পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ, বিচিত্র ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশা!
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
জীবনধারণের জন্য মানুষ কতো বিচিত্র জীবিকাই না বেছে নেয়। অভাবের তাড়নায় ক্ষুধা নিবারণে কোনো জীবিকাকেই ছোট করে দেখে না। এমনই এক বিচিত্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবিকা নির্বাহ করেন শেরপুর গারো পাহাড়ের হতদরিদ্র মানুষ। তা হলো লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ।
জানা যায়, গাছের ডালের বাসা থেকে বড় লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে গারো পাহাড়ের হতদরিদ্র মানুষ। পাহাড়ের বনজঙ্গলে ঘুরেঘুরে এ ডিম সংগ্রহ করেন তারা। মাছ শিকারের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান এই পিঁপড়ার ডিম। সৌখিন মাছশিকারীরা বরশিতে টোপ হিসেবে এ ডিম ক্রয় করেন। ফলে এর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বনজঙ্গলের গাছগাছালির ডালপালা-পাতা থেকে ডিম সংগ্রহে অসংখ্য লাল পিঁপড়ার কামড় সহ্য করে সংগ্রহ ও বিক্রি করেই চলে তাদের সংসার। ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর পাহাড়ে রয়েছে এমন জীবন-জীবিকা। বনজঙ্গলে ঘুরে গাছের ডাল ও পাতার আড়াল থেকে সংগ্রহ করা হয় ডিম। এ পেশায় রয়েছে প্রায় দুইশতাধিক পরিবার।
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় বিচিত্র এ পেশার রোমাঞ্চকর কাহিনী। তারা জানান, ৭ থেকে ৮ বছর আগেও কামলার কাজ বা পাহাড়ের লাকড়ি বিক্রি করতেন। কিন্তু বন বিভাগ লাকড়ি সংগ্রহ বন্ধ দেয়। কৃষিকাজ সারাবছর না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। সৌখিন মাছ শিকারীদের নিকট লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ ও বিক্রির কথা জানতে পেরে কয়েকজন মিলে সংগ্রহ করতে থাকেন ডিম। মৌসুমে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কেজি ডিম সংগ্রহ করা যায়। গাছের উঁচু ডালপালা থেকে লম্বা বাঁশ ও লাই বা টুকরির মাধ্যমে ভাঙা হয় পিঁপড়ার বাসা। অসংখ্য পিঁপড়ার কামড় সহ্য করে বাসা থেকে সংগ্রহ করেন ডিম। বড়বাসা থেকে পাওয়া যায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক থেকে দেড় কেজি ডিমও মেলে। সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয় সতর্কতার সঙ্গে। সংগৃহীত ডিম রাখা হয় কাগজের প্যাকেটে। টেবিলে জাল ও কাপড়ে ডিম থেকে আলাদা করা হয় পিঁপড়া। আলাদা করে মেপে বিক্রি করা হয় পাইকারদের নিকট। ১ কেজি ডিম বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
পাইকাররা জানান, এক যুগ ধরে এ কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা। বৈশাখ থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত ডিম বেশি পাওয়া যায়। শীতে পিঁপড়াও কমে ডিম ও কমে যায়। তখন হিমশিম খেতে হয়। এ ডিম মাছের খামারে ও বড়শিতে মাছের অধার হিসেবে ব্যবহার করেন। পাইকাররা যে দামে কেনেন তা থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে লাভে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন।
ঝিনাইগাতী পাহাড়ে গাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন। তারা এ কাজকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। দেখাদেখি অনেকেই এ কাজ করছেন। বিচিত্র এ পেশায় বাঁশ, গাছ ও ঝোপঝাড় থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয়। চাহিদা অনেক। তাই বিক্রিতে বসে হাট। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। হাটে ডিম বিক্রি করতে আসেন সীমান্তবর্তী ৩ উপজেলাসহ ময়মনসিংহ, হালুয়াঘাট ও জামালপুর জেলার বক্সীগঞ্জের গারো পাহাড়ের লোকজনও। কর্মহীন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও শতাধিক বাঙালি এ পেশায়ই সংসার চালাচ্ছেন। বর্ষায় লাল বড় পিঁপড়া শাল-গজারি গাছের মগ ডালে, পাতা ও গাছের খোড়লে (গর্তে) বাসায় ডিম পাড়ে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শাল-গজারি বন, আম, জাম, লিচুগাছসহ বিভিন্ন গাছ থেকে বাঁশের আগায় নেট জালের ঠোঙায় চলে ডিম সংগ্রহ। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ও বাঁকাকড়া গ্রামে বসে ডিমের হাট। বিকেলে ডিম সংগ্রহকারীরা হাটে জড়ো হন। পাইকাররা ১ হাজার টাকা কেজিতে ডিম কেনেন। শেরপুরসহ ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন এসব ডিম।
সেতু কোঁচ নামক পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারী বলেন, আমরা বেকার নিরুপায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও কিছু বাঙালি কাজের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশাটি বেছে নিয়েছি। ডিম সংগ্রহে অনেক কষ্ট হয়। হাতি, সাপ ও মৌমাছির আক্রমণের ঝুঁকিতো থাকেই। পিঁপড়ার কামড়ে ব্যাথার জন্য প্রতি রাতে ব্যাথার ওষুদ খেতে হয়। ব্যবসায়ী অবিনাশ কোঁচ বলেন, দরিদ্র এবং এনজিওর ঋণগ্রস্থ মানুষরাই পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহের পেশায় জড়িত।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির
নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০
লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম
বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত