ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

‘প্রচণ্ড শীতে অজিরনদের পাশে কেউ নেই’

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৬ এএম

‘জারত (ঠান্ডা) মরি যাবার নাগচি বাহে। হামাকগুলাক (আমাদের) দেইখব্যার (দেখার) কায়ো (কেউ) নেই। আইত আইলে হামারগুলোর মরণদশা। আইতোত এখনা (রাতে দুইটা) খেতা গাত দিয়া কোকড়া নাগিয়া থাকোং (কাঁথা গায়ে দিয়ে থাকি), ঠান্ডাতে ত্যাই ঘুমে ধরে না। একজনে একটা চাদর দিছে তাহে (সেটা) দিনোত (দিনে) গাত (গায়ে) দিয়া থাকোং (থাকি)। খাবারও মোর (আমার) জোটে না দু’বেলা বেলা। খুব কষ্ট মোর (আমার)। হামাকগুলাক কেউ কিছু দেয় না’। প্রচ- শীতে কাঁপতে কাঁপতে এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের সরদারপাড়া এলাকার ভূমিহীন মৃত জহুর উদ্দির স্ত্রী ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা অজিরন বেওয়া। তিনি আরো বলেন, ‘এই ঠান্ডাত খুব কষ্টোত আছোং (আছি)। কাউও (কেউ) খবরও নিবার (নিতে) আইসে নাই। শুনছোং (শুনেছি) মেলা মানষে (মানুষ) নাকি কম্বল পাইছে। মোকে (আমাকে) একটা কাইয়ো (কেউ) কম্বল দ্যায় নাই। এর বাড়ি, ওর বাড়ির খাবার খ্যায়া (খেয়ে) বাঁচি আছোং (আছি)।
শুধু অজিরণ বেওয়া নয়, তিস্তার চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রচন্ড শীতে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে। তিস্তা নদীর নীলফামারীর ২৫ লালমনিরহাটে ৬৪, কুড়িগ্রামের শতাধিক ও রংপুরের ১৮টি চরে বসবাসকৃত মানুষজন যেন বড়ই কাহিল। তিস্তা নদীপারের ৭০ বছর বয়সী এরশাদ আলী বলেন, নদীপারের ঘরোত হু হু করি বাতাস ঢোকে। ঠান্ডায় সারা রাইত নিন (ঘুম) ধরে না। জাহেদা বানু বলেন, গত বছরের মধ্যৈ মাঘ মাসে এমন শীত ছিল না। এই বার মাঘের জারে বাঘ কান্দে তো না মাইষি কান্দে এই বার। চরের মানুজন মাঠেও কাজ করার সাহস পায়নি।
উত্তরাঞ্চলে হিমালয়ের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। তিস্তা, ব্রক্ষèপুত্র, ধরলা নদীর দুই ধারে অসখ্য চর। এসব চরে বসবাস করেন হাজার হাজার গরীব মানুষ। এই মানুষগুলো নিদারুণ শীতে কাঁপছে। অন্য সময় বিভিন্ন সংস্থা, সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও এবার তেমন চিত্র দেখা যায়নি। রংপুরের উলিপুরের চর টেপামধুপুর, পীরগাছার রহমতের চর, জুয়ানের চর, সিবদেব চরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো চরাঞ্চলে প্রচ- শীত অনুভুত হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার প্রভাব কেটে গেলেও উত্তরের হিমালয়ের হিম কনকনে হাওয়াই সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের চরের গরীর মানুষকে। কনকনে বাতাসের সঙ্গে যোগ হয়েছে কুয়াশা। হাটবাজার, রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা হয়ে থাকে। হিম বাতাস যেন শরীরে মৌমাছির মতো হুল ফোটার মতো বিঁধছে। বৃত্তশালীরা শরীরে মোটা শীতবস্ত্র চাপিয়েও যেন রক্ষা পাচ্ছেন না। শ্রমজীবী গরীব মানুষের দিনারুণ কষ্ট। ছিন্নমূল মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উত্তাপ নিচ্ছে। ফসলি জমিতে কাজে নামতে পারছে না কৃষক। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষেরা শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রংপুর ও কুড়িগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, শ্রমজীবীসহ নদী পারের মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। প্রচ- শীতের কারণে বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় খেতমজুররা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
পৌষ মাস চলে গেছে। এখন চলছে মাঘ মাস। কিন্তু অজিরণের মতোই চরাঞ্চলের মানুষকে নিদারুণ কন্ট করে দিন কাটাতে হচ্ছে। তাদের প্রচ- শীতের মধ্যে একটি ছেঁড়া ক্যাঁতা গায়ে জড়িয়ে রাত জেগে থাকতে হয়। তাদের পাশে যেন দাঁড়ানোর কেউ নেউ? টিভি ক্যামেরার বদৌলতে রাজধানী ঢাকায় প্রায়ই দেখা যায় বিত্তবানরা শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত বিতরণ করছেন; বিভিন্ন রাজনৈতি দল ও ব্যাক্তি কম্বল বিতরণে করছেন। সে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণের দৃশ্য টিভি পর্দায় ফলাও করে পচার করা হয়। কিন্তু চরাঞ্চলে টিভির ক্যামেরা না থাকায় অজিরণের মতো হাজার হাজার অজিরণ প্রচন্ড শীতে কাাঁপছেন। তাদের দেখার যেন কেউ নেই।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল