বসন্তের হাওয়া বইমেলায়
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
ফুলের বাজারে আগুন। একটি গোলাপের মূল্য ৬০ থেকে ৮০ টাকা। রাস্তায় যানযটে অচলাবস্থা। তবুও আটকায়নি বসন্তের আগমন। প্রকৃতির বুকে ঠিকই আগমন ঘটেছে বসন্তের। হাতে গোলাপ, মাথায় ফুলের ক্রাউন, পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ি ও বাহারি রঙের পাঞ্জাবি গায়ে নগরী জুড়ে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে বসন্তের আগমনী বার্তা। আর বসন্তের সে হাওয়া লেগেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলায়। গতকাল বুধবার ছিল মাঘের শেষ ও ফাল্গুনের প্রথম দিন। এদিন প্রকৃতি তার রুক্ষ ভাব ছেড়ে ধারণ করেছে বসন্ত। একই দিনে যুক্ত হলো ভালোবাসা দিবস। বসন্ত, ভালোবাসা আর সারি সারি বইয়ের দৃশ্য মন কেড়েছে তরুণ-তরুণীদের। গতকাল বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।
গতকাল বুধবার ছিল অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন। শুরু থেকে এবারের মেলা জমে উঠেছে। পাঠক দর্শনার্থীদের আনাগোনায় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। বসন্তের আগমন ও ভালোবাসা দিবস যেন যুক্ত করেছে পুরোনো পালে নতুন হাওয়া। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকতেই নাকে ভেসে এলো ফুলের ঘ্রাণ। যতদূর চোখ যায়, শুধু বাসন্তী রঙের রাজত্ব। হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হাঁটছেন তরুণ-তরুণীরা। একে অপরের হাতে বই তুলে দিয়ে ছবি তুলছেন কেউ কেউ। কারও হাতে ফুল ও বই একসঙ্গে শোভা ছড়াচ্ছে।
গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ছিল তরুণ-তরুণীদের উপচে পড়া ভিড়। ভিড়ের মধ্যে পা বাড়ানোই ছিল দুষ্কর। এদিক ওদিক থেকে মুখোমুখি রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও মাইক্রো বাসে একরকম অচলাবস্থা তৈরি হয় পুরো এলাকায়। এর মধ্যেও ঘ্রাণ ছড়াচ্ছিল তরুণীদের মাথার ফুলের টায়রা।
বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন বাসন্তী সাজে দুই তরুণী। মাথায় ছিল ফুলের টায়রা। কথা বলতে চাইলে বেশ উৎসাহ নিয়ে সামনে এগিয়ে আসে। জানান সকাল থেকে বকুলতলার বসন্ত উৎসব উপভোগ করতে এসেছেন আজিমপুর থেকে। আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের এ দুই শিক্ষার্থী মূলত মেলায় এসেছেন ঘুরতে। তবে ঘুরেফিরে কোনো বই পছন্দ হলো নিতেও পারেন বলে জানান তারা।
এই দুই তরুণীর মতো এদিন অসংখ্য তরুণ-তরুণী মেলায় এসেছেন কেবল দর্শনার্থী হিসেবে। মেলার বিক্রয়কর্মীরা জানান, এদিন মেলায় পাঠক দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও মূলত বেশিরভাগ ছিল কেবল দর্শনার্থী। তুলনামূলক বেশি সংখ্যক বইয়ের বিক্রি হলেও দর্শনার্থীদের তুলনায় সেটা ছিল অনেক কম। এদিন তরুণীরা কেবল দলে দলে ঘুরছিলেন। কেউ কেউ ঘুরছিলেন প্রিয়জনের সঙ্গে। এই ভিড় বিকেলে আছড়ে পড়ে বইমেলার দুই প্রাঙ্গণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিতে।
অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এদিন ছিল লেখক পাঠকের মিলনমেলা। অন্য প্রকাশ, অনন্যা, অন্য ধারা, সময় প্রকাশনী, মিজান পাবলিশার্স, প্রথমা প্রকাশনী, মাওলা ব্রাদার্সের মতো বিখ্যাত সব প্যাভিলিয়ন ঘিরে ছিল পাঠক দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রিয় লেখকের সাথে ক্যামেরাবন্দী হতে ছিল এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। লেখকরাও ছিল ভক্তকুলদের সন্তুষ্ট করায় নিমগ্ন। এরই ফাঁকে বিক্রয়কর্মীরাও পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন পছন্দের বইগুলো। এমনই জটলাময় ছিল গতকালের মেলা প্রাঙ্গণ।
গতকাল বুধবার মেলার ১৪তম দিনে নতুন বই এসেছে ৯১টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাফাত আলম মিশু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুজাতা হক এবং মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর আবদুল মান্নান চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল জনমানুষের সামুহিক আন্দোলন-সংগ্রামের পরস্পরাগত বহুমাত্রিক ঘটনাপুঞ্জের একটি দৃশ্যমান রূপ। আর এই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যাঁরা ব্যক্তি থেকে সময়ের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন, ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। আশি বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি ছিলেন একাধারে মেধাবী ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী, লেখক, গীতিকার, সুবক্তা, এবং আইনজীবী। তবে সব কিছু ছাপিয়ে তাঁর বড়ো পরিচয় তিনি একজন ভাষাসংগ্রামী এবং মুক্তিযোদ্ধা। গাজীউল হক নিজে লেখক ছিলেন, তাই তাঁর জীবনপাঠের ক্ষেত্রে তাঁর রচনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হাতে পারে।
ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব বলে মন্তব্য করেন আলোচকবৃন্দ। সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক আমৃত্যু তাঁর দুঃসাহসী ও দৃড় মানসিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসে তাঁর কর্ম ও আদর্শ চিরঅম্লান হয়ে থাকবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, কবি শাহেদ কায়েস, লেখক ও সংগীতজ্ঞ তানভীর তারেক এবং কথাসাহিত্যিক মাজহার সরকার। আজ বৃহস্পতিবার ১৫তম দিনে মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, শেষ হবে রাত ৯টায়। বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: আবদুল হালিম বয়াতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবায়ের আবদুল্লাহ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং মোঃ নিশানে হালিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাইদুর রহমান বয়াতি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পঞ্চগড়ে ছয় ঘন্টায় ১৩ শতাংশ ভোট প্রদান
শপথ নিয়েই পশ্চিমকে যে কঠোর বার্তা দিলেন পুতিন
'শিক্ষকদের গায়ে হাত দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ নাই'
দুপুর গড়িয়ে গেলেও মানিকগঞ্জ হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম
৪ ঘন্টায় সিলেটের ৪ উপজেলায় ভোটের হার ১৮ শতাংশের কিছু বেশি, অনেক কেন্দ্রে ভোটার শূন্য
‘তুফান’ সিনেমার টিজারে ঝড় তুলেছেন শাকিব
দোয়ারাবাজারে শিক্ষার্থীদের তৎপরতায় বাড়ছে চোরাচালান!
বঙ্গোপসাগরে লবণবাহী ট্রলার ডুবি, উদ্ধার ৩৪
জাল ভোটের অভিযোগ, সিলেট সদরে একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত
লৌহজংয়ে হঠাৎ পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে শতাধিক পরিবার
ফুলপুর উপজেলায় চলছে ভোট গ্রহণ, ভোটার উপস্থিতি কম
ভারত এখন সরাসরি রক্তাক্ত আক্রমণ চালাচ্ছে বাংলাদেশে: রিজভী
নাটোরের গুরুদাসপুরে ছেলের ওপর অভিমান করে বাবা-মায়ের বিষ পান
বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন কারামুক্ত
ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল
পঞ্চগড়ে চার ঘন্টায় ভোট পড়েছে ৮ শতাংশ
র্যাবের পৃথক অভিযানে বিদেশী মদ-বিয়ার উদ্ধার, পরোয়ানাভুক্ত আসামীসহ গ্রেফতার-৩
রাফা নিয়ে উত্তেজনা: ইসরাইলে অস্ত্র চালান আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র
কক্সবাজারে তিন উপজেলায় চলছে ভোট গ্রহণ, চ্যালেঞ্জের মুখে জেলা আ.লীগ সভাপতি ও সম্পাদক
চীন ও পশ্চিমের বৈরিতার নেপথ্যে যে বোমা হামলা