সরকারের অকথ্য নির্বাচন ও পৈশাচিক অত্যাচারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাবন্দী হয়ে এখনও এক দম বন্ধ করা জীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সমস্ত মানবিক মৌলিক অধিকার হরণ করে নিপীড়ণের সর্বোচ্চ মাত্রা প্রয়োগ করা হয়েছে। কারাবন্দী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা না পেয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলসহ আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপ এবং গণতান্ত্রিক বিশ^ বাংলাদেশে বিরোধীদের ওপর সরকারী নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও রক্তপিপাসু ফ্যাসিস্ট সরকার সেগুলোকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। কয়েক সপ্তাহে কারাহেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ। হিটলালের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের দুর্বিষহ উৎপীড়ণের সাথেই কেবল শেখ হাসিনার কারাগারের মিল পাওয়া যায়। রিজভী অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কারাবন্দী সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিরোধীদের ওপর বুলডোজার চালানোর পর নজিরবিহীন উদ্ভট ডামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে চালু হয়েছে এক ব্যক্তির শাসনব্যবস্থা। গোটা বাংলাদেশ এখন তার হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। উত্তর কোরিয়া মডেলের এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার ছিলেন নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। কেউ ডামী, কেউ মনোনীত, কেউ নৌকা, কেউ ভোট জমাতে হায়ারকৃত-সবাই তার প্রার্থী। কোন আসনে কে পাশ কে ফেল সব তার হাতে পূর্বনির্ধারিত। ২৮ পারসেন্ট থেকে ৪১ পারসেন্ট ভোট কাউন্ট করার ফর্মূলাও তার। যদিও ভোটার উপস্থিতি ছিল মাইক্রোস্কোপিক। সুতরাং শেখ হাসিনার এক হাতের মুঠোয় যে সবকিছু তা প্রমাণ করে বিশ্বে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রের নতুন মডেল হয়ে উঠেছেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রতারণা, শঠতা, মিথ্যাকে যদি কোনো শিল্প ধরা হয় তাহলে শেখ হাসিনা সেই শিল্পের নিপুন কারিগর। তার এই নব উদ্ভাবিত বাকশালের লেটেস্ট ভার্সনকে গোটা দেশসহ বিশ্ববাসী ছুঁড়ে ফেলেছে। ভোটারবিহীন ডামী নির্বাচন, ফলাফল, ভোটের হার বাড়ানোর ছেলেখেলা-তামাশা-নাটক সবকিছুই নিবিড়ভাবে অবলোকন করেছে সমস্ত পৃথিবীবাসী-মিডিয়া-সরকার-পর্যবেক্ষকগণ। গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে কঠোর ভাষায় এই ডামী ভোট, ডামী সরকার বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবী উচ্চারিত ও জোরদার হচ্ছে। বিশ্বের সমস্ত খ্যাতিমান পত্র পত্রিকা, অনলাইন-ভিজুয়াল মিডিয়া ভোট বর্জনের এই তথাকথিত নির্বাচনের নামে কি কেলেংকারি ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনার মাফিয়াচক্র তা প্রামাণ্য চিত্রসহ তুলে ধরছে প্রায় প্রতিদিন। সেখানেও শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের একদলীয় শাসন থেকে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তা তুলে ধরে জনগণকে সামনে কি ভয়ংকর বিপদের মুখে ফেলতে চলেছেন তার আশংকা ব্যক্ত করা হচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন-হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের প্রায় সমস্ত মানবাধিকার সংগঠন, অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী সিনেটর ডেভিড শুব্রিজসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক-রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা শেখ হাসিনার নির্বাচনকে কারচুপিপূর্ন নির্বাচন বাতিল করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। সুতরাং তামাশার নির্বাচন বাতিল ও রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ধ্বণিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ডামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমিয়ে থেকে নির্বাচনের নামে যেই সংসদের জন্ম দিয়েছেন, আগামীতে দেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠিত হলে জনগণের কাছে প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে হবে। এই ‘ডামি নির্বাচনে’র মাধ্যমে গঠিত ‘ডামি সরকারে’র এক ডামি মন্ত্রী বলেছেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করা হবে। এই কথার জবাবে বলতে চাই, যে দেশে ‘ডামি নির্বাচনে’র মাধ্যমে ‘ডামি সরকার’ আর ‘ডামি মন্ত্রী’ থাকে সেই দেশের অনিষ্ট করতে কোনো ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন হয়না। জনম্যান্ডেটহীন ‘ডামি সরকার’ই যথেষ্ট দেশকে প্রভুদের পদানত ও ধ্বংস করতে।

রিজভী বলেন, একজন মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতালিপ্সার কারণে দেশ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উধাও হয়ে গেছে। মানুষের ভোটের অধিক লুন্ঠন করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণই নয় বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এখন বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের আহবান জানিয়েছে। ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন যৌথ বিবৃতি দিয়ে গত ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচন’ নিয়ে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তুলেছে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের কাছে ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের মতোই অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়নি। বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দল এবং দেশের প্রায় প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষ ৭ জানুয়ারির ভুয়া নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে। এরপরও নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি, ২০১৮ সালের মতো রাতের বেলায়ও ব্যালটে সিল মারার মতো অপকর্মের আশ্রয় নিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের ‘ডামি প্রার্থীরা’ই এই অভিযোগ করেছেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, ৭ জানুয়ারির ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন নতুন প্রজন্মের সামনে ৭৩ সালের নির্বাচনের জাল জালিয়াতি আর সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, ভোট ডাকাতি মনে হয় আওয়ামী লীগের বংশানুক্রমিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে ডামি সরকার অবৈধ ক্ষমতার উষ্ণতা অনুভব করলেও বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীতে কাঁপছে কৃষক শ্রমিক দিনমজুর নিম্ন আয়ের মানুষ। মানুষ যেখানে একবেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে কিভাবে শীতবস্ত্র জোগাড় করবে? ডামি মন্ত্রীরা কি খেয়ে মন্ত্রিত্ব উদযাপন করবেন পত্রপত্রিকায় সেই তালিকা প্রকাশ করলেও বর্তমানে দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ এখন অর্ধাহারে অনাহারে। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিত্তবানদেরকে অসহায় শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।