রিজার্ভের অর্থ চুরি ঘটনায় ১২ কর্মকর্তা চিহ্নিত
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার সরিয়ে নিয়েছিল হ্যাকাররা। ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। আট বছর আগে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ওই ডলার চুরি হয়। দুর্বৃত্তরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা সরিয়ে নেয়। এই অর্থ ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজাল ব্যাংকের শাখায় চারটি অ্যাকাউন্টে যায় এবং সেখান থেকে দ্রুত টাকা উত্তোলন করা হয়।
পরে বিভিন্ন সময় ফেরত আসে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এখনো রয়ে গেছে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৫৬১ কোটি টাকা। ঘটনার ৩৯ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি, মানি লন্ডারিং ও সাইবার অপরাধ দমন আইনের ধারায় মামলা করা হয়। পরে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। তবে সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির এই ঘটনায় জড়িত হিসেবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, জাপান, শ্রীলঙ্কা ও হংকং—এই আট দেশের ৭০ ব্যক্তির নাম এসেছে। এ মামলার ফরেনসিক প্রতিবেদন ও হালনাগাদ অন্তর্র্বতী প্রতিবেদন গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়েছে সিআইডি। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে, সেখানে ফরেনসিক প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ ইয়াসিন বলেন, তিনি এ মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা। তার আগে তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এ বিষয়ে আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। পরে আদালত অনুমতি দিলে ফরেনসিক ও হালনাগাদ অন্তর্র্বতী প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংককে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে চলা মামলার স্বার্থে এই তথ্যগুলো দেয়া হয়েছে। সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োজিত আইনি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করার কথা। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার জন্য এ পর্যন্ত ৭৬ বার আদালত থেকে সময় নিয়েছে সিআইডি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সর্বশেষ তারিখ ছিল গত ৩১ ডিসেম্বর। তদন্ত কর্মকর্তার সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন ২৫ ফেব্রুয়ারি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুইফট সিস্টেমের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংরক্ষণে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে হ্যাকাররা দেশের রিজার্ভের টাকা সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরসহ ১২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দায় পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। বাকি কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন একজন নির্বাহী পরিচালক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত), একজন মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে ডেপুটি গভর্নর), চারজন যুগ্ম পরিচালক (তাদের দুজন বর্তমানে উপমহাব্যবস্থাপক, একজন যুগ্ম পরিচালক ও একজন অবসরে), তিনজন উপমহাব্যবস্থাপক (দুজন বর্তমানে জিএম) ও দুজন উপপরিচালক। তৎকালীন গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকের বাইরে বাকি কর্মকর্তারা তখন ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং, আইটি অপারেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ, পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ এবং ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিংস রুমের কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের কেউ সার্ভার কক্ষ খোলা রেখে, কেউ ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে, কেউবা অনুপস্থিত থেকে প্রকারান্তরে হ্যাকারদের সুযোগ করে দিয়েছেন এমন তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিস্ট সিআইডির কর্মকর্তারা।
তৎকালীন গভর্নরের দায় সম্পর্কে তদন্তে যে বিষয়টি উঠে এসেছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন রিজার্ভ সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) সার্ভার একটি সংবেদনশীল ব্যবস্থা। তা সত্ত্বেও গভর্নর সুইফটের মাধ্যমে আরটিজিএসের (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) সংযোগ করার অনুমোদন দেন এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেন। এটাকে অপরাধমূলক উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা। আরটিজিএস একটি বিশেষায়িত তহবিল স্থানান্তর ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তর করা যায়।
তদন্তে আরও এসেছে, তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর-৪ আবুল কাশেম সুইফটের মাধ্যমে আরটিজিএস সার্ভিস প্রদানের বিপক্ষে ছিলেন। যার কারণে আরটিজিএসের সার্ভিস দেওয়া সংক্রান্ত ফাইল গভর্নর নিজে সই করে অনুমোদন দেন। এ ছাড়া অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি দ্বারা সুইফট সার্ভারের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা, রিজার্ভ চুরি হওয়ার পর বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানকে ক্রাইম সিনে (অপরাধ সংঘটনের স্থানে) এনে অপরাধস্থলের তথ্যপ্রমাণাদি পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করা, রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি ৪০ দিন পর্যন্ত গোপন রাখার বিষয়টিকেও অপরাধমূলক উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিআইডি।
সিআইডি সূত্র বলছে, তদন্তে যে ১২ কর্মকর্তার নাম এসেছে, তাদের মধ্যে মেজবাউল হকও রয়েছেন। তার সম্পর্কে তদন্তে এসেছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর দেশের কোনো তদন্ত সংস্থাকে না জানিয়ে তৎকালীন উপমহাব্যবস্থাপক মেজবাউল হক ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিদেশি দুটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন। তাদের দিয়ে ক্রাইম সিন থেকে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহের নির্দেশ দেন, যা পুরোপুরি বেআইনি কাজ। এর মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও আলামত নষ্ট হয়ে যায়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?
হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০
উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩
কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের
দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা
ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা
ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?
বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯
কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা
এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন
৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত