কূলকিনারা পাচ্ছে না পিবিআই
২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দেশজুড়ে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর চিকিৎসক ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি হত্যাকাণ্ডের পৌনে তিন বছর হলেও উদ্ঘাটন হয়নি হত্যাকাণ্ডের রহস্য। অথচ নিজ শয়নকক্ষে তাকে ছুরিকাঘাত ও জবাই করে হত্যা করা হয়। খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও হত্যাকাণ্ডের কারণ কিংবা হত্যাকারীর বিষয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারছে পুলিশ। মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর পড়লে সংস্থাটিও রয়েছে গোলকধাঁধায়।
তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর থেকে সন্দেহভাজন, প্রত্যক্ষদর্শী, সহকর্মী ও স্বজনসহ অর্ধশতাধিক লোককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেও মেলেনি কোনো ক্লু। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। ডা. সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এ কে সামছুদ্দিন আজাদকে গ্রেফতার করেও এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। সামছুদ্দিন আজাদ বর্তমানে জামিনে আছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ডা. সাবিরা হত্যায় তার স্বামী সামছুদ্দিন আজাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। তবে রিমান্ডে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। জমে থাকা দীর্ঘ ক্ষোভের কারণে ডা. সাবিরাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। ঘটনাটি ক্লুলেস ও জটিল। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত চলছে। তদন্তে নির্দোষ কাউকে আইনের আওতায় আনা হবে না। যে বা যারা জড়িত তাদেরই শুধু আসামি করা হবে।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, সাবিরার স্বামী বা অন্য কেউ খুন করেছেন, দুটোই হতে পারে। সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কে বা কারা, তা স্পষ্ট না হলেও বেশকিছু তথ্যের ভিত্তিতে স্বামী আজাদকে সন্দেহের তালিকায় শীর্ষে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আরও কয়েকজন রয়েছেন। যাদের নাম এখনই প্রকাশ করছি না। তদন্ত নিয়ে অনেক গোলকধাঁধা থাকলেও যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে তদন্ত চলমান
২০২১ সালের ৩০ মে রাজধানীর কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ হোল্ডিংয়ের বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি কাগজে-কলমে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও রহস্য উদ্ঘাটনে ডিবিসহ অন্য সংস্থাও ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে ২০২১ সালের ২২ আগস্ট তদন্তভার পায় পিবিআই। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগ। অনেক দূর এগোলেও এখনো তারা পৌঁছাতে পারেনি কোনো সমাধানে। চিকিৎসক সাবিরা হত্যায় পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আলাদা বাসাভাড়া নেওয়া, স্বামীর আগের দুই বিয়ের তথ্য গোপন এবং খুনের রাতে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথাকাটাকাটিসহ বেশকিছু তথ্য পায় পিবিআই।
জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী সামছুদ্দিন আজাদ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেন। তিনি সাবিরাকে বিয়ে করার আগে আরও দুটি বিয়ে করেছিলেন। প্রথম ঘরে এক মেয়ে এবং দ্বিতীয় ঘরেও এক মেয়ে আছে তার। সবশেষ সাবিরার ঘরেও তার এক মেয়ে রয়েছে। তবে সাবিরার কাছে প্রথম বিয়ের কথা তিনি গোপন করেছিলেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছিল বলে একটি সূত্রে জানা যায়।
২০০৬ সালে সামছুদ্দিন আজাদের সঙ্গে সাবিরার বিয়ে হয়। পরের বছর এক মেয়ে হয় তাদের। এর আগে চট্টগ্রামের একটি মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ১৯৯৮ সালে উবাইদ উল্লাহ নামে এক চিকিৎসকের সঙ্গে সাবিরার বিয়ে হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে সেই ঘরে এক ছেলের জন্ম হয়। ২০০৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান উবাইদ উল্লাহ।
পিবিআই সূত্র জানায়, নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ডা. সাবিরার স্বামী সামছুদ্দিন আজাদকে ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি অসুস্থ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে একজন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে।
তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানান, জমে থাকা দীর্ঘ ক্ষোভের বলি হয়েছেন ডা. সাবিরা। এতটাই চতুরতার সঙ্গে খুন করা হয়েছে, ঘাতকরা কোনো চিহ্ন রাখেনি। যে কারণে একটু সময় লাগছে। গত দুই বছরের মধ্যে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক, গৃহকর্মী, ভাড়াটিয়া ও পাশের কক্ষের বাসিন্দাসহ সাবিরার সহকর্মী এবং স্বজনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে ঘনিষ্ঠজনদের কেউ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলেই সন্দেহ রয়েছে। সন্দেহের এ তালিকার পুরোভাগে রয়েছেন ডা. সাবিরার স্বামী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এ কে সামছুদ্দিন আজাদ।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. জুয়েল মিঞা বলেন, হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এখনো বের করা যায়নি, তদন্ত চলমান। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাড়ির কেয়ারটেকার বেশির ভাগ সময় ভবনের বাসিন্দাদের দরকারি কেনাকাটা করতে দোকানে যেতেন। আর এ অবস্থায় বাড়ির প্রধান ফটক থাকতো অরক্ষিত অবস্থায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে খুনি বা খুনিরা। সাবিরার স্বামী এ কে সামছুদ্দিন আজাদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। তার কাছ থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে তাকে সন্দেহ করার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সাবিরার সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না। সাবিরার ভাড়া বাসায় স্বামী কয়েকবার গিয়েছিলেন, সেটা তার মোবাইলের কললিস্ট পর্যালোচনা করে জানা গেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে