চা শিল্পে উড়ন্ত সূচনা
২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বিভিন্ন শস্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে ব্যতিক্রম পরিস্থিতি অবলোকন করেছে দেশের চা উৎপাদন খাত। দেশে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়েছেন দেশিয় বাগান মালিকরা। যা ১৮৪ বছরের ইতিহাসে দেশে চা উৎপাদনের নতুন রেকর্ড। এক বছরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদন করে ১৮৪ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এমন সফলতা এসেছে। ২০২৩ সালে দেশের বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি।
চা বোর্ডে চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, চা শিল্পের ইতিহাসে এর আগে আর কখনও এতো বেশি পরিমাণে চা উৎপাদন হয়নি। ২০২৩ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লাখ ৯৯ হাজার কেজি বেশি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় চায়ের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এর আগে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল ২০২১ সালে। সেই বছর দেশের ১৬৮টি চা বাগান ও ফাঁড়ি বাগানসহ ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। ২০২৪ সালে এসে সেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডে পরিণত হয়েছে। এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেই বছর ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। বিশ্বের তিন শতাংশ চা উৎপাদনশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। চা শিল্পের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশি চায়ের বাজারের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই চা শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশের উপরে।
চা বিশ্লেষকের তথ্য মতে, এই অঞ্চলে প্রথম চা বাগান করার উদ্যোগ নেয়া হয় ১৮২৮ সালে। অবিভক্ত ভারতে চট্টগ্রামের কোদালায় জমি নেয়া হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম ক্লাব ১৮৪০ সালে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয় প্রথম চা গাছ। তবে প্রথম এই চা বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয় সিলেটে ১৮৫৪ সালে। সে বছর সিলেট শহরের উপকণ্ঠে মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৪ সালে সিলেটে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই দেশে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষাবাদের সূচনা হয়। ১৯৬০ এর দশকে এই দেশে চা চাষাবাদ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন চা বাগানগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্বাধীনতাত্তোর সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক এবং বৃটিশ আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশ চা পুনর্বাসন প্রকল্প (১৯৮০-৮১ হতে ১৯৯১-৯২) বাস্তবায়ন ও ২০০২ সাল থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল ও ২০০৫ সাল থেকে পাবর্ত্য জেলাগুলোতে ক্ষুদ্রায়তন চা চাষাবাদ সম্প্রসারণের ফলে ২০০৯ সালে চা বাগানের সংখ্যা দাড়ায় ১৬৩টি।
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার মধ্যে জানুয়ারি মাসেই ৩ লাখ ৬৪ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। সে বছর ১৭ এপ্রিল প্রথম নিলাম হয় চট্টগ্রামে ও ২৬ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে আরেকটি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২০২২ সালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদন উপযোগী পরিবেশ বজায় ছিল। লক্ষ্যমাত্রাও ছিল সে বছর ১০ কোটি কেজির বেশি। কিন্তু চা শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে পাঁচ-ছয়টি চা নিলাম ডাকতে সমস্যা হয়। যদিও পরে চা শ্রমিক আন্দোলনের সমস্যার সমাধান হয় কিন্তু উৎপাদনে যে ঘাটতি ছিল তা আর পূরণ হয়নি। তাই ২০২৩ সালে ১৮৪ বছরের ইতিহাসে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের সম্ভবাবনা দেখছিল চা বোর্ড। সে বছরের ১ জুলাই দৈনিক ইনকিলাব’র সংবাদদাতা আনোয়ার হোসেন জসিম ইনকিলাবে ‘বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে চা বাগানে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, চা শিল্পের ইতিহাসে ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের সম্ভবাবনা দেখছে চা বোর্ড। এবং ২০২৩ সালে দেশের ১৬৮টি চা বাগান ও ফাড়ি বাগানসহ ১০কোটি ২৯ লাখ ৯৯ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লাখ ৯৯ হাজার কেজি বেশি।
চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশের চা বাগানগুলোর মোট আয়তন এক লাখ ১৬ হাজার হেক্টর হলেও ২০১৩ সাল পর্যন্ত এর মাত্র ৪৭ শতাংশ জমিতে চা চাষ হতো। তখন ৬২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চা চাষ হচ্ছিল না। এর পর থেকে অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে এবং চায়ের অব্যাহত চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চা বাগান মালিক ও সংশ্লিষ্টদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। চায়ের উৎপাদন বাড়াতে নেওয়া হয় পরিকল্পনা প্রকল্পও। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘চা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প’। ধীরে ধীরে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় এবং প্রতিবছরই অনাবাদি জমিতে চায়ের চাষাবাদ প্রসার করার ফলে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে এবং রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এতে প্রতি হেক্টরে চায়ের উৎপাদন হচ্ছে ১২৭০ কেজিরও বেশি।
চা বোর্ড সূত্র আরো জানায়, দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড ‘ভিশন ২১’ এ পরিকল্পনার আওতায় চা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড ১০টি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রতিটি প্রকল্পের সময় নেওয়া হয় ১২ বছর। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ১০কোটি কেজি চা উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও পঞ্চগড় জেলার ছয় হাজার ৪৪০ হেক্টর পতিত জমিতে আরও চা বাগান তৈরি করে অতিরিক্ত চা উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ ছাড়াও এই প্রকল্পের মাধমে চা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিটি-১৮ জাতের চা গাছ লাগানো হয়। এই চা গাছ গুলোর ফলন ভালো এবং খরাসহিষ্ণু। এতে চা উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করে। আর চা শিল্পের জন্য নেয়া কৌশলগত পরিকল্পনা ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে দেশে চা উৎপাদনের পরিমাণ এখন দাঁড়িছে ১০কোটি ২৯ লাখ ৯৯ হাজার কেজি।
মৌলভীবাজারের শ্রী গোবিন্দপুর চা বাগানের মালিক শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসীন মিয়া মধু বলেন, এই চা উৎপাদন এমনে এমনে হয়নি, বাগান মালিকগন এই উৎপাদনের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন, তবে পঞ্চগড়ে চা চাষের জন্য অনেক বাগান তৈরী করা হয়েছে। যার কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, স্বাধীনতার পরে দেশে এই প্রথম এতো বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। এই সাফল্য শুধু চা র্বোডের নয়, এই শিল্পেরে সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের। তিনি আরো বলেন, চা এমন একটি শিল্প এটার জন্য সুপরিকল্পনার প্রয়োজন দরকার হয়। আমরা ২০১৭ সালে কেবিনেটের অনুমোদন নিয়ে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করি। এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সুপার ভিশন, ট্রেনিং, আইনের প্রয়োগ, মোবাইল কোর্ট, অবৈধ ব্যবসা বন্ধে অভিযান, ২.৫ পার্সেন্ট এরিয়া বৃদ্ধি, পঞ্চড়ে অনলাইন অকশন হাউজ চালু করা, চা প্রণোদনা প্রদান, সমতল ভূমিতে বিনামূল্যে চা গাছ প্রদান, লাকিং মিশিন প্রদান এবং বিভিন্ন দেশের অর্গনাইজাদের সাথে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা। যার ফলে চা শিল্পের ১৮৪ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে