ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে জনমতের যুদ্ধে হারছে ইসরাইল

Daily Inqilab আল জাজিরা

০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

সারা বিশ্বের মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তাদের পছন্দের সামজিক মাধ্যমগুলিতে ফিলিস্তিনি ছিটমহলে ইসরায়েলের দ্বারা নির্বিচারে বোমাবর্ষণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ দেখছে। ইন্টারনেট সেবা আছে এমন যে কেউ বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া শিশুদের, টন টন কংক্রিটের নিচে পিষ্ট মানুষের এবং মায়েদের সন্তানের মৃতদেহ হাতড়ানোর অসংখ্য ভিডিও দেখছেন।

ইসরায়েল অবশ্যই তার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং কয়েক দশকের পুরনো দখলদারিত্বের ইতিহাসকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য তার চিরাচরিত প্রচেষ্টা এবং আরও অনেক কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। এটি ফিলিস্তিনকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে চিহ্নিত করতে এবং ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের হত্যা করতে দ্বিধা করে না, যারা গাজার সত্য বিশ্বকে জানানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে। ইসরায়েল বিদেশী সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশ করতে দেয় না এবং তারা স্বাধীনভাবে যা দেখে, তা প্রকাশ করতে দেয় না।

‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস্’ এর মতে, শুধুমাত্র এই সর্বশেষ যুদ্ধেই ইসরায়েল কমপক্ষে ৫৩ জন সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম কর্মীকে হত্যা করেছে, এবং বেশিরভাগই তাদের পরিবারের সদস্যসহ। আল জাজিরার গাজা সংবাদদাতা ওয়ায়েল দাহদুহ্ তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে এবং নাতিকে এমনই এক বোমাবর্ষণে হারিয়েছেন। তিনি যখন খবরটি পান, তখন সরাসরি সম্প্রচারে ছিলেন।

সিএনএন এর ফরিদ জাকারিয়া সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বর্তমানে শুধুমাত্র যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় শুধুমাত্র সেইসব বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়, যারা সংবাদ প্রকাশের আগে পর্যালোচনার জন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে তাদের সমস্ত উপকরণ জমা দিতে সম্মত হয়।
জাকারিয়া বলেন, ‘সিএনএন ইসরায়েলের আক্রমণের বিষয়ে সীমিত তথ্য প্রদান করার জন্য এই শর্তগুলিতে সম্মত হয়েছে।’ ফেসবুকের মালিক মেটা ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের গণহত্যার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায় এমন অ্যাকাউন্ট এবং পোস্টগুলিতে প্রতিবেদন সহ ৯০ শতাংশেরও বেশি ফিলিস্তিনি সমর্থক বিষয়বস্তু মুছে ফেলছে।

তবে, ইসরাইলের এই সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ইসরায়েল বেশিরভাগ সামাজিক মাধ্যমে ফিলিস্তিনে তার আচরণ সম্পর্কে সত্য গোপন করতে সক্ষম আর নয়। এটি আর প্যালেস্টাইন সম্পর্কে অপপ্রচার এবং জনমতকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যেহেতু মূলধারার গণমাধ্যমগুলি পশ্চিমা চাপের কারণে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, অন্যান্য সামাজিক মাধ্যগুলিতে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বর্বরতা বৈশ্বিক শ্রোতাদের ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি চাক্ষুষ করতে প্রকাশ্যে তা তুলে ধরা হচ্ছে।

এখন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা খোলাখুলিভাবে ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধের বর্ণনাকে নিয়ন্ত্রণ করার মরিয়া প্রচেষ্টাকে উপহাস করছে এবং মূলধারার গলমাধ্যমগুলির দ্বারা প্রচারিত ইসরায়েলের মিথ্যাগুলিকে দ্রুত প্রকাশ করছে। এখন এটি কেবল ইসরাইলই নয়, যে জানে যে, এটি প্রচারাণা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা এবং সমর্থনকারীরাও জানে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা পলিটিকো বলেছে যে, বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কীভাবে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি গাজায় সাংবাদিকদের বিস্তৃত প্রবেশাধিকার এবং সেখানে সংঘটিত ধ্বংসযজ্ঞকে আরও বেশি তুলে ধরার এবং ইসরায়েলের প্রতি জনমতকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অন্য কথায়, বোমা হামলার পর থেকে জনমত যে দিক পরিবর্তন করছে, মার্কিন কর্মকর্তারা সেসম্পর্কে সচেতন। তারা উদ্বিগ্ন যে, ইসরাইল তাদের অনুমতি ও সমর্থনে সেখানে যে গণহত্যা করছে গাজা উপত্যকায় সাংবাদিকদের আগমন তার আরও প্রকাশ ঘটাতে পারে।

ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র গাজার উপর সর্বশেষ যুদ্ধের কারণে বর্ণনার উপর সর্ব-গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হারায়নি। ইসরায়েলে সাম্প্রতিক দফা সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে এই বছরের মার্চে মার্কিন পর্যলোচনা ও পরামর্শদাতা সংস্থা গ্যালাপ প্রথমবারের মতো তথ্য প্রকাশ করে যে, মধ্যপ্রাচ্যে ডেমোক্র্যাটদের সহানুভূতি এখন ইসরায়েলিদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি, যা ৪৯ শতাংশ বনাম ৩৮ শতাংশ।

ইতিমধ্যে, মার্কিন রিপাবলিকান দলের অনেকেই ইসরায়েলকে বিদেশী সাহায্য প্রদান তথা মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‹আমেরিকা ফার্স্ট› মতবাদ-পন্থী অনেক রিপাবলিকান প্রশ্ন তুলেছেন যে, ইসরায়েলকে নিয়মিত সামরিক সহায়তা দিয়ে সমর্থন দলের বৈদেশিক নীতির একটি অগ্রাধিকার হিসেবে থাকা উচিত কিনা।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে ক্রমবর্ধমান নেতিবাচক ভাবমূর্তির জন্য ইসরায়েল নিজেই দায়ী। ইসরায়েল আশা করতে পারে না যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গাজায় তারা যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তার প্রতি বিশ্ব চোখ বন্ধ করে থাকবে। ইসরায়েল সম্ভবত সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতির পরপরই গাজায় তার নির্বিচার বোমাবর্ষণ এবং শ্বাসরুদ্ধকর সম্পূর্ণ অবরোধ চালিয়ে যাবে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ কবে শেষ হবে, জানা নেই, তবে ইসরায়েল ইতিমধ্যে জনমতের যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে কমিশন গঠন
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সুপারিশ
কোটি টাকা লুটপাট : সাবেক এমপি নদভীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
আরও

আরও পড়ুন

ইউক্রেনে আরও ৬০ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি

ইউক্রেনে আরও ৬০ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি

দেশের ইতিহাসে প্রথম গোয়েন্দা জাহাজ উন্মোচন ইরানের

দেশের ইতিহাসে প্রথম গোয়েন্দা জাহাজ উন্মোচন ইরানের

বিয়ে না করেও ৩২ বছর বয়সে ৮৭ সন্তানের পিতা!

বিয়ে না করেও ৩২ বছর বয়সে ৮৭ সন্তানের পিতা!

৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারে আসছেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান

৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারে আসছেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চিনি খেতে বাধা দেওয়াই মারামারি : আহত-১, আটক-২

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চিনি খেতে বাধা দেওয়াই মারামারি : আহত-১, আটক-২

বিরলে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল উদ্ধার

বিরলে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল উদ্ধার

বিএসএফের হাতে আটক যুবক ফেরত আনলো বিজিবি

বিএসএফের হাতে আটক যুবক ফেরত আনলো বিজিবি

নিজেকে আ.লীগের চক্রান্তের শিকার দাবি এনবিআরের সেই মতিউরের

নিজেকে আ.লীগের চক্রান্তের শিকার দাবি এনবিআরের সেই মতিউরের

হিলিতে দিনব্যাপী ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ

হিলিতে দিনব্যাপী ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ

মহিলাদের জন্য সংসদে কোন সংরক্ষিত আসন চাই না  : মুফতি ফয়জুল করীম

মহিলাদের জন্য সংসদে কোন সংরক্ষিত আসন চাই না : মুফতি ফয়জুল করীম

কারামুক্ত ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন

কারামুক্ত ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী তারুণ্য উৎসব উদযাপন

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী তারুণ্য উৎসব উদযাপন

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

আটঘরিয়ায় মসজিদের মাইক চুরি

আটঘরিয়ায় মসজিদের মাইক চুরি