অপরাধে জড়াচ্ছে বিপথগামী পুলিশ
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
২০২৩ সাল হামলা-মামলা ও গ্যাং কালচারসহ হত্যার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দুনীতিবাজ বিপথগামী সদস্যও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখলে সহযোগিতা ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের অভিযোগ ওঠে। আর্থিক দুর্নীতি অভিযোগও রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর ডিবির পরিচয়ে শাহাদৎ সরদার (৩২) নামে এক ব্যবসায়ী তুলে নিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃতরা হলো-ডিএমপির শাহআলী থানায় কর্মরত দুই এসআই তুহিন কাজী ও মশিউর রহমান তাপস।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ বাহিনীর কোন সদস্য বা কর্মকর্তা যদি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে অথবা ফৌজদারি কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত হয়- তখন সে পুলিশ না সাধারণ মানুষ এটি বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। তখন তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদি পুলিশ বাহিনী সদস্যও হয় অবশ্যই সে একজন অপরাধী। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও ডিপার্টমেন্টাল সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ফৌজদারি ব্যবস্থায় মামলা হয়, আসামি গ্রেপ্তার হয় ও বিচারের জন্য সোপর্দ করা হয়। এই ব্যবস্থা চলমান থাকবে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশে বড় ধরনের অপরাধ করে সাজা মিলছে কম। অনেক বড় অপরাধকেও ছোট করে দেখা হচ্ছে। আবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত করতে গিয়ে কোনো ‘অপরাধ’ খুঁজে পায় না পুলিশ। কথিত ইমেজ রক্ষার নামে আড়াল করা হচ্ছে পুলিশের অপরাধ কর্মকান্ড। অথচ গুটি কয়েক পুলিশ সদস্যের জন্য পুরো বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ বাহিনীর কোন সদস্য বা কর্মকর্তা চাঁদাবাজি, জমি দখল বা ছিনতাই যে কোন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং হচ্ছে। কোন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত হওয়ার পর তাকে আমরা অপরাধী হিসেবেই বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি।
এক প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পুলিশ বাহিনীর কোন সদস্য বা কর্মকর্তার অপরাধের দায় বাহিনী নেবে না। এটি অপরাধে জড়িতদের ব্যক্তিগত দায়। শুধু তাই নয়, ডোপ টেস্ট করে পুলিশ সদস্যদের মাদক সেবনের প্রমান পাওয়া গেলে চাকরিচ্যুও করা হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশের সাধারন মানুষের নিরাপত্তাসহ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জীবনবাজি রেখে কাজ করছেন। তাই বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হবে এমন কোন কার্যকলাপের সাথে জড়িত যেই থাক তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলে আইজিপি উল্লেখ করেন।
আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত পল্লবী থানায় দায়িত্ব পালন করেন এসআই জহির। তার ঝুলিতে ‘শ্রেষ্ঠ মাদক উদ্ধারকারী’ থেকে ‘শ্রেষ্ঠ বিস্ফোরক উদ্ধারকারী’, ‘শ্রেষ্ঠ চোরাই গাড়ি উদ্ধারকারী’ পুলিশ সদস্যের পুরষ্কার রয়েছে। পল্লবী থানায় গিয়ে তার টেবিলে অসংখ্য ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেটও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মুদ্রার যেমন দুটি পিঠ, এসআই জহির উদ্দিনেরও ছিল দুটি চেহারা। সাধু পুলিশের অপর পিঠে জহির ছিলেন একজন ‘অর্থ খেকো’। শ্রেষ্ঠত্বের আড়ালে তার অপরাধ কর্মকাণ্ড অনেক। যা সামনে আসে সোমবার ২৪ জুলাই রাতে পল্লবীর ১১ নম্বর আদর্শ নগরে পুলিশের অভিযানে বৈশাখী নামে এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনার পর। এসআই জহিরসহ ৩ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকা দাবির অভিযোগ তুলেছিল নিহতের পরিবার। ভুক্তভোগীদের দাবি, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বৈশাখীর সামনে তার মা লাভলীকে নির্যাতন করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তিনতলার একটি ঘরে বৈশাখীর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল।
এ ঘটনায় পুলিশের একটি বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে এসআই জহির উদ্দিনসহ তার টিমের ৩ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে একটি গোপন প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশ। যাতে বলা হয়, ঘটনার দিন জহির ও তার টিমের লোকজন সোর্স (পুলিশের ফর্মা) পাঠিয়ে লাভলীর কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে না চাইলে পুলিশ তাকে থানায় নিতে চায়। এ সময় লাভলীর মেয়ে বৈশাখী তার মাকে ছেড়ে না দিলে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। এসআই জহির ও তার টিমের সদস্যরা মাদক কারবারিদের আটক ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদকের আস্তানায় হানা দিয়ে টাকা আদায় করেন। প্রত্যেক আস্তানা থেকে তারা সপ্তাহে ৫-৬ হাজার টাকা নেন। একই থানায় দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে স্থানীয় মাদক কারবারিদের সঙ্গে জহিরের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পুলিশের অপর দুই সদস্য এএসআই ফেরদৌস, কনস্টেবল মো. মেসবাহ উদ্দিন এসব ঘটনায় তার সঙ্গী ছিলেন।
পল্লবী থানার ওসি মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর এসআই জহিরকে কাফরুল থানায় বদলি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয় তাকে। সূত্র জানায়, রাজধানীর শাহ আলী থানায় কর্মরত ছিলেন এসআই তুহিন কাজী ও মশিউর রহমান তাপস। সাধারণের বন্ধু বলে পুলিশ বিবেচিত হলেও এ দুজন ছিলেন উল্টো। তারা ছিনতাই করতেন। তুহিন-তাপস ছিনতাই করতেন ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে। গত ১৯ ডিসেম্বর তাদের গ্রেপ্তার করেছে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ। মো. শাহাদাৎ সরদার নামে এক ভুক্তভোগী মামলার ভিত্তিতে পুলিশের এ দুই সদস্য গ্রেপ্তার হন।
শাহাদাৎ তার মামলার এজাহারে জানান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এসআই তুহিন-তাপসের শিকার হন তিনি। তার কাছ থেকে একই দিনে কয়েকধাপে ৯ লাখ ১৯ হাজার ২৯ টাকা ছিনতাই করেছেন তারা। ব্যাপক মারধরও করেছেন। নিয়ে গেছেন মোবাইল ফোনও। এসআই তুহিন-তাপস ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছিলেন।
গত ৩ আগষ্টের ঘটনা। ওই দিন সকালে মাদারীপুর ভদ্রখোলার বাড়ি থেকে বের হয়ে খাদগী এলাকায় নিজের রাইচ মিলে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আমির আলী সরদার। পথে ভদ্রখোলা এলাকায় পুলিশ সদস্য তুহিন মোল্লাসহ তিন জন তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তার সঙ্গে থাকা নগদ ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় আমির আলী সরদারের স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় প্রাথমিকভাবে মামলা নিতে গড়িমষি করে স্থানীয় থানা কর্তৃপক্ষ। ওই সময় আহত আমির আলী সরদারের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, একজন পুলিশ সদস্য হয়ে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। আমরা এর বিচার চাই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির
নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০
লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম
বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত