ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
ধ্বংসকাণ্ড দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির চেয়েও ভয়াবহ : ইইউ ইসরাইলি বাহিনী গাজায় স্থায়ীভাবে থাকবে না : প্রতিরক্ষামন্ত্রী :: জাতিসংঘ তার কাজ করতে ব্যর্থ : রাশিয়া :: হিজবুল্লাহ, হামাস সহজেই ইউক্রেন থেকে অস্ত্র কিনতে সক্ষম : ইরান

গাজায় সবাই ক্ষুধাতাড়িত

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ক্ষুধা পরিস্থিতির আরও অবনতির কথা জানিয়েছে সহযোগিতা সংস্থাগুলো। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এক্সে (সাবেক টুইটার) দেয়া পোস্টে বলেছে, গাজায় সবাইকে তাড়া করছে ক্ষুধা। অন্যদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, গাজার অর্ধেক মানুষ অভুক্ত।

গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। প্রস্তাবটিতে ভেটো দেয় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র। এতে গাজায় রক্তক্ষয় থামানোর প্রয়াস ব্যর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও কয়েক শ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক হামলায় ১৮ হাজার ২০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত প্রায় ৫০ হাজার।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এক্সে দেয়া পোস্টে বলেছে, গাজা উপত্যকায় এখন অনেক মানুষ দু-তিন দিন ধরে না খেয়ে আছে। গাজায় খাদ্য, পানি ও জ্বালানিকে পদ্ধতিগতভাবে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানকার সবাইকে ক্ষুধা তাড়া করছে। গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীর বেশির ভাগই বাড়িঘরছাড়া হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় এই ছিটমহলে আশ্রয় বা খাবার পাওয়া অসম্ভব। গাজাবাসী বলছেন, বারবার পালাতে বাধ্য হওয়া লোকজন ক্ষুধা ও ঠান্ডার পাশাপাশি ইসরাইলি বোমাবর্ষণে মারা যাচ্ছেন। ত্রাণবাহী ট্রাকে লুটপাট হচ্ছে। পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া।
এদিকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিবিদ জোশেফ বোরেল বলেছেন. গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর, প্রলয়ঙ্করী’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি যে ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছিল, গাজায় তার চেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম তীরে চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারদের সহিংসতায়ও’ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আতঙ্কিত। তিনি জেরুসালেমে আরো ১,৭০০ বাড়ি ইউনিট নির্মাণের ইসরাইলি সরকারের সিদ্ধান্তেরও নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ব্রাসেলস মনে করে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। হামাসের আক্রমণটির কারণে গ্রুপটিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় স্থান পাওয়ার উপযুক্ত- এমন কথা উল্লেখ করে বোরেল বলেন যে, বেসামরিক মৃত্যু এবং বেসামরিক সম্পত্তি ও অবকাঠামো ধ্বংসের আলোকে ইসরাইলি সামিরক বাহিনীর অভিযানও আনুপাতিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে।

ইসরাইলি বাহিনী গাজায় স্থায়ীভাবে থাকবে না : ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় স্থায়ীভাবে ইসরাইলি বাহিনীর থেকে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ইসরাইলি বাহিনী চলে আসার পর গাজা নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে, তা নিয়ে আলোচনার পথ উন্মুক্ত রয়েছে। তবে গাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা ইসরাইলের প্রতি বিরূপ মনোভাবের হবে না।

সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলকে এসব কথা বলেছেন ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি আরও বলেন, গাজায় কয়েক শ হামাস সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন কিংবা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার সঙ্গে জড়িত হামাস সদস্যরাও আছেন। ইয়োভ গ্যালান্ট আরও বলেন, জাবালিয়া ও শেজাইয়াতে হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি ঘেরাও করা হয়েছে। এসব ঘাঁটিকে অপরাজেয় মনে করা হতো। বছরের পর বছর ধরে এসব ঘাঁটিকে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই এসব ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। হামাসের সদস্যদের সতর্ক করে ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করবেন, তাদের সঙ্গে একধরনের আচরণ করা হবে। আর যারা তা করবেন না, তাদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করবে ইসরাইল।

জাতিসংঘ তার কাজ করতে ব্যর্থ : জাতিসংঘ তার কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ এর সদস্য দেশগুলো কোনো বিষয়ে একমত হতে পারে না, রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় বলেছেন।

‘জাতিসংঘের কথাই ধরুন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানটি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, কারণ (সদস্য) রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান খুবই ভিন্ন। এবং এমন কিছু রাষ্ট্র আছে যারা আসলে আন্তর্জাতিক আইন ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে, তাদের ইচ্ছাকে নির্দেশ করার চেষ্টা করে এবং তাদের নিজস্ব কিছু ধারণা চাপিয়ে দেয়। যার কোনো কোনোটির আদৌ কোনো আইনি মাত্রা নেই,’ মেদভেদেভ বলেছেন। তিনি একটি উদাহরণ হিসাবে মার্কিন শাসন মতবাদ প্রদান করেছেন, ‘যা অলিখিত, এবং আদেশটি সেই নিয়মের উপর ভিত্তি করে’। ‘যখন আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করি: এটি কী, আমাদের দেখান, তারা বলে - দেখানোর মতো কিছুই নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কল্পনায় এটি এমনই হয়: আমরা যা বলি আন্তর্জাতিক আইন, আমরা যা মনে করি তা সঠিক আদেশ।’

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, গত শতাব্দীর আন্তর্জাতিক আইন ব্যবস্থার বিশাল সংকট এখন সুস্পষ্ট। ‘আন্তর্জাতিক আইন মারা যায়নি, তবে আমরা আন্তর্জাতিক আইনে একটি বিশাল সংকট দেখতে পাচ্ছি। এখন যা কিছু ছিল তা চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে কারণ জীবন পরিবর্তিত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলি যেভাবে কাজ করা উচিত সেভাবে কাজ করে না,’ মেদভেদেভ বলেন। মেদভেদেভ উল্লেখ করেছেন যে, আইনটি নমনীয় এবং এটি পরিবর্তন হতে পারে। ‘যদি আমরা একে অপরের সাথে বন্দুকের ভাষায় কথা বলতে না চাই, এবং এটি সবচেয়ে কঠিন উপায় যা কখনও কখনও এড়ানো অসম্ভব, তাহলে আমাদের আন্তর্জাতিক আইন ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে,’ মেদভেদেভ বলেছেন।

হিজবুল্লাহ, হামাস সহজেই ইউক্রেন থেকে অস্ত্র কিনতে সক্ষম : লেবানন-ভিত্তিক শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ এবং গাজা-ভিত্তিক কট্টরপন্থী ফিলিস্তিনি আন্দোলন হামাস অবৈধ কেনাকাটার মাধ্যমে ইউক্রেনে তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র সহজেই সংগ্রহ করতে পারে। সোমবার এ কথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান।
‘আপনি দেখেন, অতীতে আমরা আন্তর্জাতিক আইন এবং দখলদারের মোকাবিলা করার শর্তগুলি বিবেচনায় রেখে হিজবুল্লাহ, হামাস এবং ইসলামিক জিহাদকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করতাম,’ আবদুল্লাহিয়ান দোহা ফোরামে এই সংস্থাগুলির প্রতি তেহরানের সমর্থন সম্পর্কে একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বলেছিলেন। ‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে তারা কোথায় অস্ত্র পেতে পারে, তাহলে একটি কালো বাজার যেখানে তারা সেগুলি পেতে পারে তা হল ইউক্রেন। খুব সহজেই, খুব বেশি প্রচেষ্টা ছাড়াই তারা ইউক্রেনে (তাদের যা প্রয়োজন) পেতে পারে,’ শীর্ষ কূটনীতিক বলেছিলেন। তার মতে, হিজবুল্লাহ এবং হামাস বর্তমানে তাদের নিজস্ব ‘প্রয়োজনীয় অস্ত্র তৈরি করতে পারে’। সূত্র : দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, আল-জাজিরা, রয়টার্স, তাস।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

হাসিনার আমলে মেট্রোরেলের আয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা

হাসিনার আমলে মেট্রোরেলের আয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা

মাহিয়া মাহির দেড় মিনিটের ভিডিও ভাইরাল, কী আছে এতে

মাহিয়া মাহির দেড় মিনিটের ভিডিও ভাইরাল, কী আছে এতে

ভারতকে ইলিশ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন নেটিজেনরা

ভারতকে ইলিশ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন নেটিজেনরা

নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে

নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে

জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল

জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল

নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা

নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা

সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ

সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ

স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে