সুখের আশায় সব খোয়ালো স্বজনহারা পরিবার
০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
অবৈধপথে ইউরোপে মরণযাত্রায় ফরিদপুর অঞ্চল হতে যাওয়া মানুষের মৃত্যু মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ হলেও এই নিয়ে আশানুরূপ কোন ফল এখন ও পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। সরকারিভাবে এদের পুনবার্সন করা না হলে অভাবে দুঃখে নিঃস্ব হবে এসব পরিবার। সমাজের সচেতন বিত্তবানদেরকে এদের জন্য মানবিকভাবে সর্বোপরি সচেতনার অভাব, উন্নত জীবনের জন্য দালালদের প্রলোভন সরকারি পদক্ষেপ এর অভাবে এসব সামাজিক ব্যাধিতে কাজ করা দরকার বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক শাহজাহান খানসহ সচেতনমহল। তিনি মনে করেন দেশের বিদেশে যেতে ইচ্ছুক যুব সম্প্রদায়কে সরকারি ছাড়া বেসরকারি বৈধপথে বিদেশে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করার জন্য কাজ যুগপেযোগী সময় এসেছে।
দৈনিক ইনকিলাবের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জসহ এই ৫ জেলার কমপক্ষে ১৭টি উপজেলার উপশহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আদম ব্যবসায়ী কাম দালালরা কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, অসাধু পুলিশ অফিসার, পাসপোর্ট কর্মকর্তার যোগসাজশে, অঞ্চলভিত্তিক গ্রাম্য টাউট শ্রেণির মাতুব্বরা রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। দালালরা ব্রোকাররা মিলে শহর-উপশহর-গ্রামের সহজ সরল মানুষের পেটের মধ্যে ঢুকে মাঝারী ও অভাবী মানুষকে মিষ্টিমুখের ভাষা দিয়ে ভুলবাল বুঝিয়ে বিদেশ পাঠানোর নামে মানুষকে সর্বশান্ত করে তুলছে। এই ব্যবসা দিন দিন মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়লেও নাই কোনো প্রতিকার। পাশাপাশি বাড়ছে মানবপাচার। পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ে বহু নারী এবং শিক্ষিত বেকার যুবকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মাঝে মাঝে উল্লেখিত, জেলাগুলোতে দুই একটা মামলার খবর শোনা যায়। একেবারে বেকায়দায় না পড়লেও আদম ব্যবসায়ী বা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা জেলেও যায় না। মাঝে মাঝে দুই একজন ন্যায়বাদী পুলিশ অফিসার আদম ব্যবসায়ী বা মানবপাচারকারীর নামে মামলার অভিযোগ পেলে খুব আন্তরিকতার সাথে তদন্ত করেন এবং দোষীরা কারাগারে যায়। আবার আইনের ফাক গলে বের হয়ে সাবেক পেশায় ফিরে যায়। শেষ পর্যন্ত দালালরাই উল্টো সর্বহারা হওয়া অসহায় লোকগুলোর নামে মিথ্যা মামলা ঠুকো দেয় এবং মিথ্যা মামলার জালে আটকে পথের ফকির হয়ে যায়। সব চেয়ে কষ্টদায়ক বিষয় হলো, আদম ব্যবসায়ী, মানব পাচারকারীর মিথ্যা মামলার চাকা যতো দ্রুত দৌড়ায়, সর্বস্ব খোয়ানো আদমের বা পাচারকারীর খপ্পোরে পড়া ভুক্তভোগীদের মামলার সঠিক তদন্ত ও হয় না এবং বিচারও পায় না। এমন অভিযোগ বিস্তর।
জানা যায়, ফরিদপুর নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামসহ আশপাশের ৪৭ জন যুবক লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্য স্থানীয় সরকার দলীয় আদম ব্যবসায়ী মো. পলাশ বেপারীর মিষ্টি মধুর কথায় ভুলে ঐ এলাকার অশিক্ষিত মুরাদ বেপারীর মাধ্যমে, গিয়াস বেপারীর সার্বক সহযোগিতায় প্রত্যেকে ৭/৮ লাখ করে নগদ টাকা দেয়। পরে ৪৭ জন যুবকই লিবিয়া হয়ে অবৈধপথেই ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। এর মধ্যে ৩০ জন যুবকের সলিল সমাধি হয় বলে তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। ফিরে আসে মাত্র ১৭ যুবক। তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেলে সিনেমার মতো অবর্নীয় অনেক না জানা গল্পও।
এই ১৭ যুবকের মধ্যে লালন নামে এক যুবক ইনকিলাবকে জানায়, কেউ ভারত থেকে কেউ বার্মা থেকে আবার কেউ নেপাল থেকে দালাল এবং মাফিয়াদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়া থেকে ট্রলার বা গোল নৌকা অথবা রাবারের বোর্ডে করে নদীপথে সাগর পাড়ি জমায়। স্বাভাবিকভাবে এতে ২০ থেকে ২৫ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ট্রলার বা বোর্ডে ১০০/১৫০ লোক বা ৮০/৯০ লোক নিয়ে সাগর পাড়ি দেয়। এ সময় পথিমধ্যে, এই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটলেই হয় বহু লোকের প্রাণহানির ঘটনা। হয় সলিল সমাধি। সর্বশেষ ফরিদপুর জেলার উল্লেখিত ৪৭ জন যুবক ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি, লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ৩০ জনের যুবকের সলিল সমাধি হয়।
ঐ নিহত ৩০ যুবকের মধ্যে মো. আলামিন মাতুব্বর (২১) পিতা মো. মোস্তফা মাতুব্বর, মো. মাহফুজ মোল্লা (২১) পিতা মো. সোবহান মোল্লা, সর্ব সাং কৃষ্ণনগর উপজেলা নগরকান্দা। এদের দুইজনই ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু তারাও ডুবে মারা যায়। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করে আলামিনের মা চামেলি বেগম এবং মাফুজের মা মাফুজা বাদী হয়ে নগরকান্দা থানা পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলা দুটি জেলা পিবিআই (পুলিশ ইনবেস্টিগেশন অব ব্যুরো) তদন্ত করছেন। চামেলীর মামলা নং নগরকান্দা জি-আর ১৫৩ তাং ৮-১-২০২৩ ইং এতে উল্লেখিত, মো. মুারদ বেপারি, মো. পলাশ বেপারী, মো. গিয়াস বেপারীকে ১-২-৩ নং আসামি করে মোট ১০ মামলা হয়। এই মামলায় দালাল কাম সরকার সমর্থীত স্থানীয় মাতুব্বর, দীর্ঘদিন হাজতবাস করে সম্প্রতি বের হয়ে আসে। এর পরপর ঐ দালালচক্র পলাশ মাতুব্বরের নেতৃত্বে, মামলার দুই বাদীকে মামলা তুলে নিতে স্বপরিবারকে জীবননাশের হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত চামেলি বেগম এবং মাফুজা বেগম নগরকান্দা থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। আসছে ভয়াবহ মাফিয়া চক্রের রাতের কাহিনী। আগামীকাল ৫ ডিসেম্বর, চোখ রাখুন ইনকিলাবের পাতায়। হকারকে বলে রাখুন একটি কপি দিতে।
জানতে পারবেন ফরিদপুর সদর থানার সরকারি হেলিপ্যাড বাজার ব্যবসায়ী মো. বুলু তার আপন ভাগিনা মো. সেজানকে, মালয়শিয়ায় থেকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্য, আদম ব্যবসায়ীকে নগদ দেন কত মুক্তিপনে কত? বিস্তারিত আসছে। (চলবে)
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের