ক্রেতা সংকটে ধুঁকছেন ফুটপাতের বিক্রেতারা
০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে গত দুদিন বৃষ্টির কল্যাণে কিছুটা শীতের আমেজ এলেও এর আগ পর্যন্ত রাজধানীতে ছিল না শীতের ছিটেফোটাও। সন্ধ্যার পর ও ভোরে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও শীতের পোশাক পরার মতো অবস্থা তৈরিই হয়নি। ফলে ভাটা পড়েছে শীতের পোশাকের বেচাকেনায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরোদমে শীত না পড়ার পাশাপাশি হরতাল, অবরোধ ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রভাবে শীত পোশাকের বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি নগণ্য। অন্যদিকে ক্রেতাদের ভাষ্য, গত বছরের তুলনায় শীতের পোশাকের দাম কিছুটা বেশি। তাদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করছেন না বিক্রেতারাও।
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায় হালকা শীতের কাপড়, পাতলা চাদর, মোজা, টুপি, কানটুপি ও শিশুদের শীত পোশাক বিক্রি হলেও উল বা মোটা কাপড়ের সোয়েটার, জ্যাকেট, ওভারকোট ও ভারী চাদরের বিক্রি একেবারেই কম। বিক্রেতারা জানালেন, ক্রেতা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। যারা আসছেন, তারাও ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন বা ঢাকার বাইরে পাঠাবেন বলেই শীতের পোশাক কিনছেন। ঢাকাতেই বসবাস এমন ক্রেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে।
এদিকে ক্রেতারা এসে কম দামি পোশাক খুঁজছেন বা গত বছরের দামে পোশাক কিনতে চাচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর পাইকারি বাজারেই দাম বেশি। ফলে তাদের বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। ফলে ক্রেতারা অতিরিক্ত কম দাম বললে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তারা।
রাজধানীর মতিঝিল, পল্টনম বায়তুল মোকাররাম গেইট, বাসাবো, সবুজবাগ, খিলগাঁও থেকে শুরু করে নিউ মার্কেট, ফার্ম গেইট, মহাখালি, গাউছিয়া, হকার্স, নুরজাহান ও সংলগ্ন এলাকার মার্কেটগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশনের দোকান ও দোকানের বাইরের একাধিক বিক্রেতা বলেন, ক্রেতা সংকটে ভুগছেন তারা। শিশুদের পোশাক ও পাতলা শীতের কাপড় বিক্রি হলেও অন্যান্য শীতের পোশাকের ক্রেতা পাচ্ছেন না। মার্কেট চত্বরের ভেতরে কিন্তু দোকানের বাইরে হকারদের দোকানগুলোতে কিছুটা বেচাকেনা থাকলেও দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি একেবারেই নেই।
মতিঝিলের কাপড় বিক্রেতা পারভেজ খান বলেন, একে শীত নাই, তার ওপর দেশের এই অবস্থা। মানুষ আসবে কোত্থেকে? মানুষের হাত খালি। টাকা যাদের হাতে আছে, তারা তো এসব মধ্যবিত্তের মার্কেটে আসে না। সাধারণ মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়ায় আমরা চাপে আছি। শীত বাড়লে আশা করি শীত পোশাকের বিক্রিও কিছুটা বাড়বে।
ফুটপাতে ব্যবসা করা বেশ কয়েকজন হকারের সঙ্গে কথা বলে ও দোকান ঘুরে দেখা যায়, শিশুদের ভারী ও পাতলা দুই ধরনের শীতের কাপড়ই বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে গেঞ্জি সেট, টুপি, মোজা ও কাপড়ের জুতা। রঙ- বেরঙের মাফলার, কানটুপি, হাতমোজার সমারোহ থাকলেও চাহিদা কম। তবে উলের চেয়ে মোটা কাপড়ের গেঞ্জি সেটের চাহিদা বেশি। হকার মাসুদ আলম বলেন, গত মাসের শেষ থেকেই শীতের পোশাক আনছি। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে বেচা-বিক্রি কম। শুক্র-শনিবার একটু বেশি বিক্রি হয়।
মতিঝিলে এলাকায় ভ্যানে শীতের পোশাক বিক্রি করছিলেন মো. জলিল মিয়া। তিনি বলেন, ভ্যানে বিক্রি ভালো হচ্ছে, তবে গত বছরের তুলনায় কম। মানুষ বেশি কিনছে বাচ্চাদের গেঞ্জি, প্যান্ট, মোজা ইত্যাদি। বড়দের জন্যও কিছুটা ভারী গেঞ্জি কাপড়ের সোয়েটার, হুডির চাহিদা বেশি। ভ্যানে তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় বিক্রি ভালো।
পুরানা পল্টন এলাকায় বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভ্যানে ও মাচায় কাপড় বিক্রি করতে দেখা যায় অনেক হকারকে। প্রায় প্রতিটি ভ্যানেই শীতের কাপড় থাকলেও ক্রেতার দেখা নেই। বিক্রেতারা ভ্যান ছেড়ে পাশে কোথাও বসে আছেন। কথা বলে জানা যায়, শীত না পড়ায় শীতের কাপড়ের চাহিদা নেই। হরতাল-অবরোধকেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে তারা দায়ী করছেন। শিশুদের গেঞ্জি সেট, সোয়েটার, জ্যাকেটের চাহিদা থাকলেও বড়দের কাপড় কম কিনছেন মানুষ।
নিউমার্কেট ও আশপাশের কয়েকটি মার্কেটে সারাবছরই ভিড় লেগে থাকে, যা বেড়ে যায় শীতের সময়। রঙ-বেরঙের ও সাধ্যের মধ্যে শীতের পোশাক কেনার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসব স্থানে আসেন। তবে এবার শীত পোশাকের বিক্রি অনেক কম বলে জানান একাধিক বিক্রেতা।
ঢাকা কলেজের বিপরীতে অবস্থিত নিউ সুপার মার্কেট, নূর জাহান সুপার মার্কেটসহ অন্যান্য মার্কেটে ঘুরে দেখা যায়, হালকা ফ্যাশনেবল শীত পোশাকের চাহিদা ও আমদানি বেশি। বিশ্বব্যপী ক্লেপপ ক্রেজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তরুণ-তরুণীদের আকর্ষণ এখন কোরিয়ান ধাঁচের পোশাকের দিকে। দোকানগুলোও এ ধরনের পোশাক রাখছে বেশি। এসব দোকানের মূল ক্রেতা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা। তবে এসব মার্কেটেও পোশাকের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। বিক্রেতারাও বলছেন, পাইকারিতে কিছুটা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই খুচরা বাজারে তারা দাম কমাতে পারছেন না।
নতুন পোশাক তো রয়েছেই, চাহিদা রয়েছে পুরনো বা ব্যবহৃত শীত পোশাকের দোকানেও। বিক্রেতারা স্বীকার না করলেও ক্রেতারাও জানেন এগুলো ব্যবহৃত পোশাক। শীত রাঙাতে ফুটপাতে ঝুলানো এসব ফ্যাশবেল শীতের পোশাকও বিক্রি হচ্ছে বেশ। মতিঝিলে ফুটপাতে পোশাক ক্রয় করতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, মানুষের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। খাদ্যপণ্য কয়ে হীমসিম অবস্থা। সে কারণে ঠাণ্ডা কম পড়ায় এখনো গরম কাপড় কেনা হচ্ছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কালিয়াকৈরে শিক্ষকের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও মালামাল লুটপাট
সিংগাইরে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে অর্থদন্ড
ঢাকায় পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
গোড়ারকান্দা দরবার শরীফের ওয়াজ মাহফিল ১৭-১৮ জানুয়ারি
সাটুরিয়ায় ৭০ কেজি জাটকা জব্দ করে এতিমখানায় বিতরন, দুই বিক্রেতাকে জরিমানা
মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সাহাদত হোসেনের ইন্তেকাল
দুর্বার রাজশাহীকে বিসিবির কড়া বার্তা
কুষ্টিয়া সীমান্তে উদ্ধার ভূখণ্ডে সীমান্ত পিলার স্থাপন করবে বিজিবি
চীনের আধিপত্য রুখতে ট্রাম্পের পদক্ষেপ
সর্বদলীয় সভায় অংশ নিবেন বিএনপির সালাউদ্দিন আহমেদ
নারী পুলিশ-আওয়ামী লীগ ডান্স পার্টি, ভাইরাল ভিডিওতে কি আছে?
আশুলিয়ায় হিজড়াদের অশ্লীল মেলা বন্ধের দাবীতে এলাকাবাসীর গণসাক্ষর
কুতুবউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে পূর্ব তিমুরের অনারারি কনসাল হিসেবে সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছেন
১৭ বছর পর কারামুক্ত বাবর
রোববার কার্যকর হবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, জানালেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী
এবার ৩০ যুদ্ধবন্দির বিনিময়ে ২৪৬৬ সেনা ফেরত পেল রাশিয়া
দেশের মানুষ আর ভোট বিহীন সরকার দেখতে চায় না - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
সর্বদলীয় সভায় অংশগ্রহণে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি
কিশোরগঞ্জে ভূয়া মানবাধিকার চক্রের ৯ সদস্য আটক
ভারতের বক্তব্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিক্রিয়া