ঘুমিয়ে ছিলাম বলে ২৮ শতাংশ বলে ফেলেছিলাম

সিইসি

ঘুমিয়ে ছিলাম বলে ২৮ শতাংশ বলে ফেলেছিলাম

স্টাফ রিপোর্টার

১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

ঘুমাইয়া ছিলাম, ছিলাম ভালো জেগে দেখি বেলা নাই...। বাউল শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়ার বিখ্যাত এই গানের কথা মনে পড়লো প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্য শুনে। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট পড়ার হার নিয়ে সিইসির দেওয়া বক্তব্য নিয়ে দেশ-বিদেশে শুরু হয় বিতর্ক। নির্বাচনের দিন বিকেল চারটায় ভোট শেষ হওয়ার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিইসি শুরুতে বলেন, ভোট পড়েছে ২৮ শতাংশ। পরে তাকে পাশ থেকে একজন সংশোধন করে বলেন, সংখ্যাটি ৪০ শতাংশ হবে। সিইসি তখন ভোটের হার ৪০ শতাংশ হতে পারে বলে জানান। ভোট পড়ার হার নিয়ে তার দেওয়া এই বক্তব্য নিয়ে মুহূর্তেই বিতর্ক শুরু হয়। এই বিতর্ক এড়াতে সিইসি তার এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। নির্বাচনের পরদিন (০৮ জানুয়ারি) ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন।

খালেদ মুহিউদ্দীন প্রশ্ন করেন, নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার নিয়ে একটি প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে। আমরাও যখন বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরছিলাম, তখন কিন্তু দেখছিলাম বিশেষ করে ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে...আমরা যে কয়টা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম- বনানী, মোহাম্মদপুর, শাহীনবাগ বা উত্তরার কিছু কেন্দ্রে খুব কম ভোট পড়েছিল ২-৩ শতাংশ এর মতো দুপুর ১২টা, সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। সেটি যে ৪০ শতাংশ এ আসলো বা ৪০ শতাংশ এর কিছু বেশি আসলো, এটি কি আপনার কাছে একটু বেশি মনে হয়?

এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ঢাকার ১০টি, ২০টি বা ৫০টি সেন্টার ঘুরে আপনি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন না। আরবান এলাকাতে এবং রুরাল এলাকাতে ভোটের চিত্রটা ভিন্ন। আর, এই বিষয়টি নিয়ে আমার মনে হয় বিতর্কের তেমন অবকাশ নাই। এখনও যদি কেউ মনে করেন যে ভোটের হার আসলে অনেক কম, আমাদের ভোটের হার সবশেষে হয়েছে ৪১.৮ শতাংশ। আমি যখন ফোরটি পার্সেন্ট বলেছিলাম, প্রথম বলে ফেলেছিলাম ২৮শতাংশ, সেটা হচ্ছে দুটা বা তার আগে, আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম।

পরে যখন সাড়ে চারটার দিকে ইন্টারভিউ হয়, আমাকে সংশোধন করে দিলো, না এখন পর্যন্ত ড্যাশবোর্ডে তথ্যগুলো পুরোটা আসেনি। আংশিক যেটা এসেছে ওখান থেকে মনে হচ্ছে ৪০ শতাংশ। চূড়ান্ত পার্সেন্টেজটা শুধু তখনই নিরুপণ করা সম্ভব যখন সকল আসনের ফলাফল ঘোষিত হয় এবং সকল প্রার্থীর ভোটগুলো যোগ করা হয়। ৩০০ ইন্টু সেভেন হতে পারে। ৩০০ গুণন ৫ হতে পারে। সেটা কিন্তু মোটেই কঠিন কোনো বিষয় নয়। কারণ সেটি হচ্ছে, এক্সেলে যদি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ফলটা, টোটালটা বেরিয়ে আসে। আবার বিভাজক দিয়ে ভাগ করা হলে সঙ্গে সঙ্গে পার্সেন্টেজটা বেরিয়ে আসে। এখন ২৯৮টি নির্বাচনের যে ফলাফল সেটার কিন্তু পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখন আছে। কারো যদি মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে, সেটা এখনও পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। এটা কি আসলে ৪১.৮ শতাংশ? না বেশি না কম? এটা নিয়ে আমার মনে হয় বিতর্কের কিছু নেই, কোনো ইস্যু এটা নয়।

আত্মপক্ষ সমর্থন করে ডয়েচে ভেলেতে দেওয়া সিইসির এমন বক্তব্য শুনে বাইল শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়ার সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে পড়ে। সারা দেশে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে আর সিইসি দুপুরে আরামে ভাত ঘুম দিচ্ছেন। তার পর ঘুম থেকে জেগে দেখেন আর বেলা নাই। নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। তখন তিনি নির্বাচন কেমন হয়েছে না হয়েছে সেটা না জেনেই তড়িঘড়ি করে বলে ফেলেছেন ২৮ শতাংশের কথা। কিন্তু তার এই ঘুমের মধ্যে যে কত কিছু ঘটেছে সেটা তো তিনি জানেন না। তাই পাশ থেকে অন্য একজন সংশোধন করে দিল।

বিভাগ : জাতীয়