ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
লালমনিরহাটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বৃদ্ধাকে বিএসএফের মারধর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের লাশ ফেরত পেল পরিবার

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএসএফর গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত

Daily Inqilab রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) উপজেলা সংবাদদাতা

০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ডাবরী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রত্মাই সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি আরেক যুবক আহত হয়েছেন। গত সোমবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত হলেন- হরিপুর উপজেলার গেরুয়াডাঙ্গী গ্রামের আবদুল বাসেদের ছেলে জহুরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামের ছেলে মো. মকলেছ। আহত ব্যক্তির নাম ইদ্রিশ আলী। তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের বারোসা গ্রামের দুলু মোহাম্মদের ছেলে। সোমবার ভোরে ওত পেতে থাকা নারগাঁও ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে দুজনই গুলিবিদ্ধ হন।
হরিপুর থানার ওসি এ বি এম ফিরোজ ওয়াহিদ জানান, সীমান্তে দুজনের নিহত হওয়ার কথা শোনা গেলেও মকলেছ নামের এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিজিবির ঠাকুরগাঁও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম এইচ হাফিজুর রহমান জানান, বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে দুই বাংলাদেশির নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক হয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভারতে থাকা যুবকের লাশ বিএসএফ দ্রুত ফেরত দেবে। কাঠালডাঙ্গী বিওপি কোম্পানি কমান্ডার এন্তাজুল হক জহিরুল ইসলাম বলেন, ভারত সীমান্তের ভেতরে এক বাংলাদেশিকে গুলি করে বিএসএফ। পরে তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। লাশ এখনো বিএসএফের কাছে। তবে ঠিক কী কারণে বিএসএফ গুলি চালিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি বিজিবি ও পুলিশ।
এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অনুপ্রবেশ করে জোহরা বেগম নামের এক বৃদ্ধাকে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের পকেট নামক সীমান্ত এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। ভুক্তভোগী বৃদ্ধা ঐ সীমান্ত এলাকার মৃত ছকদ্দিরের স্ত্রী।
স্থানীয় বাসিন্দা নূরল ইসলাম বলেন, গতকাল দুপুরে বৃদ্ধা জোহরা বেগম ভারতীয় সীমান্তের নিকট বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কাপড় শুকাতে যায়। এ সময় ভারতের কুচবিহার জেলার শিতলকুচি এলাকার ফুলবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পের এক সদস্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ওই বৃদ্ধাকে টানা-হেচড়া ও এক পর্যায়ে তাকে মারধর শুরু করে। স্থানীয়রা তা দেখে ছুটে গেলে বিএসএফর আরো কয়েকজন সদস্য এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আবাদি জমি নষ্ট, জমির বেড়া ভাঙচুর ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। পরে খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সিংগীমারী ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সিংগীমারী বিজিবি ক্যাম্পের ইনচার্জ নাসির হোসেন জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।
ভুক্তভোগী জোহরা বেগম বলেন, আমি বাংলাদেশের অংশে কাপড় শুকাতে গেছি। এ সময় দেখি একজন বিএসএফ আমার পেছনে দৌঁড়ে আসছে। তাকে দেখে আমিও দৌঁড় দেই। কিন্ত সে আমাকে ধরে টানা-হেচড়া শুরু করে। এক পর্যায়ে মারধর শুরু করে তারা। আমার চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে আসলে তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
সিঙ্গিমারী ইউপি সদস্য সামছুল আলম বলেন, বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে এক বৃদ্ধা নারীকে মারধর করে ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়ে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি-৬১ তিস্তা ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম বলেন, বিষয়টি জানার পর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পুরো ঘটনাটি জানতে বিজিবিকে তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া বিএসএফর সঙ্গে পতাকা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
অপরদিকে শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রোকনপুর সীমান্তে নিহত বাংলাদেশি রাখাল রজিবুল ইসলাম রজিমের লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। গত সোমবার রাতে পতাকা বৈঠকের পর লাশ ফেরত দেওয়া হয়। ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান জানান, সোমবার রাত ১০টার দিকে রোকনপুর সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফর মধ্যে কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রজিমের লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ। এ সময় দুই দেশের পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে গোমস্তাপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএসএফ লাশ ফেরত দেওয়ার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত