রাজধানীর রাস্তা কাটায় ভোগান্তি
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
রাজধানীতে মানুষের চলাচলে বছর জুড়ে দুর্ভোগ লেগেই থাকে। কখনো পানির লাইন, কখনো গ্যাস লাইন, আবার সিটি করপোরেশনের ড্রেন সংস্কারের কাজ। কোন না কোন এলাকায় নানা সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলতে থাকে বছর জুড়েই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কের কাজ অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলে দীর্ঘদিন। কমলাপুর এলাকায় উন্নয়ন কজের জন্য সড়ক লেন কমিয়ে চলার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাইনবোর্ড লাগানো হলেও এই সময় যে কত দিনের তা আসলে কাগজে কলমে নেই। সিটি করপোরেশন ঠিকাদারদের সময় বেধে দিলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয় না। রাজধানীর যেসব এলাকায় সড়কে উন্নয়ন চলছে সবখানেই দুর্ভোগ মানুষের নিত্যসঙ্গী।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ ওয়ার্ডেই চলছে বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের খোঁড়াখুঁড়ি। এছাড়াও চলমান আছে মেট্রোরেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ। এ কারণে ভেঙে পড়েছে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা। দেশে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের পর থেকেই রাজধানীতে বাড়ছে যানজট। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে অফিসগামী লোকজন। ঢাকার যানজট ও জনদুর্ভোগ নিরসনে বছরের পর বছর ধরে সরকার এবং সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে নানাবিধ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বছরজুড়েই বিভিন্ন সেবা সংস্থা রাজধানী ঢাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। এক সংস্থা রাস্তা ঠিক করে যায়, অন্য সংস্থা আবার সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। নগরীর ব্যস্ততম রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর সময়মতো তা মেরামত করা হয় না। ফলে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলাকালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কাজের কারণে ঢাকার প্রায় ৩০ শতাংশ সড়ক এখন ক্ষতবিক্ষত। সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল স্থাপন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। এই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্ট হচ্ছে যানজট, প্রতিবছরই ঢাকার যানজট এবং রাস্তায় গাড়ির গড় গতিবেগ কমছে। এখন রাজধানীতে যানবাহন চলাচলের গতি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারের কাছাকাছি চলে এসেছে। ৫মিনিটের রাস্তা পার হতে ৪০ মিনিট থেকে দেড়ঘন্টাও লেগে যায়। এজন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং সংস্কার-উন্নয়নের নামে বিভিন্ন সংস্থার যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তার অর্ধেকটা গর্ত করে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। মানছে না কোনো নিয়মনীতি, উপেক্ষিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তও। রাস্তা কাটা ও খোঁড়াখোঁড়ির কারণে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো যেমন কমলাপুর, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, টিকাটুলি মোড়, গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, নিউ মার্কেট, মগবাজার, মৌচাকসহ বেশ কয়েকটি স্থানের প্রধান সড়কগুলোতে সকাল থেকেই বাড়তে থাকে যানজট। যার তীব্রতা দেখা যায় দুপুরে এবং এ যানজট দিন পেরিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত থেমে থেমে দেখা যায়।
রাজধানীর সড়ক খনন নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী, দিনে খনন কাজ বন্ধ রাখাসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে জরিমানার বিধান রয়েছে। নীতিমালায় আছে, রাজধানীতে দিনের বেলায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। বর্ষা মৌসুমে (মে-সেপ্টেম্বর) কোনো সড়ক মেরামত করা যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে খনন করতে হলে মূল ক্ষতিপূরণসহ অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ফি দিতে হবে। আর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির জরিমানা দিতে হবে মূল খরচের পাঁচগুণ। তাছাড়া সড়কে কাজ করার কমপক্ষে সাত দিন আগে প্রচার-প্রচারণা, কাজের বিবরণের সাইনবোর্ড লাগানো, একসঙ্গে বা মাসের পর মাস কোন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি না করা, নিয়মিত পানি ছিটানো, সড়কে মালামাল মজুত না করাসহ বিভিন্ন নিয়মকানুন নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। নীতিমালার কোনো শর্তে ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জরিমানা বা শাস্তি দেয়ারও বিধান রয়েছে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ বা তদারকি না থাকায় সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই নীতিমালা মেনে সময়মত কাজ শেষ করার তাগিদ অনুভব করছে না।
প্রতিদিন যারা যাতায়াত করেন, বিশেষ করে যারা সপ্তাহে ছয়দিন অফিসে যান, তাদেরকে এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তা কেটে চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ফলে দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। নিয়মিত যাত্রীরা বলছেন, চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, শহরের রাস্তায় পথচারী ও যানবাহন বৃদ্ধি এবং বেপরোয়া যান চালনার কারণে এই খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের।
রাজধানীর ট্রাফিক বিভাগ বলছে, চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে যানজটের এ ভোগান্তি থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবেন। এছাড়া বিভিন্ন রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে গেছে বলছেন তারা। রাস্তা সরু হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও রাজধানীর সড়ক ব্যবহারকারী যানবাহনের চালক ও পথচারী কেউই আইন মানছেন না বলেও অভিযোগ ট্রাফিক বিভাগের। রাস্তায় মানুষ, যানবাহন প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিন্তু বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলমান থাকায় রাস্তার জায়গা আরও কমছে। আবার পুরান ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে এবং মার্কেটের আশপাশে মানুষ রাস্তা দিয়েই হাঁটছে, অথচ সেখানে রিকশা চলার মতো অবস্থাও থাকে না।
রাজধানীর কমলাপুরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে উন্নয়ন কাজের কারণে রাস্তা কাটার জন্য যে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয় তা ভাষায় বলা যাবে না। রাস্তায় রিকশা ও বাসের আলাদা কোনো লেন নেই। একই রাস্তায় চলাচল করতে হয়। এছাড়া রাস্তার অধিকাংশ অংশ বন্ধ করে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে তাই গন্তব্যে যেতে সময় বেশি লাগছে। বাসে বসে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, ডিএসসিসি এলাকার বিভিন্ন অলিগলির রাস্তা দেখা যায় কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু রাস্তা কাটিংয়ের কারণে ফিনিসিং করা হয়নি। আর নতুন ওয়ার্ডগুলোতে রাস্তার কাজ পর্যয়ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছরই প্রকল্প দেয়া হচ্ছে এবং এসব প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বড় রাস্তা ও গলির রাস্তার কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে স্থানীয়দের চলাফেরা সহজ হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর শামসুল হক বলেন, সারা বছর চলাচলযোগ্য রাখতে হলে মানসম্মত সড়ক বানাতে হবে। পাশাপাশি বর্ষায় পানিবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। পিচঢালাই দেওয়া সড়ক যত ভালোভাবেই তৈরি করা হোক না কেন, পানিবদ্ধতা হলে তা টিকিয়ে রাখা কঠিন। বর্ষা হলেই যে পানিবদ্ধতা হয় তা নয়, অনেক সময় ড্রেন উপচে, ম্যানহোল উপচেও সড়কে পানি আসে। গুণগত মান ঠিক না থাকায় অলিগলির রাস্তা টেকে না। তদারকির অভাব কমবেশি থাকেই। সড়কে কিছুদিন পর কাটাকাটির মানে হলো সঠিক পরিকল্পনার অভাব।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অঘোষিত ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ-আফগানিস্তান
দৌলতখানে ব্যবসায়ীর বসতঘর থেকে ২০ বস্তা ভিজিডি'র চাল উদ্ধার করল পুলিশ
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ছাত্র হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা বাহার গ্রেফতার
খুনিরা কিভাবে পালিয়ে গেল জনগণ জানতে চায়- চরমোনাই পীর
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আলেম সমাজের ঐক্যের বিকল্প নেই - পীর সাহেব নেছারাবাদ
নতুন মাইলফলকের সামনে মিরাজ
ছোট্ট মুনতাহার শোকে কাঁদছে নেটদুনিয়াও
সূর্য তরুণ ব্লাড ডোনার ক্লাব’ মতলবের উদ্যোগে ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন
লিবিয়া আরো বাংলাদেশি কর্মী নিতে আগ্রহী : রাষ্ট্রদূত
আরো অনেক দেশের সাথে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করবে সরকার : বাণিজ্য উপদেষ্টা
জাবিতে ইন্সটিটিউটের নাম থেকে’বঙ্গবন্ধু’ বাতিলের দাবি, স্মারকলিপি প্রদান
ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে -ইসলামী আন্দোলন ঢাকা জেলা দক্ষিণ
মুরাদনগরে ইসলামী মহাসম্মেলনে আওয়ামী লীগের হাতিয়ার ছিল মিথ্যা বানোয়াট মামলা- হেফাজতে আমির
আ.লীগের বিচারের দাবিতে ঝিনাইদহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল
বৈষম্যের শিকার সিলেটের বিমান যাত্রীরা
উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ৩ জন
সিলেট সীমান্তে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি
গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ
মুনতাহার লাশ তার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলে দিতে চেয়েছিল মার্জিয়ার মা আলীফজান !
আ.লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল