একযোগে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি রোহিঙ্গাদের
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে একজোট হয়ে দাবি তুলেছে রোহিঙ্গারা। গত শুক্রবার এক সমাবেশ থেকে এ দাবি উত্থাপন করেছে তারা। রোহিঙ্গারা উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে বড়সড় এক সমাবেশের মাধ্যমে দেশে ফিরে যেতে এ দাবি তুলে। এবার রোহিঙ্গাদের নেতৃত্ব এগিয়ে এসেছে যুবকরা। সমাবেশ থেকে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত স্বদেশ ফেরত পাঠানোর দাবি জানানো হয়। না হয় একযোগে মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় তারা। একই সঙ্গে রাখাইনে-আরাকানে চলমান সংঘাতে সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ধর্য্য ধরার আহবান জানিয়ে কোনভাবেই স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে না আসার অনুরোধ জানানো হয়। গত শুক্রবার সকাল ৯টা দিকে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে জড়ো হয় উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গারা। অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের গায়ে ছিল সাদা শার্ট ও লুঙ্গি। মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মাঝেও বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আয়োজকরা জানিয়েছে, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প থেকে হেড মাঝি, সাব-মাঝি, ধর্মীয় নেতা ও নারীরা এ সমাবেশ অংশ নিয়েছেন। যেখানে একযোগে রোহিঙ্গাদের শ্লোগান ছিল অনেক হয়েছে আর নয়, এবার নিজের স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই। ক্যাম্প ১৩ এর বাসিন্দা ছলিম উল্লাহ বলেন, আমাদের দেশ আছে। মিয়ানমারের আরকান আমাদের দেশ। আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই।
সমাবেশে আসা ক্যাম্প ২৬ এর বাসিন্দা মো. হাবিব বলেন, এক-দুই বছর করে ৭ বছর পার করছি পরদেশে। এখানে আর থাকতে চাই না, নিজেদের অধিকার নিয়ে স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরওএফডিএমএনআরসি’র সংগঠক সৈয়দ উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের আরকানে আমাদের যারা আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবা ও ভাই-বোন আছে। তাদের ওপর অনেক নির্যাতন হচ্ছে। তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন কোনদিনও দেশ ছেড়ে চলে না আসে।
সমাবেশ থেকে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে একযোগে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরওএফডিএমএনআরসি’র প্রতিষ্ঠাতা মো. কামাল হোসাইন বলেন, সমাবেশে মা-বাবা, ভাই-বোন যারা এসেছেন, তাদের অধিকার যদি যুবকরা কাঁদে নেয় তাহলে ১ বছরের মধ্যে ইনশাল্লাহ আমাদের দেশে আমরা ফিরে যেতে পারব। ৩ ঘণ্টার সমাবেশ শেষে মোনাজাতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রতি শুকরিয়া জানানো হয়।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. ইকবাল বলেন, উখিয়ার কুতুপালং লাম্বাশিয়ায় রোহিঙ্গাদের সংগঠন ফর্সিবিলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিটির উদ্যোগে গত শুক্রবার সকালে এই সমাবেশটি হয়েছে। এ সমাবেশ থেকে তাদের দাবি ছিল তারা দ্রুত মিয়ানমার ফিরে যেতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা নিজ উদ্যোগে ক্যাম্পে প্রচারণা শুরু করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে এ সমাবেশ শেষ হয়।
ওদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে আরাকান আর্মির সাথে লড়াই তুমুল আকার ধারণ করেছে। রাত দিন গুলাগুলি দখল-পাল্টা দখলের খবর পাওয়া যাচ্ছে নিয়মিত। এর প্রেক্ষিতে রাখাইনের-আরাকানের সিট্টোএ-আকিয়াব শহরে কারফিউ জারি করেছে জান্তা সরকার। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কারফিউ জারির ঘোষণা দেওয়া হয়। জান্তা প্রশাসন স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি বলবত থাকবে।
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর জন্য চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মন্ত্রীর অনুরোধে তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রমতে গত শুক্রবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠানরত তৃতীয় ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিস্টেরিয়াল ফোরামের সাইডলাইনে ভিয়েতনাম, বেলজিয়াম, চেক ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এসময় বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র, ইউরোপীয় বিষয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী হাদজা লাহবিব বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অব্যাহত সমর্থনের জন্য বেলজিয়াম সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
পাশাপাশি চেক রিপাবলিকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যান লিপাভস্কি ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রোমের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোত মন্ত্রী চারটি দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য ও বাংলাদেশের উদীয়মান খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এতে গুরুত্ব পায়।
মিয়ানমারে সংঘাত চললেও সীমান্তের ঘুমধুমের লাল ব্রিজ হয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান। তিনি গত শুক্রবার দুপুরে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি তাদের দেশে ফেরৎ যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাই দু’দেশের সিদ্ধান্ত মতে আশ্রয় শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সে দেশের ফেরত পাঠাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি ২টি ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্যাম্প ২টির মধ্যে একটি তুমব্রু, পশ্চিমকূল পাহাড় পাড়ায়। অপরটি ঘুমধুম বিজিবি চৌকির পাশে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?
হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০
উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩
কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের
দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা
ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা
ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?
বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯
কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা
এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন
৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত