অপ্রস্তুত স্টেশনে কক্সবাজার রেল
১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম

অবকাঠামো সুযোগ সুবিধা ছাড়াই পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রেল চলাচল করছে। বহুল কক্সিক্ষত এই ট্রেন চলাচল শুরুর দুই মাস পার হলেও নয়টি স্টেশনের কোনটিরই নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। সম্পন্ন হয়নি ইয়ার্ডসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন চলাচলের জন্য অপরিহার্য এসব অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় অনেকটা জোড়াতালি দিয়েই চলছে ট্রেন। কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে এক জোড়া ট্রেন দিয়ে শুরু হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল। সম্প্রতি পর্যটক এক্সপ্রেস নামে আরো এক জোড়া ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ওই দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালুর পর এবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচলেরও উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে এই ট্রেন চালুর প্রস্তুতি চলছে।
ট্রেনটিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মাঝখানে সব স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে। অথচ কোন স্টেশনই এখনও প্রস্তুত হয়নি। জানা গেছে, নতুন ট্রেনটিতে ১২টি বগি থাকবে। তাতে ৭২০ জন যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবেন। ট্রেনটি দিনে দু’বার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার আসা-যাওয়া করবে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের যাত্রী তথা পর্যটকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজে ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের রেল পথ উদ্বোধন করেন। ডিসেম্বরে শুরু হয় রেল চলাচল। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এ রেলপথের দূরত্ব হচ্ছে ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু হয়ে পাহাড় ও নদীপথ দিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত এই রেললাইন চলে গেছে। কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনসহ সব মিলিয়ে নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে রেলপথটিতে। এর মধ্যে ছয়টি স্টেশনের কাজ গত অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বাকিগুলোর কাজ শেষ হওয়ার টার্গেট ছিল ডিসেম্বর মাসে।
কিন্তু এখনও কোন স্টেশনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনসহ কয়েকটি স্টেশনের ভবন নির্মাণ হলেও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামো নির্মাণ এখনও বাকি। কক্সবাজার স্টেশনের ভেতরেও অনেক কাজ বাকি আছে। ঝিলংজা এলাকায় ২৯ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে ছয়তলা ভবনের আইকনিক রেলস্টেশন। এক লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গপুট আয়তনের এই রেলস্টেশন ভবন ঝিনুক আদলে তৈরি।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই স্টেশনে থাকছে তারকা মানের হোটেল, রেস্তোরাঁ, লকার, শপিং মলসহ বিশ্বমানের সব সুবিধা। এসব কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। এসকেলেটর চালু না হওয়ায় যাত্রীদের স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে হচ্ছে। এসব সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। অন্যান্য স্টেশনেরও ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। কাজে ধীরগতির কারণে নির্মাণাধীন স্টেশনগুলোতে বেহাল অবস্থা। এসব স্টেশন অতিক্রমকালে ধুলোবালিতে সয়লাব হয়ে যায় ট্রেনের বগি।
ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। জানা গেছে, ট্রেনের ক্লিনিং, ওয়াশিং ও মেরামতের কোনো সুযোগ নেই। ইঞ্জিন ঘুরানোরও ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে ঢাকা থেকে যাওয়া ইঞ্জিনটি উল্টোদিকে কক্সবাজার থেকে রওয়ানা দেয়। যেকোন সময় কোন ইঞ্জিন বিকল হলে তা মেরামত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ও ক্রেন নিয়ে যেতে হবে। ইঞ্জিন, বগি, রিলিফ ট্রেন ও ক্রেন রাখার কোনো শেড তৈরি হয়নি এখনও। রেল পুলিশের থানা, ফাঁড়ি ভবন নির্মাণও হয়নি।
সব কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সবুক্তগীন ইনকিলাবকে বলেন, স্টেশন ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। কিছু অবকাঠামো নির্মাণ এখনও বাকি আছে। তবে এসব স্টেশনের যাবতীয় কার্যক্রম চলছে। আগামী মার্চের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে রেল সূত্রে জানা গেছে, রেললাইন স্টেশন ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও যাত্রীদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করার মত বেশকিছু অবকাঠামো প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রেল যোগাযোগ শুরুর পর রেলওয়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে এ মেগা প্রকল্পের এসব ঘাটতি চিহ্নিত করেন।
আর এ প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএমের কাছে বেশকিছু সুপারিশ পেশ করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম)। এতে দোহাজারী-কক্সবাজার স্টেশন ইয়ার্ড, ক্যারেজ ডিপো, লোকোশেডের অবকাঠামো সুবিধা বাস্তবায়নে ১৩ ধরনের অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে ইঞ্জিন ও কোচ ওয়াশিং, ক্লিনিং ও মেরামতের জন্য ওয়াশফিট ও ক্যারেজ ডিপো, ক্রেন ও রিফিল ট্রেন রাখার লোকো শেড, ইয়ার্ড মাস্টার, সান্টিং পোর্টার ও জরুরি মুহূর্তে কাজ করতে কর্মস্থলে থাকা কর্মচারীদের জন্য ইয়ার্ড মাস্টার ভবন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারাক, ইঞ্জিনে তেলের জন্য দুই হাজার লিটার ধারণক্ষমতার একটি রিজার্ভার, ডিপোর ভেতর একটি সিকলাইন নির্মাণ, ইঞ্জিন ঘুরাতে টার্ন টেবিল নির্মাণের পাশাপাশি দোহাজারী-কক্সবাজারে স্টেশনের অন্তবর্তীকালীন সিবিআই সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় আট হাজার কোটি টাকা থাকলেও পরে তা ১৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। বারবার বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

উজানে স্বস্তি, ভাটিতে পানিশূন্যতা প্রভাব

আলফাডাঙ্গায় আটকের ৪ ঘন্টা পর থানা থেকে গায়েব আওয়ামী লীগের নেতা!

আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চায় জুলাই ঐক্য

মানবিক করিডোরের ফাঁদে পা দিলে ইউক্রেনের পরিণতি বরণ করতে হবে ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্ট

এক কোটি ১০ লাখ লিটার রাইস ব্রান তেল কেনার অনুমোদন

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ , শিশুসহ আহত ১০

আলফাডাঙ্গায় অর্ধশত চুল্লিতে জ্বলছে তামাক, পুড়ছে কাঠ: বিষাক্ত নিকোটিনে বিপর্যস্ত পরিবেশ দেখার কেউ নেই!

জিএসটি গুচ্ছভূক্ত ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানবিক উন্নয়নের মাধ্যমেই প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব’ - প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

সাদা বলের নতুন কোচ পেল পাকিস্তান

ঢাবিতে ছাত্রদল নেতার উদ্যোগে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা চালু

শ্রীপুরে জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৪, পুলিশ সদস্য কর্তৃক কৃষকের কব্জি বিচ্ছিন্ন

রাজশাহীতে বিএসসি-ডিপ্লোমা নার্সিং শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ১০

ব্রাজিলে আনচেলত্তি সফল হতে পারেন যে তিন কারণে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮ দফা দাবী আদায়ে আগামীকাল রেলপথ অবরোধের ঘোষণা

কেন বিলুপ্ত করা হল এনবিআর, জানাল সরকার

ছাতকে প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধের মৃত্যু

মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ফাজিল পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ শতাংশ

তীব্র গরমে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা