ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

ইসলামের আলোকে স্বাধীনতা ও আজকের মুসলিম উম্মাহ-১

Daily Inqilab খন্দকার মনসুর আহমদ

০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

মুসলিম উম্মাহ আজ বড় কঠিন দুঃসময় অতিক্রম করছে। বহুমুখী বিপর্যয়ের প্রধানতম একটি দিক হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ বিপন্ন। মুসলিম বিশ্বের করুণ মুখচ্ছবির দিকে তাকালে একথা গল্পের মতো মনে হয় যে, এ জাতি একদিন বিপুল শৌর্যে-বীর্যে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বিজয় ও নেতৃত্বের গৌরবময় ইতিহাস রচনা করেছিল। প্রচলিত ধারণায় স্বাধীনতা বলতে কোনো দেশের ভৌগোলিক নিজস্বতাকেই বোঝায়। কিন্তু একটু গভীরভাবে দেখলে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, শুধু ভৌগোলিক নিজস্বতা পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নয়। তাহলে স্বাধীনতার পরিচয় কী তা একটি গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা এবং ধর্ম ও বিবেকের আলোকে সে জিজ্ঞাসার জবাব সন্ধান করা আমাদের দায়িত্ব।

ইসলাম আমাদেরকে গতানুগতিক কোনো স্বাধীনতার ধারণা দেয়নি। ইসলাম মানবতার সামগ্রিক জীবনে মুক্তি, সাম্য ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার বাস্তব ও যথার্থ কর্মসূচি দিয়েছে এবং মানুষের সৎ বৃত্তিগুলোর অবাধ বিকাশের মধ্যদিয়ে সত্যচর্চার পথ উন্মুক্ত করতে চেয়েছে। এজন্য অতি সংক্ষেপে ইসলামে স্বাধীনতার মর্ম হলো সর্বপ্রকার অসাম্য ও অনাচার দূর করে ন্যায়নীতি ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সত্যগ্রহণ ও সত্যচর্চার অধিকার লাভ। পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত স্বাধীনতার উল্লেখিত মর্মের প্রতি ইঙ্গিত করে।

মানব সভ্যতার কলঙ্ক অত্যাচারী ক্ষমতাধর ফেরাউন মানবতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখে তাদের স্বাধীনতাকে হরণ করে নিয়েছিল। মহান আল্লাহ সে প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন : নিশ্চয় ফেরাউন ভূমিতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে রেখেছিল। সে তাদের একটি শ্রেণিকে দুর্বল ভেবেছিলেন এবং তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করত ও কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত থাকতে দিত। বাস্তবিকই সে ছিলো নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী। আর আমার অভিপ্রায় ছিলো প্রদমিতদের প্রতি অনুগ্রহ করব এবং তাদের নেতা বানিয়ে দেব আর তাদেরকে পৃথিবীর শাসক বানিয়ে দেব এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে (লাঞ্ছনা ও পরাজয়ের) সেসব বাস্তবতা দেখাব যা থেকে তারা নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখছিলো। (সূরা কাসাস : ৪-৫)।

উপরোক্ত আয়াতের সারকথা এই দাঁড়াল যে, শোষিত ও মজলুমদের জাগ্রত করা হবে এবং স্বৈরাচারী দাম্ভিক শক্তিকে প্রতিহত করা হবে, যাতে পৃথিবীর মানুষ মুক্তি পেতে পারে এবং সত্যচর্চা ও সত্যগ্রহণের অধিকার লাভ করতে পারে। স্বাধীনতার এই যদি অর্থ হয় (এবং নিঃসন্দেহে এটাই স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ) তাহলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায় যে, বিশ্বসভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে এ স্বাধীনতা ও তা অর্জনের বাস্তবিক ও নৈতিক কর্মসূচি পূর্ণাঙ্গরূপে একমাত্র ইসলামই দিয়েছে। ইসলামের স্বর্ণযুগগুলোতে তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ও তার সুফলও ইসলাম দেখিয়ে দিতে পেরেছে।

আমরা স্বীকার করি যে, পৃথিবীর কোনো ধর্ম বা মতাদর্শ মানুষকে গোলামীর শিক্ষা দেয় না। তবে এ সত্যকেও অস্বীকার করা যাবে না যে, মানুষকে আযাদীর চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার পর পূর্ণাঙ্গ আযাদীর পরিপূর্ণ কর্মসূচি ইসলাম ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম বা মতাদর্শ দিতে পারেনি। যে যাই দাবি করুক না কেন মূলত ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মে বা মতাদর্শে সার্বিক স্বাধীনতার সে ন্যায়ানুগ কর্মসূচি ও নীতিমালাই নেই যা দ্বারা স্বাধীনতার প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কল্যাণ পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হতে পারে।

গভীরভাবে ভেবে দেখলে এ সত্য স্পষ্ট হয় যে, প্রকৃত স্বাধীনতা তাকেই বলা যায় যে স্বাধীনতা লাভের পর পরাধীনতা ও পরাধীনতাজাত অনাচার থেকে সার্বিকভাবে মুক্তি পওয়া যায়। আর তা কেবল সম্ভব হতে পারে মন ও মনন এবং চিন্তা ও বিবেকের রাহুমুক্তির মধ্যদিয়ে। যাতে মানুষ যা কিছু উপলব্ধি করতে চায় তা প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে যৌক্তিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে। মানবতার আযাদীর সকল ধারা অন্তর ও বিবেকের এই স্বাধীনতার উপরই নির্ভর করে। চিন্তা ও বিবেকের এ স্বাধীনতা পেলে সমগ্র পৃথিবীতেই মানুষ স্বাধীন আর এই স্বাধীনতা না পেলে সমগ্র পৃথিবীতেই সে পরাধীন। সারা পৃথিবীতে সে গোলামীর শৃঙ্খলে আবদ্ধ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত