আন্দোলন জোরদারের প্রস্তুতি
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান এক দফা আন্দোলন আরোও জোরদার করার প্রস্তুতি চলছে চট্টগ্রামে। গায়েবি মামলায় হুলিয়া মাথায় নিয়েই রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া ১০ম দফা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ এবং আগামী রোববার বিশ^ মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ আরোও বেশি বাড়ানোর আয়োজন চলছে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে।
জানা গেছে, আগামী দিনের কর্মসূচিগুলোতে আড়ালে থাকা মহানগর ও জেলার নেতারাও প্রকাশ্যে আসবেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং সাবেক সংসদ সদস্যরাও রাজপথে সক্রিয় হবেন। দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকদের সাথে সাধারণ মানুষকেও ভোটাধিকার নিশ্চিতের এ আন্দোলনে সামিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
হাইকমান্ডের নির্দেশে আন্দোলনরত অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ইসলামী সংগঠনগুলোর সাথে রাজপথের আন্দোলন জোরদারের লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা সব দলকে একসাথে রাজপথে নামানোর প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে। বিগত দিনে প্রতিটি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। চট্টগ্রাম থেকেই ঐক্যবদ্ধ এবং সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আন্দোলনরত দলের নেতারা। চূড়ান্ত পর্যায়ে আন্দোলনকে কিভাবে আরোও গতিশীল করা যায় সে লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন বিএনপি ও আন্দোলনরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এদিকে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে আজগুবি সব অভিযোগে গায়েবি মামলা এবং ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির হিসেবে, চলমান অবরোধ, হরতালসহ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মহানগর এবং জেলায় নতুন করে ৬১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন এক হাজার ২২৯ জন নেতাকর্মী। আসামি করা হয়েছে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের জামিনও মিলছে না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করতে বিএনপি সমমনা দল ও জোট। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য ছোটখাটো দলও এ আন্দোলনে শরিক হয়েছে। বিগত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় সহিংসতায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও শুরু হয় পুলিশি ক্র্যাকডাউন। গণহারে নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়। গ্রেফতার এড়াতে মহানগর ও জেলার নেতারা ছাড়াও হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।
নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে রাতে-দিনে চলে পুলিশি তল্লাশি অভিযান। এসব অভিযানে দলের নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের স্বজন, ভাই, সন্তান এমনকি বয়োবৃদ্ধ পিতাকেও গ্রেফতার করছে পুলিশ। সর্বশেষ সীতাকুণ্ডে উত্তর জেলা ছাত্রদলের নেতা কাজি মো. সেলিম উদ্দিনের বাসায় অভিযান চালাতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব কাজি মো. নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য না। তার বিরুদ্ধে কখনো কোন মামলাও ছিল না। শুধুমাত্র ছাত্রদল নেতার ভাই হওয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
ব্যাপক পুলিশি ধরপাকড়ের মধ্যেও চলমান অবরোধ, হরতালে মাঠে সক্রিয় রয়েছে চট্টগ্রামের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। রাস্তায় দেখামাত্রই পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর হামলে পড়ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার অভিযান থেকে দলের মহিলা কর্মীরাও বাদ পড়ছেন না। এমন দমন, পীড়নের মধ্যেও রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। অবরোধের সমর্থনে প্রতিদিনই মহানগর এবং জেলার অন্তত অর্ধশত স্পটে বিক্ষোভ মিছিল, পিকেটিং ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
দলের নেতারা অভিযোগ করেন, কোন এলাকায় সমাবেশ, মিছিল করার পর সেখানে পুলিশি অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। আশপাশের বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। যাদের বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর গায়েবি মামলায় আসামি দেখিয়ে নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা আড়ালে থেকে আন্দোলন পরিচালনা করছেন। সামনের দিনগুলোতে আড়াল থেকে তারা প্রকাশ্যে আসবেন বলে জানা গেছে।
মহানগর বিএনপির একজন নেতা জানান, নেতাদের গ্রেফতারের পর জোর করে নির্বাচনে প্রার্থী অথবা দলবদলে বাধ্য করা হবে এমন ভয় থেকে তারা আড়ালে ছিলেন। এখন দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। তারা আগামী দিনে রাজপথের আন্দোলনে প্রকাশ্যে আসবেন।
ওই নেতা জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন আর মামলা, হামলা এবং গ্রেফতারকে পরোয়া করে না। কারণ প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মীর নামে ২০ থেকে ৩০টি মামলা রয়েছে। অতএব মামলার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আন্দোলন সফল করতে হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাজপথেই থাকতে হবে। আর সেই পথে এগিয়ে যাবে বিএনপি।
বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হলেও তাদের জামিন মিলছে না। আদালতে জামিন আবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন মামলার পাশাপাশি পুরাতন মামলার আসামিদেরও জামিন দেয়া হচ্ছে না। বেশ কয়েকটি মামলায় বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এসব মামলার বিচারকাজও চলছে। তবে অনেকে আত্মগোপনে থাকায় এসব মামলায় হাজিরা দিতে পারছে না।
ফলে অনেকের বিরুদ্ধে নতুন করে হুলিয়া জারি হচ্ছে। একদিকে বাসাবাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। অন্যদিকে আদালতে থেকেও জামিন মিলছে না। এ অবস্থায় রাজপথে চূড়ান্ত লড়াইয়ের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন এসব নেতাকর্মীরা।
নগর বিএনপির নেতারা জানান, চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত মহানগরীর ১৬টি থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগ বাদী পুলিশ। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ৫১৪ জন নেতাকর্মী। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় মামলা হয়েছে ১৮টি। এসব মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৩৬৫ জন। উত্তর জেলায় ১৯টি মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৩৫০ জনকে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত