বইমেলায় প্রতিবন্ধীদের সেবায় সুইচ ফাউন্ডেশন
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন পথে সাদা পোশাকে হইল চেয়ার নিয়ে বসে আছেন একদল তরুণ-তরুণী। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেই চোখে পড়ে প্রতিবন্ধী কিংবা দৃষ্টিজয়ী বইপ্রেমীদের হুইলে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মেলায়। কেউ বা যাচ্ছেন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীতে, আবার কেউ যাচ্ছেন হুইলে চড়ে পুরো মেলা চষে বেড়াতে। কথা বলে জানা যায়, প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানো এসব তরুণ-তরুণী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল স্বেচ্ছায় নিবেদিত প্রাণ। তারা কাজ করছেন একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‹সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ› এর হয়ে।
ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধা-বনিতা, প্রতিদিন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এসে ভিড় করেন বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলায়। লেখক পাঠকদের পদচারণায় মুখরিত এ প্রাঙ্গণে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে প্রতিবন্ধীরা। তবে তাদের জন্য পুরো ফেব্রুয়ারি জুড়ে আশার আলো হয়ে প্রস্ফুটিত হয় ‹সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ›।
মেট্রোরেলের সুবাদে এ বছর শুরু থেকেই মেলায় নামে পাঠক দর্শনার্থীদের ভিড়। বইয়ের ঘ্রাণে ছুটে আসা এ মিছিলে পিছিয়ে নেই প্রতিবন্ধীরাও। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে বা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যারা হাঁটাচলা করতে পারছেন না, তারাও আসছেন বইমেলায়। অদম্য এই বইপ্রেমিদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটাতে পাশে আছেন ‹সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন›। গ্রন্থমেলায় এসব প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে হুইল চেয়ার সেবা দিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।
জানা যায়, বাংলা একাডেমি ও বিকাশের সহযোগিতায় তারা এই সুবিধা দিয়ে আসছেন গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন থেকে। গ্রন্থমেলায় তাদের সেবার অংশ - হিসেবে প্রতিদিন মেলার টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে দুইটি টিমে ২০ টি হুইল - চেয়ার থাকে। পাশাপাশি এতে ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। প্রতিবন্ধী কিংবা চলাফেরা করতে অক্ষম যে কেউ বিনামূল্যে সেবাটি নিতে পারছেন।
গতকাল সোমবার গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ সরেজমিনে দেখা যায়, স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনিতে ব্রেইল বইয়ের নেশায় ছুটে এসেছেন অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাদের অনেকে টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উভয় টিমের সাহায্যে ব্রেইল প্রকাশনীতে সানন্দে উপস্থিত হন। তারা এই সুবিধা পেয়ে সুইচ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান।
সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বইমেলার স্বেচ্ছাসেবকদের দলনেতা আলামিন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা প্রত্যেক বছরের বইমেলায় নিজেদের বন্ধু বান্ধবদের মধ্য থেকে ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও বাংলা একাডেমির দেওয়া ২০ টি হুইল চেয়ার নিয়ে উপস্থিত থাকি প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করার জন্য। দৈনিক ৮ থেকে ১০ জন কিংবা কখনো কখনো ২০জন প্রতিবন্ধী গ্রন্থপ্রেমী বইমেলায় আসেন। এছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ১৫ জনেরও বেশি মানুষ ঘুরতে আসেন। প্রতিবছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সাল থেকে হুইল চেয়ার সেবা দিয়ে আসতেছি আমরা।
জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয় সংগঠনটি। সুইচ নামকরণের মধ্য দিয়ে নতুন উদ্দেশ্য তৈরি করার প্রয়াসে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। কাজের ধারাবাহিকতা হিসেবে এই সংগঠন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সচেতনতা প্রোগ্রাম করা, পুরনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করে ১০ টাকায় গরিবদের মাঝে বিতরণ,২০১৬ সালে ঢাকা উদ্যানে সুইচ তামিনা বানু বিদ্যানিকেতন ও গাবতলিতে সুইচ বিদ্যানিকেতন নামে দুইটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ‹সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ› এটা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা সংগঠন। আমরা যখন প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বিশেষ কিছু কাজ আমরা হাতে নেই। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। তারপর ২০১৫ সাল থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য দুইটা স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করি। এবং ২০১৬ সাল থেকে এই হুইল চেয়ার সার্ভিস শুরু করি।
মেলায় হুইল চেয়ার সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে যখন আমরা প্রথম খেয়াল করি যে বইমেলায় দুইদিক থেকে দুইটা গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তখন ভাবলাম বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা কীভাবে মেলায় আসবে! তখন থেকেই তাদের জন্য ভিন্নরকম কিছু করার চিন্তা থেকেই মূলত বাংলা একাডেমির সাহায্যে আমরা এই উদ্যোগটা গ্রহণ করি। তখন থেকেই আমরা ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী ২০টি হুইল চেয়ার নিয়ে মেলায় আগত প্রতিবন্ধীদের সেবা দিয়ে আসছি।তিনি বলেন, প্রতিদিনই ৪ থেকে ৫ জন প্রতিবন্ধীকে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কখনো বা ২০ জনও আসেন সেবা নিতে। তবে মেলা প্রাঙ্গণে জমি অসমতল হওয়ায় অনেকটাই অসুবিধায় পড়তে হয় তাদের নিয়ে। যদি মেলা প্রাঙ্গণ পুরোপুরি সমতল করা যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব এবং সানন্দে আমরা এই সেবা দিয়ে যেতে পারব।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক: আলোচনায় যে সব বিষয়
ভারতে পালানোর সময় সীমান্তে আওয়ামী লীগ নেতা আটক
১,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে ফিরল হারানো বিড়াল!
গাজীপুরে নারী নিহত : বাসে আগুন
চোটে মৌসুম শেষ রদ্রির
পরিবেশবান্ধব শহরে পরিণত হচ্ছে শাংহাই
জাপানে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৬
ভারতীয় পেসাররা এখন আকরাম-ইউনিসের সমতুল্য
লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ৪৯২
নতুন স্পাইমাস্টার নিয়োগ দিলো পাকিস্তান
মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সিয়াম গ্রেপ্তার
বার্সা চাইলে ফিরতে প্রস্তুত ব্রাভো
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া
চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন
ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?
ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন
গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২
আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান
জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার