১০ মাসে ৬৯৫ নারী ও কন্যাশিশু হত্যা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ৫০২ জন এবং ১৯৩ জন কন্যাশিশু। গতকাল মঙ্গলবার (জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি এ তথ্য উল্লেখ করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, নারী অগ্রগমন এবং অর্জন্যে বাংলাদেশ অনেক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারপরও, স্বাধীনতার ৫২ বছরে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে কাক্সিক্ষত অর্জন নিশ্চিত হয়নি। আমাদের নারী এবং কন্যাশিশুদের এখনও বঞ্চনা-বৈষম্য এবং নিপীড়নের থেকে মুক্তি ঘটেনি, বরং তাদের প্রতি সহিংসতা যেন ক্রমাগত বাড়ছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই ১০ মাসে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে, এদের মধ্যে নারী ৫০২ জন এবং ১৯৩ জন কন্যাশিশু। আত্মহত্যা করেছে ৫৯০ জন (৩৪৭ জন নারী এবং ২৪৩ জন কন্যাশিশু), গৃহের অভ্যন্তরে সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৭৯ জন নারী এবং ২০ জন কন্যাশিশু। পাচার এবং অপহরণের শিকার ৩২ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশু, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১,০২২ জন, এদের মধ্যে ৩৬২ জন নারী এবং ৬৬০ জন কন্যাশিশু এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল আরও ৫৩ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশুকে। ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী এবং ৩৪ জন কন্যাশিশু। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন মোট ৩৫২ জন, যার মধ্যে ৯৬ জন নারী এবং ২৫৬ জন কন্যাশিশু। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের থানায় বিগত পাঁচ বছরে (২০১৮-২২) ২৭ হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৬০টি।
সহিংসতা, যৌন হয়রানির ঘটনার এই ভয়াবহ বাস্তবতার পেছনে যথাযথ বিচার না হওয়ার বিষয়টি বড় ভূমিকা রাখে। যৌন হয়রানির ঘটনার বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন না থাকা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে একটি বড় প্রতিবন্ধক। এই সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ আইন। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমরা দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।
অনুষ্টানে শাহীনা আক্তার ডলি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের প্রতি আমরা ফোরামের পক্ষ দুটো দাবি তুলে ধরেছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আলাদা একটি আইন প্রণয়নের প্রণয়নের লক্ষ্যে উপরোক্ত আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছি, আইনটি পাসের জন্য সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করেছি। শিশুদের জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তর গড়ে তোলাও আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি।
ওয়াহিদা বানু বলেন, নারী উন্নয়নে বাংলাদেশে যত আইন ও নীতিমালা আছে, পৃথিবীর অন্য দেশে আরও কম আছে। কিন্তু আইনগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে আমরা দেখছি যে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪৩ লাখ মামলা চলমান রয়েছে, তার মধ্যে ১১ লাখ মামলা শিশুসংক্রান্ত। আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করতে হবে যে তারা নারী ও কন্যাশিশুদের কল্যাণে কী কী পদক্ষেপ নেবে। ফারজানা খান বলেন, আজকে আমাদের কন্যাশিশুরা আগের মতো নিরাপদ নয়। এর বড় কারণ হলো আমাদের মানসিকতা। তাই আমাদের মানসিকতারও উন্নতি ঘটাতে হবে। আজকে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি যেহেতু নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে গেছে, তাই ঘরে-বাইরে, নারী-পুরুষ নানানভাবে ব্যাখ্যা করে বলতে হচ্ছে তাদের প্রতি কতভাবে নির্যাতন করা হয়। আমরা মনে করি, নারীর প্রতি নির্যাতন রোধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার।
রাজিয়া সুলতানা বলেন, রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। তাই আমরা আশা করি, নারী ও শিশুদের কল্যাণে রাজনৈতিক দলগুলো সদিচ্ছা প্রদর্শন করবে। যৌন হয়রানি রোধে নির্বাচিত সরকার যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও পাস করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সঙ্গে লু হাওয়া
চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৮টায়
ঈদযাত্রা মহাসড়কে নেই যানজট, নেই বিড়ম্বনা
বরিশালে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন
ড. ইউনূসের চমক
আরও
X

আরও পড়ুন

এমবাপের জোড়া গোলে রিয়াল মাদ্রিদের জয়

এমবাপের জোড়া গোলে রিয়াল মাদ্রিদের জয়

দোষী প্রমাণিত হলে কি শাস্তি হতে পারে আনচেলত্তির?

দোষী প্রমাণিত হলে কি শাস্তি হতে পারে আনচেলত্তির?

আনুষ্ঠানিক বন্ধ ইউএসএআইডি

আনুষ্ঠানিক বন্ধ ইউএসএআইডি

৯৫ বছরে এমন ভূমিকম্প দেখেনি থাইল্যান্ড

৯৫ বছরে এমন ভূমিকম্প দেখেনি থাইল্যান্ড

রাজতন্ত্রের দাবিতে নেপালে বিক্ষোভ সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ নিহত ২

রাজতন্ত্রের দাবিতে নেপালে বিক্ষোভ সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ নিহত ২

ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদে ৩০০ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল

ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদে ৩০০ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল

নালিতাবাড়ীতে ৯৫ ড্রেজার ধ্বংস কারাদণ্ড ৩ জন কে

নালিতাবাড়ীতে ৯৫ ড্রেজার ধ্বংস কারাদণ্ড ৩ জন কে

ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপকে কাজে লাগাতে পারে পেন্টাগন

ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপকে কাজে লাগাতে পারে পেন্টাগন

‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের জাতি ক্ষমা করবে না’

‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের জাতি ক্ষমা করবে না’

নাটক প্রেম ভাই

নাটক প্রেম ভাই

নাটক লাস্ট উইশ

নাটক লাস্ট উইশ

ঈদে সায়েরা রেজার নতুন গান

ঈদে সায়েরা রেজার নতুন গান

ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে অপার্থিবের প্রথম অ্যালবাম আবছা নীল কণা

ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে অপার্থিবের প্রথম অ্যালবাম আবছা নীল কণা

নগরকৃষকদের নিয়ে কৃষকের ঈদ আনন্দ

নগরকৃষকদের নিয়ে কৃষকের ঈদ আনন্দ

হানিফ সংকেতের ঈদের নাটক ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’

হানিফ সংকেতের ঈদের নাটক ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়াল

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়াল

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত থাইল্যান্ডের রাস্তায় সন্তানের জন্ম দিলেন তরুণী

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত থাইল্যান্ডের রাস্তায় সন্তানের জন্ম দিলেন তরুণী

তালেবানের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা পাকিস্তান সেনার, নিহত ১১

তালেবানের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা পাকিস্তান সেনার, নিহত ১১

বিক্রি হয়ে গেল এক্স, দাম উঠল ৩,৩০০ কোটি ডলার, কিনল কে?

বিক্রি হয়ে গেল এক্স, দাম উঠল ৩,৩০০ কোটি ডলার, কিনল কে?

চপলকে নিয়ে এ কেমন নাটক এনএসসির?

চপলকে নিয়ে এ কেমন নাটক এনএসসির?