ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১
ভাগ্নিজামাই গ্রেফতার

চট্টগ্রামে পাওনা টাকার বিরোধে নারী খুন

Daily Inqilab চট্টগ্রাম ব্যুরো

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম

নগরীতে নিজ বাসা থেকে শ্বাসরোধে খুন হওয়া পঞ্চাশোর্ধ নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডের রহস্যও উদ্ঘাটন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, পাওনা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করায় ভাগ্নি জামাইয়ের হাতে ওই মহিলা খুন হয়েছেন। রোববার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে হত্যায় জড়িত একমাত্র ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে নগরীর পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। গ্রেফতার লিটন কান্তি দে (৪০) চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের নতুনহাট এলাকার কাজল কান্তি দে’র ছেলে।
তার আগে শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার নাজিরপাড়া এলাকা থেকে মঞ্জু দেবী (৫২) নামে এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের বাড়ি পটিয়া উপজেলায়। ছেলে উত্তম দেবকে (৩২) নিয়ে তিনি নাজিরপাড়ার বাসায় ভাড়া থাকতেন।

পুলিশের ভাষ্য, চার মাস আগে ভাড়া নেওয়া বাসাটিতে শুধু মা ও ছেলে থাকতেন। উত্তম লেদ মেশিনের ওয়ার্কশপের কর্মচারী। শুক্রবার রাতে ঘরে বানানো পিঠা-পায়েস খান তারা। খাওয়ার পর থেকেই উত্তমের একটু তন্দ্রাভাব লাগছিল। বিছানায় যাওয়ার পর গভীর ঘুমে তলিয়ে যান। সেই ঘুম ভাঙে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তার মা পাশেই মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তিনি পুলিশকে খবর দেন।

পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, পুলিশকে খবর দেওয়ার আগে উত্তম পাশ্ববর্তী ভবনের বাসিন্দা তার মাসি সঞ্জু সেনকে ঘরে ডেকে আনেন। পরে প্রতিবেশিদের মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেওয়ার পর লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেশি এক নারীর তথ্যে পুলিশ জানতে পারে, শনিবার সকালে লিটন কান্তি দে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তখন পুলিশ তার সন্ধানে নামে। ভোরে ফটিকছড়ি উপজেলায় বোনের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লিটনের বাসাও নাজিরপাড়া এলাকায়।

ওসি বলেন, গ্রেফতারের পর লিটন জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তিনি তার মাসিশাশুড়ি মঞ্জু দেবীকে ঘাড়ে আঘাত করায় অচেতন হয়ে যান। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। সারারাত ওই ঘরে থেকে শনিবার সকালে লিটন পালিয়ে রাঙ্গামাটি চলে যায়। বিকেলে সেখান থেকে ফিরে আসে রাউজান নিজ বাড়িতে। সেখান থেকে রাতে ফটিকছড়ি উপজেলায় বোনের বাড়িতে চলে যান। গ্রেফতার লিটন এবং স্বজনদের দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের কারণও উদ্ঘাটন হয়েছে বলে জানান ওসি সন্তোষ চাকমা গ্রেফতার লিটন পুলিশকে জানিয়েছে, মঞ্জু দেবী সুদের বিনিময়ে লোকজনকে টাকা ধার দেন। মাস ছ’য়েক আগে মঞ্জু তার নিজের ছেলে উত্তমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে দিতে লিটনকে অনুরোধ করেন। বিনিময়ে প্রতিমাসে লিটনকে এক হাজার টাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিষয়টি উত্তমের কাছে গোপন রাখার অনুরোধ করেন।

লিটন নিজের বাড়ির দলিলের কপি জমা রেখে উত্তমের কাছ থেকে টাকা ধার নেন, যা গত ১২ ফেব্রুয়ারি পরিশোধের কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে লিটন নিজের মায়ের ব্যাংক থেকে তুলে আরও ৯০ হাজার টাকা মঞ্জুকে ধার দিয়েছিলেন। কিন্তু সঠিক সময়ে উত্তমের কাছ থেকে ধার করা ৫০ হাজার টাকা ফেরত না দেওয়ায় মঞ্জুর সঙ্গে লিটনের বিরোধের সৃষ্টি হয়।

লিটনের ভাষ্য অনুযায়ী, উত্তমের টাকা পরিশোধ নিয়ে ৩/৪ দিন আগে মঞ্জু দেবীর সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। ওইসময় মঞ্জু আরও একমাস সময় নিতে বলেছিলেন। শুক্রবার মঞ্জু তার বোনের (লিটনের শাশুড়ি) মাধ্যমে সন্ধ্যায় তাকে বাসায় যেতে বলেন। শাশুড়ির কাছ থেকে খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মঞ্জুর বাসায় যান। সেখানে মঞ্জু তাকে এবং উত্তমকে পিঠা-পায়েস খেতে দেন।

কিছুক্ষণ পর সেখানে থাকা মঞ্জুর ছেলে উত্তম ঘুমিয়ে পড়লে তিনি মঞ্জু দেবীর কাছ থেকে টাকা ফেরৎ চান। এ সময় কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মঞ্জু টাকা দিয়েছে, এমন কী প্রমাণ আছে জানতে চান। এ সময় লিটন ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে থাকা দা-র উল্টো পাশ দিয়ে মঞ্জুর ঘাড়ে আঘাত করেন। পরে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর উত্তমের রুম থেকে তার দেওয়া দলিলের ফটোকপি নিয়ে তা ছিঁড়ে টয়লেটের কমোডে ফেলে দেন। গ্রেফতার লিটনকে নিয়ে রোববার সকালে পুলিশ নাজিরপাড়া এলাকায় হত্যাকাণ্ডস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তৌ‌হিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক: আলোচনায় যে সব বিষয়

তৌ‌হিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক: আলোচনায় যে সব বিষয়

ভারতে পালানোর সময় সীমান্তে আওয়ামী লীগ নেতা আটক

ভারতে পালানোর সময় সীমান্তে আওয়ামী লীগ নেতা আটক

১,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে ফিরল হারানো বিড়াল!

১,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে ফিরল হারানো বিড়াল!

গাজীপুরে নারী নিহত : বাসে আগুন

গাজীপুরে নারী নিহত : বাসে আগুন

চোটে মৌসুম শেষ রদ্রির

চোটে মৌসুম শেষ রদ্রির

পরিবেশবান্ধব শহরে পরিণত হচ্ছে শাংহাই

পরিবেশবান্ধব শহরে পরিণত হচ্ছে শাংহাই

জাপানে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৬

জাপানে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৬

ভারতীয় পেসাররা এখন আকরাম-ইউনিসের সমতুল্য

ভারতীয় পেসাররা এখন আকরাম-ইউনিসের সমতুল্য

লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ৪৯২

লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ৪৯২

নতুন স্পাইমাস্টার নিয়োগ দিলো পাকিস্তান

নতুন স্পাইমাস্টার নিয়োগ দিলো পাকিস্তান

মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সিয়াম গ্রেপ্তার

মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সিয়াম গ্রেপ্তার

বার্সা চাইলে ফিরতে প্রস্তুত ব্রাভো

বার্সা চাইলে ফিরতে প্রস্তুত ব্রাভো

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার