প্রতিদিন ২৮ বিএনপি নেতার কারাদণ্ড
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৭ এএম
৪৪ দিনে আদালতে বিচারের মাধ্যমে বিএনপি এবং জামায়াতের ১২৩১ নেতাকর্মীর কারাদ- দেয়া হয়েছে। ৭ নভেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৯টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে তাদের এই সাজা দেওয়া হয়। এতে গড় হিসেব দেখা যায় প্রতিদিন ২৮ জন নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে।
রাজধানীতে রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগে ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের পাঁচটি মামলায় গত বৃহস্পতিবার বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনের আরো ১৩৫ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়ের হওয়া ৬৯টি মামলায় চলতি বছরের ৭ নভেম্বর থেকে অন্তত ১ হাজার ২৩১ জন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে দ- দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো। বিনা অনুমতিতে রাস্তায় জমায়েত, নাশকতা, সম্পদের ক্ষতি করা, যানবাহনে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুর এবং পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তুরাগ থানায় করা একটি নাশকতার মামলায় বিএনপির ৯৩ নেতাকর্মীকে দুই ধারায় তিন বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শেখ সাদী এ কারাদ- দেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে কোনো আসামি উপস্থিত ছিলেন না।
বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের ৮ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির তুরাগ শাখার সভাপতি আতিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সালাম, উত্তরা পশ্চিম শাখার সভাপতি কুদরত-ই-এলাহী লিটন ও জামায়াতের তুরাগ শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তুরাগের ধউর এলাকার কাছে বিএনপি-জামায়াতের একদল নেতাকর্মী অবৈধভাবে জড়ো হয়। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে, দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় মামলা করেন উপ-পরিদর্শক মো. বুরজাহান।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার আরেকটি আদালত ২০১৩ সালের নভেম্বরে বংশাল এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার দায়ে ১৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে ৬ মাসের কারাদ- দেয়। এ মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন। রায় দেওয়ার সময় দুই আসামি আদালতে ছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার চার্জশিটভুক্ত বাকি ৪৭ আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে। মামলার বিচার চলাকালে মোট ১৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ মোহন ও যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক আলী সরকার রয়েছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর বংশালের নবাব ইউসুফ সুপার মার্কেটের সামনে একদল বিএনপি নেতাকর্মী জড়ো হন। তারা ককটেল বিস্ফোরণ, একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় বংশাল থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।
এছাড়া ২০১৮ সালের নভেম্বরে সূত্রাপুরে রাজনৈতিক সহিংসতার দায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিম ৮ বিএনপি কর্মীকে আড়াই বছরের কারাদ- দেন। মামলার বিচার চলাকালে মোট ৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বিনা অনুমতিতে রাস্তায় জড়ো হয় বিএনপির একদল নেতাকর্মী। পরে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় এসআই মো. হাফিজুল্লাহ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন।
রাজপথে বিনা অনুমতিতে জড়ো হওয়া এবং পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর হাজারীবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় গতকাল ঢাকার আরেকটি আদালত ৬ বিএনপি নেতাকর্মীকে দেড় বছরের কারাদ- দেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবির এ রায় দেন। মামলাটিতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত বাকি ৫১ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার জন্য অক্টোবর ২০১৮ সালে রামপুরা থানায় দায়ের করা একটি মামলায় ১৩ জামায়াত কর্মীকে ২ বছরের কারাদ- দিয়েছেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৪ জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেন।
উল্লেখ গত দেড় মাসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস কৃষিমন্ত্রী আবদুল রাজ্জাক এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে আন্দোলনে তারা যাতে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পরেন সে জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে এক রাতে ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে আসার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তারা সে প্রস্তাবে রাজী হয়নি। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর তোলপাড় শুরু হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথমে বলেন, ওই বক্তব্য মন্ত্রীর ব্যাক্তিগত। কিন্তু পরের দিনও কৃষিমন্ত্রী আবদুল রাজ্জাক বলেন, আমি যে তথ্য দিয়ে কথা বলেছি তাতে এক চুলও মিথ্যা নেই। অতপর ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০ হাজার নয় বিএনপির ১১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবশ্য বিএনপির ২০ হাজার নেতাকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনে আনতে ব্যর্থ হলেও দু’জন নেতার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। এদের একজন ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর আর অন্যজন এ কে একরামুজ্জামান। শাহজাহান ওমর ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। আর একরামুজ্জামন ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার একটি আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কালীগঞ্জে ছাত্রদল সভাপতি মবিন খানের স্মরণ সভা
একমাত্র সঞ্জয়ই দোষী, সাজা ঘোষণা সোমবার
চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে - ডা: শফিকুর রহমান
শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে
বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা
যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার
ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন
টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল
সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার
আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের
চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান
জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের
এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে
ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা
হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে : আমির খসরু
ইনকিলাবের কবির হোসেন কাপ্তাই প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত
সুনামগঞ্জে সীমান্তজুড়ে কঠোর অবস্থানে বিজিবি