে ৯১০ টন সাহায্য বোঝাই ২৭টি বিমান পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, আলোচনা প্রক্রিয়া কঠিন, প্রতিটি দলের নিজস্ব দাবি এবং সংরক্ষণ রয়েছে, আমরা বিষয়গুলো সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, সবচেয়ে কঠিন পক্ষ ছিল ইসরাইল। মাজিদ আল-আনসারী যোগ করেছেন যে, গাজা যুদ্ধবিরতির দুই দিনের বর্ধিত ২০ জন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যার অগ্রাধিকার এখন বেসামরিক নারী ও শিশুদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে গাজায় টানা চারদিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির শেষ দিনে, হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ইসরাইলি জিম্মিদের আরো একটি দলকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে একদল ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার মধ্যরাতে ইসরাইলি কারাগার থেকে ৩৩ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হয়। এর আগে হামাস ১১ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। যারা ছিলেন ফ্রান্স, জার্মানি বা আর্জেন্টিনার দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তি।
চারদিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে সোমবার কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা মঙ্গলবার এবং বুধবার দুই দিন যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। কাতার বলেছে, ইসরাইল ও হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ দুই দিন বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে হামাস আরও ২০ জন নারী ও শিশুকে মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ‘বাস্তবে না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। আজ রাতেও পরিস্থিতি এগিয়েছে, তবে এজন্য ধৈর্যের প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য যে পরিবারগুলো প্রিয়জনের অপেক্ষায় প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছেন, অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন তাদের কথা ভেবে অপহৃতদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা। এটা চলতি কাঠামোর ধারাবাহিকতার মাধ্যমে বা যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ের ধারাবাহিকতার মাধ্যমে হতে পারে।’ এক কথায়, যুদ্ধবিরতি বাড়তে পারে আবার যুদ্ধ পুনরায় চালু হতে পারে এই দুটি সম্ভাবনার কথাই বলেছেন তিনি।
এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যে মানবিক ত্রাণ সহায়তার ভর্তি আরও কিছু ট্রাক সোমবার গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে। সহায়তা সংস্থাগুলি মূলত যুদ্ধপীড়িতদের মধ্যে খাবার, জ্বালানি এবং ওষুধ বিতরণ করছে। গাজাবাসীর জন্য জরুরি ত্রাণ বিতরণ আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু তারা এটাও সতর্ক করে বলেছে, যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা আসছে তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। সমুদ্রে এক ফোটা পানির মতো। এরপরও গাজাবাসী জরুরি ত্রাণ সহায়তা পেতে এবং নিরাপদে গাজায় চলাফেরা করতে, যুদ্ধে বিরতির এই সময়টি ব্যবহার করছে - অনেকেই তাদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। আবার যাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তারা কী পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখতে যাচ্ছেন। অনেকে শীতের কাপড়ের সন্ধান করছেন। কেননা গাজায় বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো বাতাস দেখা দিতে শুরু করেছে।
গাজার মিডিয়া সরকারি অফিসের মতে, ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ৬,৮০০ মানুষ নিখোঁজ এবং মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বাদেই ৭ অক্টোবর থেকে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৪,৮৫৪ জন, যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।
ইসরাইল এবং পশ্চিম তীর সফর করবেন ব্লিঙ্কেন : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে আবারও মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন। তিনি ইসরাইল এবং পশ্চিম তীর পরিদর্শন করবেন বলে জানা গিয়েছে। সেইসাথে তিনি গাজায় ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়েও আলোচনা করবেন। হামাসের হাতে জিম্মি সবার মুক্তি নিশ্চিত করবেন এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা উন্নত করার বিষয়ে কাজ করবেন। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর এই অঞ্চলে এটি হবে তার তৃতীয় সফর।
এককভাবেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিবে স্পেন : স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি স্বীকৃতি না দেয়, তা হলে এককভাবেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে স্পেন। গত শুক্রবার গাজার রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন সানচেজ। সম্প্রতি স্পেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন সানচেজ। নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, নির্বাচনে জিতলে তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবেন। তিনি বলেন, আদর্শভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তত কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র একসঙ্গে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে। যদি সেটি না হয় তা হলে স্পেন একাই তার সিদ্ধান্ত নেবে। তবে তার দাবির পক্ষে বিরোধিতা করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, স্পেন সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে।
গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল : জর্ডানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে সম্মান না জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করা যাবে না। ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপ্রেক্ষিতে, গাজা উপত্যকায় যা চলছে তা গণহত্যা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা উচিত,’ তিনি বার্সেলোনায় ভূমধ্যসাগরীয় ফোরামের ইউনিয়নের পরে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ’১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যা, ৬০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সহায়তা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার ঘটনাকে কীভাবে ইসরাইলি আত্মরক্ষা বলা যায়?’
তিনি তার ইউরোপীয় প্রতিপক্ষদের ‘ইসরাইলকে শত্রুতা বন্ধ করতে এবং রাজনৈতিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ফিরে যেতে বাধ্য করার জন্য’ একজোট হতে আহ্বান জানান। ‘ইসরাইলি সরকারের এমন মন্ত্রী রয়েছে যারা ফিলিস্তিনি জনগণের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তার অস্তিত্বের অধিকার,’ তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘কিন্তু আরব-ইসরাইল সংঘাত বন্ধ করার একমাত্র উপায় হল ফিলিস্তিনিদের সমান অধিকার দেয়া।’ সাফাদির মতে, ‘বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চালাচ্ছে তা কেবল নিরপরাধ বেসামরিক লোকদের ব্যাপক হত্যার দিকে পরিচালিত করেনি বরং ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য, আঞ্চলিক নিরাপত্তা গড়ে তোলা এবং সহযোগিতার উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করার ৩০ বছরেরও বেশি শান্তি প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করেছে।’ সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, তাস।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস
এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার
শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানসহ ৩৬ জনের নামে নারায়ণগঞ্জে মামলা।
আড়াইহাজারে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার
গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ
ছাত্র জনতার এই অর্জনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চলছে-জামায়াত নেতা আব্দুল করিম
সরকার পতন আন্দোলনের মূল কারিগর তারেক রহমান : রিজভী
চোট নিয়ে খেলছেন সাকিব: যে প্রশ্ন তুললেন তামিম
কুমিল্লার আদালতে মামলা স্থগিতেও সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রভাব
আ'লীগের মতো বিএনপিও যদি জুলুম করে জনগণ যাবে কোথায়? - সোনারগাঁয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম
এম আবদুল্লাহ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি হওয়ায় সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের অভিনন্দন