রফতানি খাত পড়বে চ্যালেঞ্জে
৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। এমনিতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডায় পোশাক রফতানি কমে গেছে। পোশাকের অর্ডার কমে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে গার্মেন্টসসহ পুরো রফতানি খাত। ডলার সংকট এবং রফতানি কমে যাওয়াায় এমন রফতানি খাতে উৎসাহ বাড়াতে প্রণোদনা বাড়ানোর কথা। অথচ রফতানিতে উৎসাহ দিতে প্রণোদনা বাড়ানোর বদলে হঠাৎ করে মাঝ পথে এসে বস্ত্র খাতের পাঁচ ধরনের পণ্যে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়া হলো। বিদেশে রফতানির প্রায় ৫৬ শতাংশ পোশাক পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। পোশাক এছাড়া অন্য সব খাতে ভর্তুকির হার কমানো হয়েছে। অথচ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে অনেক দেশ প্রণোদনামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রণোদনা কমানোর সরকারের সিদ্ধান্তে মহাচিন্তায় পড়ে গেছেন রফতানির সঙ্গে যুক্ত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত বিদেশে রফতানি খাত নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখে পড়বে। সরকার যখন নতুন নতুন দেশে রফতানির বাজার খোজার কথা বলছে তখন এমন সিদ্ধান্ত খুবই নেতিবাচক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহাসান বলেন, এই মুহূর্তে আমরা ফরেন কারেন্সির সংকটকাল অতিক্রম করছি। এই সময়ে প্রণোদনা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত বলা যায় আত্মঘাতী। গার্মেন্টস পণ্য রফতানি প্রণোদনা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তৈরি পোশাক প্রস্তত ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ›র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শুরুতে ৪টা ক্যাটাগরিতে প্রণোদনার হার কমানো হলো। তারপর ফাইনালি এসে সরকার জানালো পাঁচটি এইচএস (হারমোনাইজড সিস্টেম) কোডের আইটেম এখন আর কোনো ইনসেনটিভ পাবে না। অথচ এই পাঁচ আইটেম পোশাক রফতানির অপরিহার্য অংশ। এমনেিতই ফরেন কারেন্সিতে আমাদের কম্পিটিটিভ থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক এরমধ্যেই অর্ডার কম। দেশে ডলারের সংকট। সে কারণে দেশে কীভাবে আরও ডলার আনা যায়-সেকাজ করতে হবে। আমাদের রিজার্ভ কমতে কমতে এমন জায়গায় গেছে যে আপনারা এলসি খুলতেও দেন না।
ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সরকার থেকে হঠাৎ করে নেওয়া এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক খাতের রফতানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অবশ্য সরকার এখন চরম সংকটে আছে। যে কারণে বিভিন্ন খাতের প্রণোদনা ও সরকারের কাছে পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। শুধু সার, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর পাওনা ২৫ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে সরকার বন্ড ইস্যু করছে। এখন ভর্তুকির চাপ কমাতে রফতানিতে প্রণোদনা কমানো হলো।
জানা যায়, পোশাক রফতানি নিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন। ভর্তুকিতে বড় পরিবর্তন এলো। অথচ তৈরি পোশাক খাতের বেতন বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাসের সঙ্কটের কারণে চাপে আছেন উদ্যোক্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে জানানো হয়, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে একত্রে সম্পূর্ণরুপে বন্ধ না করে সরকার বিভিন্ন ধাপে নগদ সহায়তা/ প্রণোদনার হার অল্প অল্প করে হ্রাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সরকার থেকে হঠাৎ করে নেওয়া এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক খাতের রফতানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অবশ্য সরকার এখন চরম সঙ্কটে আছে। যে কারণে বিভিন্ন খাতের প্রণোদনা ও সরকারের কাছে পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। শুধু সার, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর পাওনা ২৫ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে সরকার বন্ড ইস্যু করছে। এখন ভর্তুকির চাপ কমাতে রফতানিতে প্রণোদনা কমানো হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, বস্ত্র খাতের পাঁচটি এইচএস কোডের আওতায় রফতানি হওয়া পণ্যে কোনো নগদ সহায়তা দেওয়া হবে না। এইচএস কোডগুলো হলো- ৬১০৫, ৬১০৭, ৬১০৯, ৬১১০ এবং ৬২০৩। এই পাঁচটি কোডে বস্ত্র খাতের মোট ৫৬ শতাংশ রফতানি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যেহেতু রফতানি আদেশ নেওয়ার সময় ভর্তুকিসহ হিসাব করে তারা পণ্যের দর নির্ধারণ করেন। ফলে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সরকার মাঝ পথে এসে এভাবে হঠাৎ ভর্তুকি তুলে নেওয়া এবং কমানোয় তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। সার্কুলারে বলা হয়েছে, দেশের রফতানি বাণিজ্য উৎসাহিত করতে ৪৩টি পণ্য ও খাতে নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। ডব্লিউটিওর বিধান অনুসারে রফতানি ভর্তুকি হিসেবে বিবেচিত হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে কোনো ধরনের নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে না। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। উত্তরণের পর সম্পূর্ণ নগদ সহায়তা একবারে প্রত্যাহার করলে রফতানি খাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। যে কারণে বিভিন্ন খাতে নগদ সহায়তার হার অল্প অল্প করে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩০ জুন জাহাজি করা পণ্যে নতুন হার প্রযোজ্য হবে। নতুন হার অনুযায়ী, রফতানিমুখী দেশিয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র–ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। আগে যা ৪ শতাংশ ছিল। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রফতানিকারকদের প্রণোদনার হার ৩ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তাও ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। নীট, ওভেন ও সোয়েটারসহ তৈরি পোশাক খাতের সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অতিরিক্ত ৪ শতাংশই বহাল থাকবে। তবে নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এসব খাতে নির্ধারিত পাঁচটি এইচএস কোডের রফতানির বিপরীতে কোনো নগদ সহায়তা মিলবে না।
রফতানি সহায়তা কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতির মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রফতানির সহায়তা কমানো হয়েছে এটার চেয়ে বড় সমস্যা কয়েকটি ক্যাটাগরির পণ্য সহায়তা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার মানে টি-শার্টসহ রফতানির বড় সব পণ্যে সুবিধা থাকছে না। সরকার দেশ কিভাবে চালাবে এটা তাদের বিষয়। আমাদের কোনো কথার মূল্য নেই। কোথায়ও বলার জায়গাও নেই। তৈরি পোশাকের ভবিষ্যৎ অন্ধকার জানিয়ে তিনিন বলেন পোশাক খাত ধ্বংস করতে কেউ কেউ পায়তারা করছে। তাদের পরামর্শে এ সিন্ধান্ত। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সরকারকে জানাবো। ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটা দেশে রফতারিতে সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে ভারত বড় বাজার। এখানে সুবিধা বন্ধ করলে আমাদের জায়গা আর কোথায় থাকবে?
বিজিএমইএ›র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন,বলেন, আমরা নতুন বাজার হিসেবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে খুব কষ্ট করে মার্কেট ডেভলপ করেছিলাম। হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত আমাদের পুরো শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ফেললো। নতুন সার্কুলারের পর এখন অল্প কিছু পণ্যে নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে। সার্কুলারের প্রথমে বলা হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গাইডলাইন অনুযায়ী, ২০২৬ সালের পর আর নগদ প্রণোদনা দেওয়া যাবে না, সেজন্য এটি হ্রাস করা হয়েছে। কিন্তু, আমরা বারবার বলে আসছি এখন কমায়েন না। কারণ ফরেন কারেন্সিতে আমাদের কম্পিটিটিভ থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক এরমধ্যেই অর্ডার কম। দেশে ডলারের সংকট। সে কারণে দেশে কীভাবে আরও ডলার আনা যায়- সেকাজ করতে হবে। আমাদের রিজার্ভ কমতে কমতে এমন জায়গায় গেছে যে আপনারা এলসি খুলতেও দেন না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়
সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে
ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি
দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ
সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার
আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন
কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা
অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ
তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড
ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার
১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন
গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়
মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ