ইসলামী আন্দোলন আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ সৃষ্টি করেছেন বিবেক দিয়ে, জানোয়ারের মধ্যে বিবেক দেয়নি চাহিদা দিয়েছেন। যে মানুষ বিবেক দিয়ে চাহিদা কন্ট্রোল করতে পারবে না তারা জানোয়ারের চেয়ে খারাপ। তিনি বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। বিতর্কিত শিক্ষা ব্যবস্থায় সন্তানদের লজ্জা হায়া উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সন্তানকে ধ্বংস করতে তার হাতে এন্ড্রয়েড ফোন তুলে দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশের বুয়েট মেডিকেল এর ছাত্ররা কেন তারদের মেধা প্রকাশ করতে পারছে না। বুয়েট থাকতে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের ডিজাইন করতে চীন জাপান থেকে ইঞ্জিনিয়ার আনতে হয় কেন ? রাজনীতির নামে মেধাকে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের মেধা শূন্য করা হচ্ছে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়া হচ্ছে। একবার ডা.দিপু মনিকে আবিষ্কার করে শিক্ষার বারোটা বাজিয়েছে। মানুষকে বানর বানানোর ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েছে। এবার ইসকনের সদস্য নওফেলকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বানানো হয়েছে। মুসলমানের ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্ত চলছে। এবার ট্রান্সজেন্ডারকে বৈধতা দেয়ার চক্রান্ত শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাগলামির একটা সীমা আছে। অবৈধকে আইনের রুপ দিয়ে বৈধতা দেয়া জানোয়ারের চেয়ে খারাপ কাজ। মুফতি ফয়জুল করীম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কী সমকামিতার পক্ষে না বিপক্ষে জাতি সুস্পষ্ট জানতে চায়। আমরা দিল্লির গোলামী করার জন্য স্বাধীনতা অর্জন করিনি।

গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বিতর্কিত শিক্ষাকারিকুলাম পরিবর্তন ও ট্রান্সজেন্ডারকে প্রমোট করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে মুফতি ফয়জুল করীম প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দলের উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, ডা. শহিদুল ইসলাম, মাওলানা মাকসুদুর রহমান, শাহাদাত হোসেন প্রধানিয়া, নুরুজ্জামান সরকার।

মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, দেশ বিদেশের বড় বড় কোম্পানীর শীর্ষ পদে ভারতীয়রা। আমাদের দেশের জনগণ করে বিদেশে সুইপার-ক্লিনারের কাজ। এটা দীর্ঘদিনের চক্রান্তের ফসল। তিনি বলেন, ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে ডিভাইসমুখি করে গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের মেধা ও মননের ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশের মেধাবীদেরকে মূল্যায়ন না করায় তারা বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছে। নাসার বিজ্ঞানীদের মধ্যে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী থাকলেও তাদের কোন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।

সীমান্তে বিজিবি সদস্য হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়ে মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, বিজিবি হত্যাকান্ডের পরও কোন প্রতিক্রিয়া না থাকা প্রমাণ করে বিজিবির সদস্যদের পোশাক, বুট ও রাইফেল আছে, সাহস, রক্ত, মনুষ্যত্ব নেই। তিনি বলেন, ভারতের শক্তি থাকলে তারা চীন ও পাকিস্তানকে গুলি করুক। তিনি বলেন, ট্রান্সজেন্ডারের বিরুদ্ধে কথা বলায় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় আসিফ মাহতাবকে চাকুরীচ্যুত করলে আমি ব্রাকের সামনে অবস্থান করবো। তাতেও কাজ না হলে জনগণ ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইট খুলে নিয়ে যাবে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সারোয়ার স্যারকে চাকুরীচ্যুত করা যাবে না। তিনি বলেন, ওরা (ভারত) জানে কাঁটাতারের বেড়াই বড় সীমান্ত নয়, এদেশের বড় সীমান্ত হলো মুসলমান। যদি এদেশের মুসলমানকে নষ্ট করা যায়, তাহলে কাঁটাতারে বেড়া থাকবে না। এপার বাংলা ওপার বাংলা এক হয়ে যাবে। জীবন থাকতে জনগণ এপার বাংলা ওপার বাংলা হতে দেবে না।

মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষকে পশু বানাবার কাজ করছে। আমরা আশা করেছিলাম শিক্ষাব্যবস্থার অসঙ্গতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হবে। কিন্তু সরকার তা করেনি। সরকার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ঘুমের ভান করছেন। কিন্তু জনগণ জানে হাতুড়ি পেটা করে ঘুম ভাঙ্গাতে হয়। তিনি বলেন, দেশের সচেতন জনগণ, সাংবাদিকরা কেউ চায় না তাদের সন্তান পশু হয়ে যাক। তিনি ট্রান্সজেন্ডারের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পশু বানানোর চক্রান্ত মেনে নেয়া হবে না। মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে আগামি ১৫ বছর পর দেশে শিক্ষিত কোন জাতি থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৫০জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে একজনও পাশ করতে পারেনি। পরকিল্পিতভাবে শিক্ষাব্যবস্থা পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে লোক এনে দেশ পরিচালনা করার জন্য। তিনি বলেন, শুধু ট্রান্সজেন্ডার নয়, পুরো শিক্ষাকারিকুলাম বাতিল করে নতুনভাবে দেশের দীনদার বুদ্ধিজীবী ও হক্কানী ওলামায়ে কেরামের পরামর্শে নতুন শিক্ষাকারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে।

প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, বর্তমান সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিরোধী দল না থাকলে কার্যকরি সংসদ থাকে না। সরকারও শক্তিশালী হয় না। জনগণ অধিকার বঞ্চিত হয়। এজন্য দেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট ও রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। ডামি ও ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সরকারের যা মন চায়, তাই করছে। সরকারের সমাজসেবা দফতরের তালিকা অনুযায়ি হিজড়ার সংখ্যা ১০ হাজার। হিজড়া অধিকারের নামে সমকামিতাকে প্রমোট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দিপু মনি পররাষট্র মন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ থেকে ট্রান্সজেন্ডার আমদানি করেন। এরপর তাকে শিক্ষামন্ত্রী করা হলে তা শিক্ষাকারিকুলামে সংযোজন করানো হয়। এখন এটাকে বাস্তবায়ন করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে তাকে তা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এগুলো বন্ধ না করলে দেশের জনগণ তা প্রতিহত করতে বাধ্য হবে। পরে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট, পল্টন মোড়, বিজয়নগরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত : এদিকে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীস কাজী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দিন আশরাফী, মহাসচিব পীর সৈয়দ মসিহুদ্দৌলা ও নির্বাহী মহাসচিব প্রিন্সিপাল (ভারপ্রাপ্ত) আল্লামা মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ট্রান্সজেন্ডার এটি একটি ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ। ইসলাম ধর্মতো দূরের কথা কোন ধর্মেই এটার স্বীকৃতি নেই। এটা পশ্চিমা গোষ্ঠীর সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র বটে। এটাকে ‘অভিশপ্ত’ ও ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ ইঙ্গিত করে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এই মতবাদ এক ধরনের মানসিক বিকৃতির বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ‘ট্রান্সজেন্ডার’ নামে অভিশপ্ত একটি অদ্ভূত মতবাদ সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে নিঃসন্দেহে। মনে রাখতে হবে তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডার এক জিনিস নয়। আমাদের দেশে সরকার তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দিলেও অস্বীকৃত ট্রান্সজেন্ডারের মত বিকৃত কর্মকান্ড সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য পুস্তকে সন্নিবেশিত করে কোমলমতি শিশু কিশোরদেরকে সমকামিতার প্রতি উংসাহ দেওয়ার নামান্তর। জাতিকে নৈতিকতা বিবর্জিত করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নহে।
আহলে সুন্নাত নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, স্বাধীনভাবে দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলা সাংবিধানিক অধিকার সবার রয়েছে। তাই কেউ কথা বললে তার উপর অনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগকে সাপোর্ট করা যায়না। নেতৃবৃন্দ সপ্তম শ্রেণির বই থেকে এহেন নৈতিক বিবর্জিত অরুচিকর অধ্যায় দ্রুত বিলুপ্ত করার জোর দাবি জানান।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্¥মহাসচিব মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী বলেছেন, ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আগামী প্রজন্মমের ঈমান আক্বিদা ধ্বংস করতে শিক্ষা সিলেবাসে ইসলাম বিদ্বেষী লেখা সংযুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা সিলেবাস থেকে ঈমান আক্বিদা বিদ্বেষী লেখা বাদ দিতে হবে। তিনি বলেন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের দায়িত্বশীলদের খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। এজন্য পড়া-লেখার পাশাপাশি খেলাফত প্রতিষ্ঠার কাজকে নিজেদের মিশন ও ভিশনে পরিণত করতে হবে। পুরানা পল্টনস্থ দারুল খিলাফাহ মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের দুই দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মশালা সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহর সভপতিত্বে ও সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ আশিকুর রহমান জাকারিয়ার পরিচালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা নিয়ামতুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী,মাওলানা আবু সাঈদ নোমান, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূইয়া, মাওলানা শরীফুজ্জামান জসিম, মুফতি মুহসিন উদ্দীন বেলালী, মাওলানা খায়রুল ইসলাম ঠাকুর, মুহাম্মদ ফরিদ ও মুহাম্মদ মাহদী হাসান।