মন্ত্রিসভা ও সংসদে ব্যবসায়ীদের আধিক্য
১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদকাল শুরু হয়ে গেছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে নতুন সরকারের পথচলা। কিন্ত রাজনীতিকদের এমপি, মন্ত্রী হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রিসভা এবং সংসদ কার্যত ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২০০ জন সদস্যই ব্যবসায়ী। আর ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ১৭ (৪৩.২৪ শতা?ংশ)। কিন্তু যাদের মন্ত্রী, এমপি হওয়ার কথা সেই রাজনীতিকের সংখ্যা খুবই কম। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, সংসদে ও নতুন মন্ত্রিসভাতে ব্যবসায়ীদের আধিক্য অব্যাহত রয়েছে। কারণ এর প্রায় অর্ধেক সদস্যই পেশা হিসেবে ব্যবসাকে উল্লেখ করেছেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ১৯৭৩ সাল থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিবারই ব্যবসায়ী সদস্যের সংখ্যা বাড়ছে। পক্ষান্তরে রাজনীতিকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। বলা যায় মন্ত্রিসভা ও সংসদে পেশাদার রাজনীতিকদের অংশগ্রহণের সংখ্যা কার্যত সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে।
সংসদের পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায় প্রতিবছর জাতীয় সংসদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমপি হওয়ার সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে। ১৯৭৩ সালের সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫৪ জন এমপি ছিলেন ব্যবসায়ী। যা শতকরা হিসেবে ১৮ শতাংশ। অতপর ’৭৯ সালে শতকরা ২৬ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে ৪২ শতাংশ, ২০০১ সালে ৫৮ শতাংশ, ২০০৮ সালে ৫৭ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৫৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬২ শতাংশ ও ২০১৪ সালে ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সুত্র মতে, নতুন মন্ত্রিসভার ৩৭ সদস্যের মধ্যে ১৬ জনই ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে ৭ জন কৃষিকাজকে তাদের অন্যতম আয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাকী ৫ জন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী আইনজীবী এবং ২ জন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী কৃষক। ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভায় মধ্যে ২২ জন ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০১৪ সালে ৫৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ২১ জন ব্যবসায়ী ছিলেন।
জানতে চাইলে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রাজনীতিকদের সংসদে যাওয়ার সুযোগ কমে গেছে। সংসদকে রীতিমতো ব্যবসায়ীদের আড্ডাখানা বানানো হয়েছে। একজন প্রার্থীল মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে যে টাকা লাগে সে টাকা খবর করার মতো অনেক নেতার সংগতি নেই। এ ছাড়া কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয় নির্বাচনে। এ জন্য এমপিপদকে বড় ব্যবসা হিসেবে গণ্য করায় সংসদে রাজনীতিকের সংখ্যা কমে গেছে।
নির্বাচন কমিশন ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) থেকে জানা যায়, নতুন মন্ত্রিসভার যেসব সদস্যরা নির্বাচন কমিশনে তাদের পেশা হিসেবে ব্যবসাকে উল্লেখ করেছেন, তারা হচ্ছেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান, পরিকল্পনামন্ত্রী মো. আবদুস সালাম, প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান। ব্যবসা এবং কৃষিকাজ পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কৃষিমন্ত্রী উপাধাক্ষ্য আবদুস শহীদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আইন পেশার কথা উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। মন্ত্রিসভার ৩ জন সদস্য সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। এ ছাড়াও চিকিৎসক, সাবেক আমলা, শিক্ষক ও একজন কূটনীতিক রয়েছেন এবারের মন্ত্রি সভায়।
মন্ত্রিসভার তালিকায় দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৯ জন, সিলেট বিভাগের ৩ জন এবং বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ থেকে ২ জন করে যায়গা পেয়েছেন। এর পাশাপাশি ৫ জনকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দিকে তাকালে দেখা যায় এবার ২০০ ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। নাগরিক অধিকার সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে ১৯৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১৪২ জন (৫৮ দশমিক ৭১ শতাংশ) ছিলেন ব্যবসায়ী। সুজনের তথ্য ও নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা বিজয়ীদের বেসরকারি তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে বিজয়ীদের মধ্যে ব্যবসায়ী ১৯৫ জন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৪৫ জন, জাতীয় পার্টির ৯ জন, জাসদের ১ জন, কল্যাণ পার্টির ১ জন এবং স্বতন্ত্র ৩৮ জন রয়েছেন। সুজনের দেয়া তালিকার বাইরে আরো অন্তত ৬ জন ব্যবসায়ী নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলে বিশ্লেষণে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে ৫ জন আওয়ামী লীগের ও ১ জন স্বতন্ত্র। সব মিলিয়ে অন্তত ২০০ জন ব্যবসায়ী এবার জাতীয় সংসদে সদস্য হিসেবে বসতে যাচ্ছেন। এর বাইরে নির্বাচিত যে ৪০ জন নিজেদের রাজনীতিবিদ ও কৃষিজীবী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকের মূল পেশা ব্যবসা।
তবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসেব যারা এমপি হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ঢাকা- ১ আসনের এমপি শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান, রংপুর-৪ আসনে এমপি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে জয়ী হন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ১৯৮৫ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি ব্যবসায় যুক্ত হন টিপু মুনশি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম সেপাল গ্রুপ। ঢাকাণ্ড৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, ঢাকা-৩ আসনের এমপি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, রেনেসাঁস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মো. শাহরিয়ার আলম (রাজশাহী-৬), পোশাক খাতের বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী (খুলনা-৪), ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম (চট্টগ্রাম-৮), শাশা ডেনিমের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫), মণ্ডল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মমিন মণ্ডল (সিরাজগঞ্জ-৬), নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. খসরু চৌধুরী (ঢাকা-১৮), তুসুকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়জুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫), ফেবিয়ান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯), স্প্যারো গ্রুপের চেয়ারম্যান চয়ন ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৬), স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান (চট্টগ্রাম-১৬), গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (নারায়ণগঞ্জ-১), সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন (কুমিল্লা-৬), আফিল গ্রুপের শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১), জেমকন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ (যশোর-৩) প্রমুখ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
এদিকে ময়মনসিংহ-৩ আসনের স্থগিত ভোট শেষে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নিলুফার আনজুম। গতকাল শনিবার ১৩ জানুয়ারি স্থগিত একটি কেন্দ্রে এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ওই আসনে ভোট হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ছাগলনাইয়ায় দুই হাত কাটা যুবকের লাশ উদ্ধার
কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লিটন, সম্পাদক মামুন
খুবি কেন্দ্রে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে নানা সিদ্ধান্ত
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের আদেশ স্থগিতে ১৮টি রাজ্যের মামলা
টেলিকমে অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স বাতিল করা হবে : বিটিআরসি চেয়ারম্যান
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাইভেট কারচালক নিহত
খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য
আনিসুল হকের আয়কর নথি জব্দ
সাবেক ক্রিকেটার দুর্জয়ের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ
বন্দরে বকেয়া বেতন দাবিতে পারটেক্স শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি
অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে ইস্ট এশিয়ান ইউনিভার্সিটি : ইউজিসি
ধামরাইয়ে ৩ দিনেও সন্ধান মেলেনি ইজিবাইক চালকের
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালিত
গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা -নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক
বিদ্যুৎ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিল পবিস কর্মীরা
উত্তরা উলামা আইম্মা পরিষদের কমিটি গঠন
ডাকাতির ভিডিও ভাইরাল হলেও অধরা রূপগঞ্জের রুবেল
সিনিয়র-জুনিয়র সংঘাতের দায়ে অভিযুক্ত দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
পদ্মা ব্যাংকের ১২২তম পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত
ভারতের ছত্তিশগড়ে বন্দুকযুদ্ধে ২০ মাওবাদী নিহত