যাত্রীবাহী ট্রেনে ভয়াবহ আগুনে শিশুসহ নিহত ৪
০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৫ এএম
রাজধানীর গোপীবাগে যাত্রীবাহী ট্রেনে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে দুই শিশুসহ চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন আরো কয়েকজন। এছাড়া আগুন থেকে বাঁচতে গিয়ে এবং যাত্রীদের উদ্ধার করতে গিয়েও কয়েকজন আহত হন। সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে ট্রেনের ৫টি বগি। গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের ধারণা এটি নাশকতা। ট্রেনটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ট্রেনের আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেনাপোল এক্সপ্রেস নামে যাত্রীবাহী ট্রেনটি বেনাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার কমলাপুরে ফিরছিলো। রাত ঠিক ৯টা ৫ মিনিটের দিকে কমলাপুরের গন্তব্যে পৌঁছার ঠিক অল্প দূরত্বে গোপীবাগে এসে ট্রেনের কয়েকটি বগিতে আগুন লাগার বিষয়টি টের পান। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা একের পর এক বগি থেকে অন্য বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, সায়েদাবাদ কিংবা তারও আগের কোনো স্টেশন থেকে আগুন লাগানো হয়েছিলো। আগুন লাগায় ট্রেনটি গোপীবাগে এসে থেমে যায়।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ট্রেনটির ‘চ’ বগির একটি সিটে প্রথমে আগুন লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন যাত্রীরা। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে যাত্রীরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় নিচে নেমে আসেন। তবে এ সময় অনেক যাত্রী ভেতরে আটকা পড়েন। শীতের কারণে ট্রেনের অধিকাংশ জানালাও ছিলো বন্ধ। আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে জানালা দিয়ে বের হবার চেষ্টা করেন অনেকে। তবে বেশিরভাগই দরজা দিয়ে বের হন। আগুন লাগা অবস্থায় ট্রেনটি থেমে যাবার পর ফাযার সার্ভিসে খবর দেয়া হয়। সদর দপ্তরসহ ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশন থেকে মোট ৮টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নির্বাপণ করে ফায়ার সার্ভিস। তাদের সাথে যোগ দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। কিন্তু ততক্ষণে ট্রেনের ৫টি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আর পুড়ে যাওয়া বগির ভেতর থেকে শিশুসহ মোট চার জনের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। আগুন থেকে বাঁচাতে সাহায্য চেয়ে যাত্রীদের চিৎকারে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। চোখের সামনে মানুষকে আগুনে পুড়ে মারা যেতে দেখেছেন হাজারো প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু তাদেরও কিছু করার ছিলো না।
সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ট্রেনে আগুন লাগার পর জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন একজন। হাত বাড়িয়েছিলেন সাহায্যের জন্য, তিনি বের হতে পারেননি। তার অর্ধেক শরীর ট্রেনের জানালার বাইরের, অর্ধেকটা ভেতরে। ওই ব্যক্তিকে জানালা থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছেন অনেকে। তাকে উদ্ধার করতে যাওয়া একজন তার শরীরে স্পর্শ করতে গিয়ে হাত গরমে পুড়ে যায়। এরপর অনেকে বাঁশ দিয়ে তাকে বের করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সবার সামনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে তার। শত শত মানুষের চোখের সামনে আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হলেন ওই যাত্রী।
আগুন কয়েকটি বগিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী যে যার মতো করে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ভয়াবহ আগুনের কাছে এ সামান্য পানি কোনো কাজে আসেনি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানিয়েছেন, মোট ৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। নিহতদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ইকবাল হোসেন বলেন, বেনাপোল এক্্রপ্রেস ট্রেনে নিহতদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পর পরই পুলিশ, র্যাব ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।
ট্রেনে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ হাসিব (৩০) নামের একজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের আট শতাংশ পুড়ে গেছে।
এদিকে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের শিকার বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৫) ট্রেনটি গতকাল রাত পৌণে ১২টায় আবার বেনাপোল যাবার কথা থাকলেও ছেড়ে যাবার মতো প্রস্তুত ছিলোনা। সূত্র জানায়, বেনাপোল এক্সপ্রেসের রেক চায়নিজ কোচের। ট্রেনের পাওয়ার কারসহ বেশ কয়েকটি কোচ পুড়ে গেছে। ঢাকায় কোনো চায়নিজ কোচ অতিরিক্ত নেই, পাওয়ার কারও নেই। রাত ১১টায়ও দেখা গেছে পাওয়ার কার থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে লোকোমোটিভ রেক থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
অপরদিকে ডেমরায় একটি বাসে আগুন এবং সেগুন বাগিচায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও রাত সোয়া ৯টার দিকে ডেমরার আমুলিয়ায এলাকায় রমজান পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ডেমরার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে ফায়ার কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্থ্রণে আনে।
এর আগে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বারডেম-২ হাসপাতালের গলিতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেগুনবাগিচায় বারডেম-২ হাসপাতালের গলি থেকে কয়েকজন ঝটিকা মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই এলাকায় পুলিশের টহল টিম কাজ করছে বলে জানান আখতারুল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা
জয়সয়ালকে ফেরালেন নাহিদ
সরকারের শিক্ষা-গণমাধ্যমসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ
তাসকিনের শিকার রোহিত
কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার হলো ধামরাইয়ে
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে চাটমোহরে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন
বায়তুল মোকাররমের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে যা বললেন খতিব রুহুল আমীন
গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক, সাবেক এমপি লুৎফুন নেসা হোসেন মারা গেছেন।
দেড়শর আগেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস
ঝিনাইদহে ৮ মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী
পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ
গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা নিয়ে অভিনেত্রী মেহজাবীনের পোস্ট
গোয়ালন্দে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
হবিগঞ্জে ৫ সাংবাদিক নাশকতার মামলায় আসামি
ঢাবিতে বর্বরোচিত গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের জানাজা শেষে পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন
তারাকান্দায় প্রাইভেটকার ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত-২
রাঙামাটিতে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকড
দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১