দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন টিআইবি বিএনপির দালাল। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বক্তব্য ‘জনমতের প্রতিফলন’ এবং প্রকৃত চিত্র বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কে বলে যে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে? সবাই তো বলেছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নাই। কাজেই টিআইবি যা বলেছে, এটা জনমতের প্রতিফলন। আমরা (বিএনপি) যা বলেছি সেটাও জনমতের প্রতিফলন। ফলে যদি আমাদের কথা মিলে যায় সেটা একজন আরেকজনকে পছন্দ করার জন্য না, এটা সত্য বলার জন্য।
প্রতিক্রিয়ায় একই কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, শুধু টিআইবি কেন, দেশ বিদেশের কে বলে নাই ‘ভুয়া নির্বাচন’ সেটা বলেন? কে বিএনপির কথাকে রিপিট করে প্রমাণ করে নাই যে, বিএনপি বিগত ১৫ বছর ধরে এই সরকারের স্বৈরাচারী প্রকৃতি এবং একদলীয় শাসন সম্পর্কে যে কথা বলেছে। এটা দেশে-বিদেশের সবাই বলছে।

জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে গিয়ে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। তারা শহীদ জিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করে।
এ সময় নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অভিমতকে সাধুবাদ জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ন্যায্য কথা, বাংলাদেশের গণমানুষের পক্ষে যে বলবে তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা যা বলি সেটা গুরুত্বপূর্ণ, জনগণ যা বলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, জনগণ এই সরকারের স্বৈরশাসন পছন্দ করে না। এই সরকার যে অন্যায়ভাবে আমাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করে রেখেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ আমাদের হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে। যারা এসব অন্যায়-অনাচার-জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন এবং ভোট চুরির সমালোচনা করে, তাদের সবাইকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

শিগগির দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা হবে দাবি করে নজরুল ইসলাম বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই গণতন্ত্রকে আবার মেরে ফেলা হয়েছে। সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করার যে লড়াই এই লড়াই চলছে এবং এই লড়াইয়ের যে বিভিন্ন কর্মসূচি আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না বিএনপি। আমরা শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং আমরা আমাদের যে কর্মসূচি চলমান রয়েছে এবং এই চলমান কর্মসূচি আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অব্যাহত রাখব এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। তিনি বলেন, এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্র আজ বাংলাদেশে মৃত। এটা শুধু আমাদের কথা নয়, এটা শুধু বাংলাদেশের মানুষের কথা নয়। সারা বিশ্বের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো এক বাক্যে একটি কথা বলেছে যে, বাংলাদেশে আজকে একদলীয় শাসনের পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই, এখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, এখানে মানুষের ভোটের অধিকার নেই, এখানে মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা নতুন করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে আমরা ধারণ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এগিয়ে যাব। এটাই আমাদের শপথ।

এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাখাওয়াত হাসান জীবন, ব্যারিষ্টার কায়সার কামাল, তাইফুল ইসলাম টিপুসহ যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্র দল, তাঁতী দল, মতস্যজীবী দল, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।