নির্বাচনে ‘পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ হয়েছে : টিআইবি
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ অ্যাখ্যা দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনটি বলেছে, এই পাতানো নির্বাচন গণতন্ত্র এবং ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। ঢাকার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক গবেষণার এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। টিআইবি নির্বাচন ‘অবাধ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক’ হয়নি মন্তব্য করে বলছে, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিসহ এই নির্বাচনের সার্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত; গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ও স্বপ্নের সাথে সাংঘর্ষিক। জনগণে এ নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ২০২৩ সালের জুন থেকে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে টিআইবি। দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫০টি নির্বাচনি আসন বাছাই করে প্রত্যেক আসনে প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ওপর তথ্য সংগ্রহ এবং সরাসরি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। গবেষণা পরিচালনা করেছেন মাহ্ফুজুল হক, নেওয়াজুল মওলা ও সাজেদুল ইসলাম।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গবেষণাটির প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাস পর্যন্ত এটি চলবে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে এবং পুরো তথ্য নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পরবর্তীতে উপস্থাপন করা হবে। তিনি আরো বলেন, টিআইবি ইলেকশন মনিটরিং সংস্থা না। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বলতে যা বুঝায়, সেই কাজটি আমরা করি না। নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং এর মধ্যে যারা অংশীজন আছেন, তাদের ভূমিকা, তারা কতটুকু আইনসম্মতভাবে তাদের ভূমিকা পালন করেছে, তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছে, সেটি ট্র্যাকিং করেছি আমরা।
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মাহ্ফুজুল হক বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মিদশা প্রকটতর হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় অব্যাহত রাখার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে; যার আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেজ্ঞ হয়তো হবে না, বা হলেও টিকবে না। তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে গত ৭ জানুয়ারির ভোটে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। একটি আসনে এক প্রার্থীর মৃত্যুতে ভোট স্থগিত করা হয়। নির্বাচনে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন; যাদের ডামি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামানো হয় এবং এদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আসন ২৩টি থেকে কমে হয়েছে ১১। পাতানো নির্বাচন হিসেবে জাতীয় পার্টির ২৫৬ আসনে সমঝোতা করেছিল। একটি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ, একটিতে বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি। বাকি একটিতে জয় পেয়েছে কল্যাণ পার্টি।
মাহ্ফুজুল হক বলেন, অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের ‘স্বতন্ত্র’ ও অন্য দলের সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের যে পাতানো খেলা সংগঠিত হয়েছে, তাতেও ব্যাপক আচরণবিধি লংঘনসহ অসুস্থ ও সহিংস প্রতিযোগিতা হয়েছে। যার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বাইরে রাজনৈতিক আদর্শ বা জনস্বার্থের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আইনগত সীমারেখার নামে কখনো অপারগ হয়ে, কখনো কৌশলে, একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনও অনুরূপভাবে একই এজেন্ডার সহায়ক ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে বা লিপ্ত থেকেছে।
২৪১টি আসনে নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি’ মন্তব্য করে মাহ্ফুজুল বলেন, সারা দেশের অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকা এবং প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টদের হুমকির মাধ্যমে অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। স্বল্প ভোটার আসা ও ডামি লাইন তৈরি, বিভিন্ন আসনে অন্য প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভোটের আগেই ব্যালটে সিল মারা, ভোট চলাকালে প্রকাশ্য সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ, জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
প্রতিবেদনে ভোট পড়ার হার নিয়ে বলা হয়, ভোটের দিন বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হয় নির্বাচন কমিশন থেকে। পরবর্তী এক ঘণ্টায় আরও ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অনিয়মের অভিযোগে ১৩টি আসনে ৪২ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে। এদের মধ্যে ৫ জন জাতীয় পার্টি প্রার্থী, ৫টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। নির্বাচনের আগের দিন রাতে ১৪ জেলায় ২১টি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে দুবৃর্ত্তরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে