ব্র্যাক ইউনির্ভার্সিটর শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে? তার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট অবস্থান কী? তা বিবৃতির মাধ্যমে জানানোর দাবি জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মানববন্ধন, বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা দাবি না মানলে সেমিস্টার ফি বন্ধ ও ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দেন। দিন শেষে শিক্ষার্থীদের দাবি না মানায় সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ব্র্যাক বয়কটের (প্রতিষ্ঠানটির সকল পণ্য ও সেবা) ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের মূল ফটকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে মারুফ রহমান বলেন, আমরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া হয়নি। তাই আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সারাদেশ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বয়কটের (প্রতিষ্ঠানটির সকল পণ্য ও সেবা) ডাক দিলাম।

গত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক গল্প পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ জানান শিক্ষক আসিফ মাহতাব। তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার সামনে ওই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।

এরপরই আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শুরু হয় সমালোচনা। এর মধ্যে বিবৃতি দিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তারা বলেছে, চাকরি হারানো খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসের সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই। তবে আসিফ মাহতাব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে সমর্থনের অভিযোগ করেন।

এদিকে আসিফকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ফটকে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় ‘ব্রাক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস কমিউনিটি’। বেলা ১২টায় শিক্ষার্থীরা মেরুল বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে শত শত শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। প্ল্যাকার্ডে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করেন, ‘শরিফ থেকে শরিফা মানিনা মানবো না’, ‘আমাদের এই বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’ ‘ট্রান্সজেন্ঠার আর হিজড়া এক না, এক না’, ‘নো টু এলজিবিটিকিউ’, ‘তোমার আমার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’, ‘নো টু রেইবো টেরোরিস্ট’, ‘ডাচ ব্র্যাক সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ? উই ব্র্যাকিয়ানস ডোনট সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ‘. উই ডো নোট প্রমোট এলজিবিটিকিউ‘, ‘সমকামিতার বিরুদ্ধে লড়াই করবো একসাথে‘ ‘আমার সোনার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই‘ এসময় বিভিন্ন স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীর।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষার্থী বলেন, আসিফ মাহতাব স্যারের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। আন প্রফেশনালিজম দেখিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলতে চাই, বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ হোক আর ট্রান্সজেন্ডার হোক কোনো কিছুর ঠাঁই নেই। ট্রান্সজেন্ডার সকল ধর্মের কাছে অবৈধ, বাংলাদেশের আইন অনুয়ায়ী এটা বৈধ না। যারা এটা বৈধতার জন্য কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা লড়াই করবো। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

অন্য আরেক শিক্ষার্থী বলেন, যারা স্বাধীনতার নাম দিয়ে মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে তারা দেশ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে। ব্র্যাক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত সমকামিতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এটা মানসিক অসুস্থতা । ট্রান্সজেন্ডার এবং হিজড়া এক জিনিস নয়।

এসময় ২ দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। সেই দাবি না মানলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি বন্ধ ও ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। দুই দফা দাবি হলো- ব্র্যাক শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্য ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট অবস্থান কী তা বিবৃতির মাধ্যমে জানানো।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে কয়েকজন এসে আন্দোলনকারীদের ভেতরে গিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তারা রাজি হয়নি। এদিকে, বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় বসে। এসময় প্রতিনিধি দলেল নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের মূল ফটকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে মারুফ রহমান বলেন, আমরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া হয়নি। তাই আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সারাদেশ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বয়কটের (প্রতিষ্ঠানটির সকল পণ্য ও সেবা) ডাক দিলাম।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনায় দাবি দুটির পক্ষে ও বিপক্ষে সন্তুষ্টিমূলক কোনো জবাব দিতে পারেনি। অর্থাৎ, মাঝামাঝি অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে। এ কারণে সবার সঙ্গে (শিক্ষার্থী) আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।###