খণ্ডকালীন অভিজ্ঞ শিক্ষকই ভরসা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণে ভারত, পাকিস্তান ও জাপানের আদলে ১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। তিন দশকে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও কলেবর বেড়েছে অনেক। এখন শিক্ষা কার্যক্রমেই আছে ১০০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অনুমোদন পেয়ে অপেক্ষায় আছে আরো ৬টি। অপেক্ষায় আছে আরো বেশ কয়েকটি। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকের ক্ষেত্রে এখনো ভরসা খণ্ডকালীনই। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সার্বক্ষণিক শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সর্বমোট সংখ্যায় এটি পূরণ হলেও পৃথকভাবে প্রফেসর ও এসোসিয়েট প্রফেসরের ক্ষেত্রে রয়েছে সঙ্কট। ইউজিসির ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষা কার্যক্রমে থাকা ১০০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৫০৮ জন। এর মধ্যে পূর্ণকালীন শিক্ষক ১২ হাজার ১৩ জন, আর খণ্ডকালীন ৪ হাজার ৫ জন। তবে পূর্ণকালীন শিক্ষকদের মধ্যে বেশিরভাগই লেকচারার। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন প্রফেসর ৮৫৯ জন আর খণ্ডকালীন প্রফেসর আছেন ৯৯৯ জন। এসোসিয়েট প্রফেসর পূর্ণকালীন ৯৮৬ জন আর খণ্ডকালীন ৫৪৫ জন, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পূর্ণকালীন ৩হাজার ২৯৩, খণ্ডকালীন ৬৯৫ জন। আর লেকচারার পূর্ণকালীন ৬ হাজার ৮৪৫ জন এবং খণ্ডকালীন ১ হাজার ৫৭৭ জন।
ইউজিসি বলছে, আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে পূর্ণকালীন শিক্ষক কমে যাওয়া এবং খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন,২০১০ এর ৩৫(৩) অনুযায়ী, কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খণ্ডকালীন ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকরা স্থায়ী শিক্ষকের মতো দরদ নিয়ে পড়ানো ও সংশ্লিষ্ট এবং শিক্ষার্থীদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি নাও চাইতে পারেন। বস্তুত নিজের স্থায়ী কর্মস্থলের বাইরে টাকা কামাতে যাওয়া অতিথি শিক্ষক আপন প্রতিষ্ঠানের মতো সেবা দেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এই সমস্যা যে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে তা নয়, কিছু কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক পাঠদান করছেন খণ্ডকালীন হিসেবে।
ইউজিসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বমোট শিক্ষক সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৫০৮ জন। যা আগের বছরের তুলনায় ১ হাজার ১১৫ জন বেশি। এর মধ্যে পূর্ণকালীন শিক্ষক ১২ হাজার ১৩ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৯ জন কম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ৪ হাজার ৫ জন। যা আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত পাঠদান ও দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির জন্য সিনিয়র শিক্ষকের বিকল্প নেই। কিন্তু ঢাকার বাইরে অবস্থান, সংশ্লিষ্ট স্থানে আধুনিক জীবনমানের সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে হয়তো অভিজ্ঞ শিক্ষক পাওয়া কষ্টকর; কিন্তু এর চেয়ে বড় সমস্যা হল আগে যোগদান করা শিক্ষকরা সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ দিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, এটি যে কোনো মূল্যে দূর করতে হবে। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে সিনিয়র ও নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগসহ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যান্য সমস্যা দূর করা কঠিন কিছু হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০২২ সারে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাস্তবে বেসরকারি ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বক্ষণিক শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সার্বক্ষণিক শিক্ষকের সংখ্যা ১২ হাজার ১৩ জন, খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা ৪ হাজার ৫ জন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সার্বক্ষণিক প্রফেসরের সংখ্যা ৮৫৯ জন, খণ্ডকালীন প্রফেসরের সংখ্যা ৯৯৯ জন। পূর্ণকালীন এসোসিয়েট প্রফেসর ৯৮৬ জন, খণ্ডকালীন ৫৪৫ জন। সার্বক্ষণিক শিক্ষকদের মধ্যে আধিপত্য লেকচারারদেরই। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষকের মধ্যে লেকচারারই ৬ হাজার ৮৪৫ জন। অন্যদিকে খণ্ডকালীন লেকচারারদের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগাং, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন এন্ড সায়েন্সেস, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বরিশাল, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাত্র ১ জন করে প্রফেসর। ২ জন করে প্রফেসর আছে আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইউনিভার্সিটি, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি খুলনা, হামর্দদ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে। একজনও প্রফেসর নেই কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (বিএআইইউএসটি) কুমিল্লায় (পূর্ণকালীন)।
পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এ সার্বক্ষণিক শিক্ষকের চেয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষক আছেন ২১৯ জন, খণ্ডকালীন ৩১৬ জন। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ায় পূর্ণকালীন ৩১জন, খণ্ডকালীন ৪৬ জন, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে সার্বক্ষণিক ৫৪ জন, খণ্ডকালীন ৮০ জন, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, খুলনায় পূর্ণকালীন ৬৫ জন, খণ্ডকালীন ৯৬ জন, চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে সার্বক্ষণিক ৪৭ জন, খণ্ডকালীন ৬৩ জন। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন ১২ জন আর পূর্ণকালীন ১৪ জন, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটিতে পূর্ণকালীন ৩৮ জন এবং খণ্ডকালীন ৭৪ জন। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূণকালীন ও খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি।
অথচ সিনিয়র -অভিজ্ঞ শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতে-কলমে নেয়া জ্ঞানই শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করাসহ যোগ্য মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠার মূল মাধ্যম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে সুনির্দিষ্ট কোনো বই অনুসরণ না করে অভিজ্ঞ শিক্ষকের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও রেফারেন্সই শিক্ষার্থীদের পথ দেখায়। এ অবস্থায় নতুন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খণ্ডকালীন ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের পদকে নিরুৎসাহিত করে স্থায়ী ও সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগের পথ সুগম করার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব সহসায় লেকচারার পায়। কিন্তু এসোসিয়েট প্রফেসর কিংবা প্রফেসর পায় না। পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে তাদের লেকচার পদোন্নতি পেয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও এসোসিয়েট প্রফেসর হচ্ছে। কিন্তু প্রফেসর পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অপেক্ষা করতে হয় কেউ অবসর গ্রহণ করার। এজন্য কিছুটা সমস্যা হয়। তারপরও আমরা বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে প্রফেসর ও এসোসিয়েট প্রফেসরের বিষয়ে কিছুটা কঠোর হচ্ছি। এজন্য সাম্প্রতিক সময়ে উন্নতি হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের
পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন
দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন
আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান
ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা
মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ
কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত
চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ
ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ
রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু
সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ
তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল
আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু
বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি
বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ
শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু
শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে