ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা আজ প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে ডিআরইউ

তদন্তে অগ্রগতি শূন্য

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকান্ডের তদন্তের অগ্রগতি শূণ্য। এক যুগ হয়ে গেলেও জড়িতরা অধরা। অথচ ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় তদন্ত শেষ করা হবে। এক যুগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন হয়েছে তিনবার। এই সময়ে একাধিক সংস্থার হাত বদলে আদালত থেকে ১০৫ বার সময় নেয়া হলেও শেষ হয়নি তদন্ত। দাখিল হয়নি প্রতিবেদন। সবশেষ গত ২৩ জানুয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। সেদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেন। এই হত্যার প্রতিবাদে রোববার ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।

এরই মধ্যে আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের এক কথায় তদন্ত নিয়ে হতাশা বেড়েছে সাংবাদিক সমাজের। গত ১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মামলায় যদি পুলিশ তদন্ত শেষ না করতে পারে, তাহলে কী জোর করে সেই তদন্ত সমাপ্ত করে একটা চূড়ান্ত প্রতিবেদন কিংবা অভিযোগপত্র দেওয়ানো ঠিক তাদের তদন্তে যতদিন সময় লাগে সঠিকভাবে দায়ি নির্ণয় করতে, তাদেরকে ততটুকু সময় দিতে হবে। সেটা যদি ৫০ বছর হয়, ৫০ বছর দিতে হবে। যদিও পরে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তার কথা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ৫০ বছর কথাটি তিনি আপেক্ষিকভাবে বলেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ মামলাটি তদন্তভার পড়েছে র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলমের ওপর। মামলার তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সবশেষ গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলার বিষয়ে বক্তব্য দেয়। তদন্তে বিলম্বের বিষয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা তদন্তের ক্ষেত্রে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আলামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছি। ডিএনএ রিপোর্টগুলো আমরা কয়েকদিন আগে হাতে পেয়েছি। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৬০ জন সাক্ষীর বক্তব্য গ্রহণ করেছে র‌্যাব। সন্দেহভাজনদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এখনও তদন্ত চলমান রয়েছে। মামলাটি সরকার, র‌্যাব অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সেই প্রতিবেদন জমা দেব।

নিহত সাংবাদিক সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, একযুগ পার হতে যাচ্ছে সাগর-রুনির হত্যার। এখন পর্যন্ত আমার ছেলের হত্যাকারী কে সেটাই জানতে পারলাম না। ছেলেকে তো আর ফেরত পাবো না। আমার একটাই কথা, ছেলে হত্যার বিচার চাই। এখন পর্যন্ত আমার ছেলের কবর জিয়ারত করতে যাইনি। প্রতিজ্ঞা করেছি, যেদিন আমার ছেলের হত্যাকারীদের দেখবো, ওইদিন কবর জিয়ারত করবো। এর আগে যদি আমার মৃত্যু হয়, হোক। এরপরও খুনিদের না দেখে আমি ছেলের কবর জিয়ারত করতে যাবো না।

র‌্যাবের তদন্তে এই ধীরগতি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, র‌্যাব তো সব জানে। প্রতিবেদন জমা দিলেই তো হয়। প্রতিবেদন যদি জমা না দিতে পারে সেটাই তারা প্রকাশ করুক। এভাবে ঝুলিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। কত বড় বড় মামলার সমাধান করছে র‌্যাব। কিন্তু সাগর-রুনির বেলায় ১২ বছরেও সমাধান করতে পারলো না। এমন হচ্ছে কেন আমার বোধগম্য নয়।

মামলার বাদী মেহেরুন রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান সাংবাদিকদের জানান, ১২ বছর ধরে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চেয়ে নিচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এটি একটি লজ্জাজনক বিষয়। প্রতিবেদন জমা না দেওয়া একটি খারাপ সংস্কৃতি চালু হতে যাচ্ছে। দেশে কোনো অপরাধ করলেও বিচার হয় না, এটাই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। সরকার চাইলে সত্য ঘটনা বের করতে পারে। সেখানে ১০৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা, আর সেই সময়ও মঞ্জুর হচ্ছে। অথচ তারা এলিট ফোর্স দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, দুঃখজনক বিষয় র‌্যাব ছোটখাট বিষয়গুলো নিয়ে বড় বড় করে প্রেস ব্রিফিং করে। অথচ আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে তাদের কোনো কাজই দেখাতে পারলো না। আমাদের এটাই দাবি প্রকৃত অপরাধীদের বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ওই বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব)। সেই থেকে ১২ বছরেও সংস্থাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এমনকি সর্বশেষ ২০১৭ বছরের ২১ মার্চের পর আর কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়নি। মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অপর আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্রপাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিন আছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে আছেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের ঘাড়ে বসে ব্যবসা করার চেষ্টা করবে - মুশফিকুর রহমান

আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের ঘাড়ে বসে ব্যবসা করার চেষ্টা করবে - মুশফিকুর রহমান

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু

আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু

বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ

বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ

শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু

শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু

শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে

শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে

এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট

এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম

কাশ্মীরে ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার পথে বাস উল্টে নিহত ৪ সীমান্তরক্ষী নিহত

কাশ্মীরে ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার পথে বাস উল্টে নিহত ৪ সীমান্তরক্ষী নিহত

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে ভারত যোগ, ঘটনার পরেই উধাও ভারতীয় যুবক

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে ভারত যোগ, ঘটনার পরেই উধাও ভারতীয় যুবক