ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী

আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ভোটার যেন না আসে, নির্বাচনটা যাতে অবাধ না হয়, নির্বাচনই যেন হতে না পারে, সেই চেষ্টা ছিল; যাতে নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় যে এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কাজেই নিষেধাজ্ঞা দাও, ওইটা দাও। আমাদের যখন বলেছিল নিষেধাজ্ঞা দেবে, তখন আমিও বলেছিলাম, দরকার হলে আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব, আমরাও দিতে পারি। আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি বলেই বলেছিলাম। গতকাল শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নৌকা ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। কারণ নির্বাচন বানচালের জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। প্রার্থিতা উন্মুক্ত না থাকলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হতো।

গণভবনে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার নেতা, দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, সিটি ও পৌর মেয়র, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশেষ বর্ধিত সভাকে জাতীয় নির্বাচনের পরে মিলনমেলা বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে। যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে, কী দেখে তারা বলছে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় নাই। এটা তাদের বলতে হবে। সেটা বলছে না। কিন্তু তারা বলে যাচ্ছে, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয় নাই। তিনি আরো বলেন, কিছু দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে এ ধরনের কথা বলা হয়। যে দেশই বলুক, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কীভাবে, কোথায় সমস্যা, তাদের বলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনো তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় খুনোখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এত কথার মধ্যে আমাদের দেশটা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ, প্রতিপক্ষ থাকুক, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হোক, ভোটার আসবে, নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে, সেই অধিকারটুকু জনগণ পাক। সেইভাবে নির্বাচন করেছি বলেই আজকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। অনেকেই বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। এই কথাটা আমাদের নেতা-কর্মীদের মাথায় রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে।

নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মন-কষাকষি, নানা রকম কিছু হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে; এখন ভুলে যেতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে। যদি কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেটা সমাধানের জন্য আমরা আছি, কেন্দ্রীয় কমিটি করবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোনো আত্মঘাতী সংঘাত যেন না হয়; সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। দোষারোপ করার অর্থ হয় না। এবারের নির্বাচন যদি উন্মুক্ত না হতো, তাহলে শুধু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হতো। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার অর্জন নস্যাৎ হয়ে যেত।

জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে জেনেই বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই সঙ্গে তারা জুগিয়েছিল কিছু প্রভু। তাদের নির্দেশমতো বিএনপি আন্দোলন করে। এখনো কিছু কিছু লম্ফঝম্প করছে, করতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণের সংগঠন, এটা তাদের মনে রাখতে হবে। এটা ভেসে আসেনি কিংবা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল পকেট থেকে এ সংগঠন বের হয়নি। এ সংগঠন মাটি-মানুষের ভেতর থেকে বেড়ে উঠেছে। মানুষই এ সংগঠনের বড় শক্তি।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু কাজ করেছেন, কারা করতে পারেননি, সেটাও যাচাই-বাছাই হয়ে যাবে। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা, সেটাই দেখব। কোনো রকম সংঘাত চাই না। যিনি এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দ্রব্যমূল্য কমাতে সবাইকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ করে পরিবহনের ক্ষেত্রে বা পাইকারি বাজারে চাঁদাবাজি ও অবৈধ মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। আপনারা এখানে আছেন বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি, এখানে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পান, সেটার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে, যে অর্থ আমরা ব্যয় করি, তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কাজেই এখন থেকে যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তাকে তত বেশি দাম দিতে হবে। আমরা সেইভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর যারা একেবারে পারবে না, তাদের জন্য ছাড় আছে। কিন্তু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যারা ব্যয় করবে, তাদের অতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে।

বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো যেন ঠিকমতো চলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগে বিএনপি চুপিসারে আগুন দিত গাড়িতে, রেলে সব জায়গায়। এবার তারা প্রকাশ্যে দিয়েছে, আবার ছবি তুলেছে। তাদের গুরু লন্ডন থেকে বলে দিয়েছে যে ছবি পাঠাতে হবে। ফলে তারা যে আগুন দিচ্ছে, সেই ছবি আর সাক্ষ্যপ্রমাণটা পাওয়া যাচ্ছে। যে যে এলাকায় এই ঘটনাগুলো ঘটেছে, এগুলো জোগাড় করেন। এই মামলাগুলো যেন ঠিকমতো চলে এবং শাস্তিটা যেন পায়। তাদের নেতাই তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কাকে দোষ দেবে? নেতাকে খুশি করতে ছবি তুলেছে, পাঠিয়েছে। এখন ডিজিটাল সিস্টেমে যেভাবেই পাঠাক, সংগ্রহ করা কোনো কঠিন ব্যাপার না। সেভাবে প্রমাণগুলো এসেছে।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির নির্যাতনের মামলা এখনো রয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই মামলাগুলো যাতে যথাযথভাবে হয়, সাক্ষী যেন হয় এবং এই দুষ্কৃতকারীরা যেন যথাযথ শাস্তি পায়। ভবিষ্যতে যেন আর আগুন দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করার সাহস না পায়, সে ব্যবস্থাটাই আমাদের করতে হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির অর্থ কোনো ভালো কাজে লাগে না; বরং তাদের সন্তানেরাই বিপদে পড়বে। এই বদনাম যেন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কেউ জয়ী হয়েছেন, কেউ জয়ী হতে পারেননি। কিন্তু কিছু ভোট তো পেয়েছেন। সেটি মাথায় রেখে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস যেন নষ্ট না হয়, সেটি আপনাদের চলনে-বলনে প্রমাণ করতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি   - মুশফিকুর রহমান

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু

আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু

বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ

বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ

শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু

শেরপুর বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে চা দোকানীর মৃত্যু

শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে

শরীয়তপুর পৌরসভার বেশীর ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা, ভোগান্তি চরমে

এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট

এবার বম্বে হাইকোর্টে জোর ধাক্কা মোদি সরকারের, বাতিল ফ্যাক্ট চেক ইউনিট